কোনো বাধাবিপত্তি তিনি আমলে নেননি। বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় কিছুদিন কাটান রেলস্টেশনে, বাসস্টেশনে। ঠিকানাবিহীন জীবনে একসময় ঠিক ঠিক নিজের জায়গা করেন নেন নির্মাতা ও অভিনেতা হয়ে, লেখালেখি করে। ‘ঊন–মানুষ’ টেলিছবি বানিয়ে পান ব্যাপক পরিচিতি। তবে আরও অনেক কিছু করার আগেই চলেও যান। হুমায়ূন সাধু চলে গেছেন পাঁচ বছর হলো। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মৃতিকাতর নির্মাতা আশফাক নিপুন ফেসবুকে স্মরণ করেছেন সাধুকে।
আজ শুক্রবার বিকেলে হুমায়ূন সাধুর সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করে এ সময়ের আলোচিত নির্মাতা আশফাক নিপুন স্মরণ করেছেন সাধুকে। নিপুন লিখেছেন, ‘আমার বন্ধু, ফিল্মমেকার, আঁরার চাঁটগাইয়া হুমায়ূন সাধু চলে যাওয়ার আজ পাঁচ বছর। আমি নিশ্চিতভাবে জানি, জুলাই আন্দোলনে যখন আমি রাজপথে, তখন আমার সাথে কেউ না থাকলেও সাধু সারাক্ষণ থাকতই। সাধু মানুষটাই যে ছিল গণমানুষের!’
প্রয়াত অভিনেতাকে নিয়ে নিপুন আরও লিখেছেন, ‘সাধুর শেষ দিনগুলাতে আমি যে সাধুর পাশে থাকতে পারছিলাম, সাধু যে আমাকে চিনতে পারত, সেই সময়টা আমার জীবনের খুবই মূল্যবান কিছু মুহূর্ত, এখনো আমার চোখে ভাসে। চট্টগ্রামে শর্টফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ছবি দেখা থেকে পরিচয়, সেই পরিচয় যে ছবিয়ালে কাজ করা থেকে হাসপাতালে শেষ দিনগুলাতে একসাথে কাটবে, কে জানত! ভালো থাইকো সাধু৷ আর কে করে, না করে জানি না, কিন্তু তোমাকে আমি এখনো খুব মিস করি। তোমাকে ভোলা তো সম্ভব না।’
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ঊন–মানুষ’ টেলিছবিতে অভিনয় করেছেন হুমায়ূন সাধু। একজন বামন মানুষকে হেয় করা, তাঁকে নিয়ে সবার তিরস্কার, সমাজে টিকে থাকার কঠিন বাস্তবতা, তাঁর আশা, আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি নিয়েই গল্প লিখেছেন হুমায়ূন সাধু। সেখান থেকে চিত্রনাট্য লিখেছেন ও পরিচালনা করেছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ওই সময় টেলিছবিটি দারুণ প্রশংসিত হয়। আলোচিত হয় হুমায়ূন সাধুর অভিনয়।
নয় ভাইবোনের মধ্যে হুমায়ুন সাধু সপ্তম। চট্টগ্রামে তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা। ২০০১ সালে নিজের তাগিদেই বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন সাধু। একপর্যায়ে কাজ শুরু করেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সহকারী পরিচালক হিসেবে। একই সঙ্গে লেখালেখি করতে থাকেন।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন হুমায়ূন সাধু। এরপর তিনি অসংখ্য নাটক, টেলিছবি, চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপনচিত্রে অভিনয় করেছেন। কাহিনি ও চিত্রনাট্য লেখার পাশাপাশি পরিচালনাও করেছেন। ‘ননাই’ নামে হুমায়ূন সাধুর লেখা একটি বইও প্রকাশিত হয়েছে।