নাটক প্রচারিত হলেই আলোচনায় থাকা নতুন কিছু নয় অভিনেতা মুশফিক আর ফারহানের জন্য। গত ঈদে তাঁর অভিনীত যে পাখি ঘর বোঝে না, মাস্তান, তুই জীবন, মায়াসহ বেশ কিছু নাটক দিয়ে ইউটিউব ট্রেডিংয়ের শীর্ষে ছিল। ঈদ–পরবর্তী শুটিংসহ নানা বিষয়ে ১৪ জুলাই প্রথম আলোর মুখোমুখি হন অভিনেতা। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন মনজুরুল আলম
কথার শুরুতেই এই অভিনেতার কাছে প্রশ্ন, মুশফিক মানেই কি ইউটিউবে ট্রেন্ডিংয়ে শীর্ষস্থান? শুনে হাসতে থাকেন মুশফিক। বলেন, ট্রেন্ডিং নিয়ে তিনি ভাবেন না। দর্শক তাঁর নাটক পছন্দ করেন, এটা বড় প্রাপ্তি। মুশফিকের ভাষ্যে, ‘ভক্তরা আমার কাজগুলো পছন্দ করেন বলেই হয়তো সেগুলো শীর্ষে থাকে। কিন্তু এ জন্য আমাকে চেষ্টা করতে হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে বিষণ্নতাও গ্রাস করেছিল। বাধা পেরোতে হয়েছে। প্রতিনিয়ত নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে। এমন নয় যে হুট করেই আজকের জায়গায় এসেছি। নিজেকে একটু একটু করে তৈরি করে এসেছি।’
গ্রামে কী যেন নেই
শৈশবে কয়েকটা বছর কেটেছে গ্রামে। বাবার চাকরিসূত্রে চট্টগ্রাম, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় থেকেছেন। সেই সময়েও পরিবারের সঙ্গে গ্রামে এসে ঈদ করতেন। সেই দিনগুলো এখনো যেন অতীতে নিয়ে যায়। সময় পেলে এখনো গ্রামের বাড়ি বরিশালে ঢুঁ মারেন এই অভিনেতা। গত ঈদের পরে মায়ের সঙ্গে হাজির হয়েছিলেন গ্রামে। সেখান থেকেই এই অভিনেতা জানালেন, গ্রাম তাঁর ভীষণ প্রিয়। সব সময়ই চেষ্টা করেন গ্রামে সময় কাটাতে। তিনি বলেন, ‘একসময় গ্রামে ছুটে চলার যে আনন্দ পেতাম, সেটা এখন আর আগের মতো পাই না। একসময় চাচা, ফুফু—সবার কাছ থেকে সালামি নিতাম। সবার বাসায় যেতাম। এখনো গ্রামে এলে ভালো লাগে। কিন্তু মনে হয় কোথাও যেন গ্রামে কী নেই। একটা শূন্যতা অনুভব করি।’
বদলে যাওয়া দিন
আগে গ্রামে এলেই সবার সঙ্গে দেখা করার জন্য ছুটে বেড়াতেন। বাজার, রাস্তাঘাট এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে পাওয়া যেত ফারহানকে। কিন্তু অভিনয়ে দিয়ে জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর বদলে গেছে অনেক কিছুই। বাড়িতে গিয়ে আর বের হওয়া হয় না, ঘুমিয়েই দিনগুলো কাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, ‘গ্রামে এসেছি শুনলে ভক্তরা ঘিরে ধরেন। এটা এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। অনেক সময় নিজের মতো করেই থাকা কঠিন হয়ে যায়। যে কারণে এখন চুপিসারে গ্রামে আসি। দেখা যায়, ভক্তরা জানার আগেই ঢাকা ফিরে আসি। অবসর সময়টা নিজের মতো করেই কাটাতে ভালো লাগে।’
কষ্ট সার্থক
ঈদের নাটকের জনপ্রিয়তার প্রসঙ্গ আসতেই সফলতার পেছনের কষ্টের কথা মনে করিয়ে দিলেন এই অভিনেতা। যখন নাটকগুলোর শুটিং করেন, সেই সময়ে প্রচণ্ড গরম ছিল। এর মধ্যে গ্রামে টিনের ঘরের মধ্যে শুটিং করতে হয়েছে। বারবার মেকআপ নষ্ট হয়েছে। সারা দিনে এমনও হয়েছে যে দুটি দৃশ্যের শুটিং করতে হয়েছে। সেগুলো স্মরণ করে ফারহান বলেন, ‘দর্শকেরা এই যে ভালো ভালো কাজ দেখছেন, এর পেছনে অনেক কষ্ট আছে। একটা শট দেওয়ার জন্য সারা দিন বসে থেকেছি। গরম পানি খেতে হয়েছে। দুই দিনের কাজ চার–পাঁচ দিনে করেছি। এর মধ্যে তুই জীবন নাটকের শুটিংয়ে লাইটম্যানের হাত পুড়েছে, আরও দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই কষ্ট কোনো পারিশ্রমিক দিয়ে শোধ করা সম্ভব নয়। সেগুলো নিয়ে যখন দর্শকেরা কথা বলেন, তখন মনে হয় কষ্ট সার্থক।’
পারিশ্রমিক নিয়ে অভিযোগ
প্রায়ই শোনা যায়, অভিনেতা মুশফিক আর ফারহান নাটকের পারিশ্রমিক বাড়িয়েছেন। এমনও হয়েছে, বছরে দুবারও বাড়িয়েছেন। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপে অভিযোগগুলো নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেন অভিনেতা। তাঁর মতে, বর্তমানে তিনি নাটকে বেশি সময় দিচ্ছেন। আগের চেয়ে কাজের মানের দিকে মনোযোগ বেশি। চাইলে মাসে ৩০ দিনে কিন্তু ১২ থেকে ১৫টি নাটকে অভিনয় করতে পারেন। কিন্তু সে পথে হাঁটেননি। মাসে মাত্র তিন–চারটা কাজ করেন। যে কারণে তাঁর নাটকগুলোর বাজেট বেশি থাকে। মুশফিকের ভাষ্য, ‘এমন হয়, একটা নাটকের শুটিংয়ে ১০ দিন লাগে, বেশিও লাগে। বেশ কিছুদিন আগে আউটডোর থেকে একটা নাটকের শুটিং থেকে বাসায় আসার পরে আম্মা আমাকে চিনতেই পারেনি—চেহারার এতটাই করুণ দশা হয়েছিল। পারিশ্রমিক কমিয়ে সংখ্যায় বেশি কাজ করার চেয়ে আমি সংখ্যায় কম কাজ করে সেটা পুষিয়ে নিই। এটা নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ শুনিনি। এখন আমাকে পরিবার চালাতে হয়।’
স্পিকটি নট
কয়েক মাস ধরেই শোনা যাচ্ছে অভিনেতা ফারহানের সঙ্গে অভিনেত্রী তানজিন তিশার সম্পর্ক নিয়ে নানা গুজব। এসব নিয়ে আপাতত কথা বলতে চান না ফারহান। তবে একসঙ্গে এখন তাঁরা ক্যামেরার সামনেও দাঁড়াচ্ছেন না। ফারহান বলেন, ‘আপাতত আমরা একসঙ্গে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াচ্ছি কি না বা সামনে দেখা যাবে কি না জানি না।’