জিয়াউল ফারুক অপূর্ব। ছবি: খালেদ সরকার
জিয়াউল ফারুক অপূর্ব। ছবি: খালেদ সরকার

দুই পক্ষেরই ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল: অপূর্ব

সম্প্রতি অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্বর বিরুদ্ধে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আলফা আই স্টুডিওজ লিমিটেড চুক্তির ভঙ্গের অভিযোগ ওঠে। গত শনিবার মধ্যরাতে প্রোগাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টেলিপ্যাব) ও অভিনয়শিল্পী সংঘের মধ্যস্থতার এক সভার পর বিষয়টির সমাধান হয়। এ বিষয়টিসহ অন্যান্য নানা প্রসঙ্গে অভিনেতার সঙ্গে কথা বলেছে বিনোদন

নাটকের কাজে চুক্তির ভঙ্গের অভিযোগে অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্বর বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠায় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আলফা আই লিমিটেড। তবে শনিবার মধ্যরাতে টেলিপ্যাব ও অভিনয়শিল্পী সংঘের মধ্যস্থতায় এর সমাধান হয়। নাট্যাঙ্গনে স্বস্তি ফেরে। গতকাল দুপুরে এসব নানা প্রসঙ্গে অপূর্বর সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। আলাপের শুরুতেই ওঠে প্রসঙ্গটি। টেলিপ্যাব ও অভিনয়শিল্পী সংঘকে ধন্যবাদ জানিয়ে অপূর্ব বলেন, ‘সমিতির নেতারা চমৎকার মানুষ। তারা উভয় পক্ষের সবকিছু শুনে সঠিক বিচারটা করে দিয়েছেন। চুক্তি, অগ্রিম টাকা নেওয়া, শুটিং—সবকিছুরই সুন্দর একটা সমাধান হয়েছে। এখন আর আলফা আইয়ের সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই। দিন শেষে বিনোদন অঙ্গনের সবাই আমরা এক পরিবার। এই সমাধানে তারই প্রতিফলন হয়েছে এখানে।’

জিয়াউল ফারুক অপূর্ব। ছবি: খালেদ সরকার

এই অভিনেতার কথা, দীর্ঘদিন ধরেই এই ইন্ডাস্ট্রিতে আমার পথচলা। একটা ভালো ইমেজ নিয়েই এখানে আমি কাজ করে যাচ্ছি অবিরাম। আমার  সম্পর্কে সেই ধারণা সবার মধ্যেও আছে। আমি অন্যায় করব, এমন তো না। এটি আমাদের দুই পক্ষেরই পুরোপুরি ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছিল, তা ছাড়া কিছুই না।’

কিন্তু বিষয়টি এত দূর গড়ানোর আগেই সমাধান করা যেত কি না—এ ব্যাপারে অপূর্বর বক্তব্য, ‘অবশ্যই আগেই এটি নিজেরা বসে সমাধান করা যেত। এত দূর গড়ানোটা এড়ানো যেত। আমরা নিজেরা বসে সুন্দর করে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারতাম। শুধু এটিই নয়, যেকোনো কাজই বসে সুন্দর করে কথা বলে সমাধান করা সম্ভব।’

আলফা আইয়ের কর্ণধার শাহরিয়ার শাকিলের সঙ্গে বন্ধুর মতো সম্পর্ক অপূর্বর। সেই জায়গায় আদালত থেকে লিগ্যাল নোটিশ, সমিতির কাছে বিচার—বিষয়গুলো অপূর্বর কাছে আফসোসের। তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের ভাগ্যে ছিল, কপালে ছিল, তা না হলে এত দিনের সম্পর্কে কেন এমন ঘটনা ঘটবে? ছোট্ট একটা জিনিস ছিল, অথচ এত বড় ঘটনা ঘটে গেল। এটি আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য, বিব্রতকর বিষয়। যাহোক, একটা সুন্দর সমাধান হয়েছে। আশা রাখি, আমাদের মধ্যে আগের সম্পর্কই বজায় থাকবে।’

কথা বলতে গিয়ে খানিকটা আবেগময় হয়ে পড়েন অপূর্ব। বলেন, ‘আমি এই ইন্ডাস্ট্রির অনেক আদরের ছেলে। আমি ইন্ডাস্ট্রির কাছে কৃতজ্ঞ। আমি যখনই কোনো সমস্যায় বা বিপদে পড়ি, আমার সহকর্মীরা পাশে দাঁড়ান। আমি কোনো দিন তাঁদের ঋণ শোধ করতে পারব না। আমি যত দিন বেঁচে থাকব, তত দিন আমার সহকর্মীদের মনে রাখব। সবাই যেভাবে আমার পাশে ছিলেন, চোখে পানি এসেছে, আমি কান্না করেছি।’

নাটক কম
প্রতিবছরই ঈদের সময় তারকাদের মধ্যে একটা অলিখিত প্রতিযোগিতা থাকে—কার কত নাটকে ঈদে প্রচারিত হবে। কোনো কোনো ঈদে অপূর্বর প্রচারিত নাটকের সংখ্যা ৩০-ও ছাড়িয়েছে। কিন্তু আগামীর ঈদুল ফিতরে অপূর্বর কাজের সংখ্যায় ভিন্ন চিত্র দেখা যাবে। এই ঈদে ৮ থেকে ১০টি নাটকে দেখা যেতে পারে তাঁকে। এ ব্যাপারে অপূর্ব বলেন, ‘বহু বছর পর ঈদের অনুষ্ঠানমালায় এত কম নাটক প্রচারিত হবে আমার। এর আগে কিছু নাটক তৈরি আছে। আর এ সময়ে মাত্র একটি নাটকে অভিনয় করেছি। সব মিলে ৮-১০টা হতে পারে।’ কেন এত কম নাটক?—জানতে চাইলে ছোট পর্দার এই অভিনেতা বলেন, ‘অন্য একটা বড় কাজের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত। যদিও সেটিও দর্শকের জন্যই করব। বড় চমকও হতে পারে। এ কারণেই ঈদের নাটকে সময় দিতে পারছি না। তবে ঈদুল আজহায় নাটকের সংখ্যা বাড়িয়ে দর্শকদের তৃপ্ত করতে পারব। ওই সময় টানা নাটকের কাজের চেষ্টা থাকবে।’

অপূর্ব। ফেসবুক থেকে

ওটিটি নয়, নাটকেই অপূর্ব
সহশিল্পী আফরান নিশো, মেহজাবীন, ফারিণরা যখন নাটকের চেয়ে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বেশি সময় দিচ্ছেন, অপূর্ব তখন নাটকেই বেশি সময় দিচ্ছেন। অপূর্বর ভাষ্য, ‘আমি যে ওটিটিতে বেশি কাজ করব না, এমনটি নয়। আসলে আমরা সবাই মিলে ভালো কাজ দেওয়ার চেষ্টায় আছি। ওটিটিতে কাজের জন্য সময় লাগে, সে সময়টাও পাওয়া দরকার। যেটা হয়, ওটিটির কাজে ভিন্ন ভিন্ন গল্প থাকে, ভিন্ন ভিন্ন লুক থাকে। একই লুকে তো আরেকটি কাজ করা সম্ভব নয়। এ জন্য সময়ের বিরতি দিতে হয়। আমি কিন্তু ইতিমধ্যে ওটিটিতে কাজ শুরু করেছি। যখন একের পর এক কাজ আসতে থাকবে, তখন বিষয়টি পরিষ্কার বোঝা যাবে।’ তবে এই অভিনেতার কথা, ‘নাটকেই আমার জন্ম, নাটককে কখনোই অবহেলা করতে পারব না, কখনোই নাটক ছেড়ে যাব না। ওটিটিতেও কাজ চলবে, নাটকেও।’

আবার সিনেমায়
২০১৫ সালে ‘গ্যাংস্টার রিটার্নস’ ছবিতে অভিষেক হয় অপূর্বর। এরপর দীর্ঘ সময় আর কোনো সিনেমায় দেখা যায়নি তাঁকে। শোনা যাচ্ছে, সম্প্রতি নতুন একটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তিনি। এক সপ্তাহ ধরে সেই কাজেরই প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। এ কারণে ঈদের নাটকও কমিয়েছেন। চলতি মাসের শেষে শুটিং শুরুর কথা। তবে বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেননি অপূর্ব। তিনি বলেন, ‘শিগগিরই সিনেমার কাজ শুরু হতে পারে। সেই প্রস্তুতি চলছে। এ জন্য অন্যদিকে কাজ কমিয়েছি। সিনেমা একটি বড় জায়গা, টিমওয়ার্কের কাজ। সবকিছুর মেলবন্ধনে কাজ শুরু করতে হয়।

জিয়াউল ফারুক অপূর্ব

এর বেশি আর কিছু বলব না। বড় পর্দায় এমন জায়গায় নিজেকে দেখতে চাই, যা আমাকে কিছুই বলতে হবে না, প্রেক্ষাগৃহে বসে দর্শকই বলবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘যে কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছি, কাজটির জন্য প্রতিদিনই মহড়া করছি। আমার জন্য খুবই আনন্দের একটি কাজ হবে এটি। আমি নিশ্চিত, এমন একটি কাজের খবরে আমার ভক্ত-দর্শকেরাও আনন্দ পাবেন, খুশি হবেন।’

মিশন কলকাতা
কিছুদিন আগেই কলকাতায় ‘চালচিত্র’ নামে কলকাতার ছবিতে কাজ শেষ করে এসেছেন এই অভিনেতা। চলতি বছরই মুক্তির কথা আছে। কলকাতার ছবিতে কাজের দারুণ অভিজ্ঞতার কথা জানালেন বাংলাদেশের ছোট পর্দার এই অভিনেতা। অপূর্ব বলেন, ‘কলকাতার ছবির কাজে আরাম লাগে—আমাদের এখানকার যাঁরা ওখানে কাজ করেছেন, করছেন তাঁদের মুখ থেকে প্রায় এই কথাটা শুনি। এবার আমি কাজ করতে গিয়ে দেখলাম, সত্যিই সেখানকার কাজ করে আরাম লাগে। ওখানকার শিল্পীরা পেশাদারভাবে, সম্মান ও আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করেন। রাইমা সেন, টোটা রায় চৌধুরী, অনির্বাণ চক্রবর্তী, শান্তনু মহেশ্বরীদের মতো তারকাদের সঙ্গে কাজের সুযোগ হয়েছে। দুর্দান্ত এক অভিজ্ঞতা হয়েছে ছবিটিতে কাজ করে।’

এদিকে অপূর্বর জনপ্রিয়তা কলকাতাতেও ছড়িয়েছে। সেখানেও তাঁর ভুক্ত-অনুরাগী তৈরি হয়েছে। এবারের কাজ করতে গিয়ে সেটিই টের পেয়েছেন অপূর্ব। তিনি বলেন, ‘কাজের সময় ভক্তদের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ হয়েছি। তাঁদের কথায় বুঝতে পেরেছি, আমার কাজ নিয়মিতই দেখেন তাঁরা। অনেক সংবাদকর্মী আমাকে ফুল দিয়ে বরণ করেছেন। এমন ভালোবাসায় কলকাতার কাজে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়েছি আমি।’