এক জীবনে শুধু মঞ্চনাটকই করতে চেয়েছিলেন অভিনয়শিল্পী রওনক হাসান। সেখান থেকে অভিনয়ই তাঁর জীবন বদলে দিয়েছে। অভিনয় করেই বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে চান। আজ এই অভিনেতার জন্মদিন। বর্তমান ক্যারিয়ার, পরিকল্পনাসহ নানা প্রসঙ্গে কথা বললেন।
শুভ জন্মদিন! কেমন আছেন?
ধন্যবাদ। ভালো আছি। জন্মদিনে বেশি ভালো লাগছে আমাদের অভিনেতা এজাজ ভাইয়ের কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়ে।
আপনি কি অসুস্থ?
বেশ কিছুদিন ধরে মাথাব্যথাসহ আরও কিছু সমস্যা ছিল। এসব নিয়ে ভাইয়ের পরামর্শ নিলাম। প্রতি মাসের এক তারিখে আমাদের অভিনয়শিল্পী সংঘের অফিসে সবার চিকিৎসা ও পরামর্শ দেওয়া হয়। অনেকেই আসেন। আজ ডা. এজাজ ভাই আমাকে সুন্দর পরামর্শ দিলেন। কোন ডাক্তারের কাছে এর ভালো চিকিৎসা পাওয়া যাবে, সেগুলো বললেন। এখানে যে শুধু অসচ্ছল অভিনয়শিল্পীরা চিকিৎসা নেবেন, বিষয়টা তেমন নয়। এখানে যেকোনো শিল্পী চিকিৎসা নিতে পারেন।
জন্মদিনে কোন বিষয়টা সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে?
এখনো আমার জন্মদিনে উদাস একটা ভাব থাকে। পরিবার–বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটে, পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে। তিন বোনের পর আমার জন্ম। সে জন্য জন্মদিনগুলো উৎসবের মতো ছিল। মা জন্মদিনে পোলাও, গরুর মাংস রান্না করতেন। সেসব দিন এখনো অনেক মিস করি।
আগে জন্মদিন কেমন ছিল?
বড় হয়ে আমি একা একা ঘুরতাম। বাবার একটি মোটরসাইকেল ছিল, সেটা নিয়ে একাই ঘুরতাম।
তখন আপনার প্রেমিকা ছিল না?
না। তখন একাই ঘুরতাম। অনেক পরে এসে প্রেম করেছি।
মঞ্চনাটকে কেন যোগ দিয়েছিলেন?
আমি একসময় একাকী জীবন যাপন করতাম। চুপচাপ থাকতাম। ব্যাকবেঞ্চার ছিলাম। তেমন কারও সঙ্গে কথা বলতাম না। আসলে আমি যে বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই, আড্ডায় তেমন মানুষ বা আমার মতো কথা বলার বিষয় খুঁজে পেতাম না। যে কারণে দিন দিন আরও বেশি একা হতে থাকলাম। পরে মঞ্চনাটকে গিয়ে আমার সব জড়তা ভাঙল। আমি নিজের মধ্যে যেভাবে গুটিয়ে ছিলাম, সেখান থেকে বের হয়েছিলাম। থিয়েটার আমাকে সামাজিক করেছে।
‘লেট লথিফ’, ‘গনন আজ দেশে ফিরছে’সহ আপনার একাধিক নাটক ব্যাপক জনপ্রিয়। সেই জায়গা থেকে কি কখনো মনে হয়েছে, বর্তমান ক্যারিয়ারে আরও ভালো জায়গায় যাওয়া উচিত ছিল?
আমি আসলে চুপচাপ কাজ করে গেছি। কমিউনিকেশন স্কিল খুব একটা ভালো ছিল না। তবে আমার ক্যারিয়ার নিয়ে আরও ভালো জায়গায় যাওয়ার দরকার ছিল। এসব নিয়ে আমি হতাশ নই। নিজের মতো করেই ধৈর্য ধরে কাজ করে যেতে চাই। আমার কোনো আক্ষেপ নেই। নিজের ভেতর আগুন থাকলে জেগে উঠবে। এটুকুই বলব, আমি অভিনেতা হিসেবে লোভী। নানা চরিত্রের নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার লোভ আছে। অপেক্ষায় আছি।
কখনো কি মনে হয়েছে, কোনো কারণে আপনি বঞ্চিত হয়েছেন?
অনেক বড় বড় কাজে আমার নাম উচ্চারিত হয়েছে। কিন্তু পরে জেনেছি, সেগুলো থেকে আমাকে কেউ না কেউ বাদ দিয়েছেন। এখন কাউকে তো বলা যায় না, আমাকে বাদ দিলেন কেন? এসব সুযোগ আমার দরকার ছিল। আমি মেরিল–প্রথম আলো সমালোচনা পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার পেয়েছি। এগুলো তো আমার অভিনয় দিয়েই। অভিনয় নিয়ে তো প্রশ্ন নেই। সেখানে আমার আরও ভালো কাজের সুযোগ পাওয়ার দরকার ছিল। আর পরনির্ভরশীল এই পেশায় অনেক কিছুই অভিনেতার হাতে থাকে না।
জীবন নিয়ে আপনি কতটা খুশি?
এক জীবনে এত কিছু করব, এটা কখনো ভাবিনি। আমি শুধু থিয়েটারটাই করে যেতে চেয়েছিলাম। অভিনয় করে পরিবার চালাব, মা–বাবার চিকিৎসার অর্থ জোগাব, কারও মুখের হাসি আসবে, মানুষ আমাকে চিনবে, অ্যাক্টর ইকুয়িটির সাধারণ সম্পাদক হব—এত কিছু কখনোই ভাবিনি। সাধারণ একজন মানুষ যখন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসে, তখন ভালো লাগে। জীবন নিয়ে হাহুতাশ নেই, কোনো আক্ষেপ নেই, আমি খুশি।
বর্তমান ব্যস্ততা কী নিয়ে?
আজ থেকে ‘শহরবাস’ নামের একটি ধারাবাহিক নাটকের শুটিং শুরু হচ্ছে। ‘ঝড়ের পাখি’ নামে আরেকটি নাটকের শুটিং করছি। এখন সব নাটকে কাজ করছি না। ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমা এই মাসে মুক্তি পাবে। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে অমিতাভ রেজার ওয়েব সিরিজ ‘বোধ’, পঙ্কজ পালিতের ‘একটি না বলা গল্প’, দীপংকর দীপনের ‘অন্তর্জাল’, আকরাম খানের ‘নকশি কাঁথার জমিন’সহ বেশ কিছু সিনেমায়।