এক যুগ আগে রুনা খানের ওজন ছিল ৫৬ কেজি। ২০০৯ সালে তাঁর বিয়ে হয়। পরের বছরই সন্তান রাজেশ্বরীর জন্ম। একসময় রুনার ওজন ৯৫ কেজিতে গিয়ে ঠেকে। সন্তান জন্মের এক বছর পর, মানে ২০১১ সাল থেকে ওজন কমানোর মিশন শুরু করেন রুনা। কিন্তু কোনোভাবেই পারছিলেন না, বরং একপর্যায়ে ওজন আরও বেড়ে হয় ১০৫ কেজি। ওজন কমাতে ধানমন্ডির একাধিক জিম, প্রশিক্ষকের শরণাপন্ন হন তিনি। শুরু করেন সাঁতার। ভর্তি হন ইয়োগা ও অ্যারোবিকস ক্লাসেও। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া শুরু করেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। একপর্যায়ে সবকিছু ছেড়ে দেন। হতাশা, মানসিক অবসাদসহ নানা সমস্যা পেয়ে বসে। তবে তিনি এখন ৬৬ কেজি।
এক বছর আগেও যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা এখনকার রুনা খানকে দেখে চমকে যান। এক বছরে ৩৯ কেজি ওজন কমিয়ে পুরোপুরি বদলে নিয়েছেন নিজেকে। তবে সবাই এক বছরের বদলে যাওয়া রুনা খানকে দেখলেও এটি আসলে তাঁর ১০ বছরের একটা কষ্টকর ভ্রমণ ছিল, বলে জানালেন। এক বছরে ৩৯ কেজি ওজন কমাতে যা যা খেতেন, তার একটা তালিকা দিলেন রুনা খান।
প্রতিদিনের সেই তালিকায় ছিল সকালে দুটি ডিম। এরপর যেকোনো ফল খেতেন। তারপর ব্ল্যাক কফি খেয়ে এক ঘণ্টা হাঁটাহাঁটি। দুপুরে এক কাপ ভাত, সঙ্গে এক বাটি ভরা সবজি, বড় এক পিস মাংস অথবা মাছ। বিকেলে মুঠো পরিমাণ বাদাম, ব্ল্যাক কফি ও এক ঘন্টা ইয়োগা। রাতে বড় এক বাটি সবজি, এক পিস মাছ অথবা মুরগি, এক গ্লাস দুধ।
প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে রুনা খান বললেন, ‘ছোটবেলায় বইয়ে পড়েছি না, বানরের তৈলাক্ত বাঁশে ওঠার গল্প, আমার ওজন কমানোর গল্পটা সে রকমই। তিন পা আগাইতাম, চার পা পিছাইতাম। ওই ১০ বছরে আমি অস্ত্রোপচার ছাড়া সব চেষ্টাই করেছি। ধানমন্ডির প্রতিটি জিমে অন্তত ১০ বারও ভর্তি হয়েছি। ভারতীয় কালচারাল সেন্টারে ভর্তি হয়েছি পাঁচ থেকে সাতবার। উইমেন্স কমপ্লেক্স সুইমিংয়ে কয়েকবার ভর্তি হয়েছি। অ্যারোবিকসে ভর্তি হয়েছি। বাসায় ট্রেডমিল, সাইকেলসহ ওজন কমানোর যন্ত্রপাতি কিনেছি। এই ১০ বছরে অনেক চেষ্টা করেছি। ডায়েটের খাবার দিয়ে আমার একটা ফ্রিজ পুরো থাকত—ডার্ক চকলেট, মাশরুম, ক্যাপসিকামসহ আরও কত কী! কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না।’
তাহলে কীভাবে কী হলো, এমন প্রশ্নে রুনা খান বললেন, ‘২০১৯–এ এসে আবিষ্কার করলাম, আমি যাঁদের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু মনে করি; দিনের পর দিন, বছরের পর বছর আমি তাঁদের দ্বারা মানসিকভাবে নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়েছি। ডিপ্রেশন পেয়ে বসত এ জন্য আমি আমার মূল কাজে ফোকাস রাখতে পারতাম না। তাঁরা এটা ভালোভাবে জানত যে কীভাবে আমার ফোকাস নষ্ট করা যায়। ততদিনে দেখলাম, আমার ওজন হয়ে গেছে ১০৫ কেজি। এমন হচ্ছিল, কোনো মাসে পাঁচ কেজি ওজন কমালাম, পরের মাসে ছয় কেজি ওজন বাড়িয়ে ফেললাম। গত বছরগুলোয় কখনো ওজন কমে ১০০ কেজি, আবার কখনো বেড়ে ১১০ কেজি হয়েছে। ফলাফল সেই, যা তাই। একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিলাম, আমাকে টক্সিক মানুষের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। যাঁদেরকে আমি তথাকথিত বন্ধু ভাবছি, তাঁদের কাছ থেকে বের হতে হবে।’
ওজন কমাতে কাউকে অনুপ্রেরণা হিসেবে মনে করেননি। নিজের জন্যই নিজে কাজটি করেছেন বলে জানালেন। বললেন, ‘আমার সঙ্গ তাড়াতে লেগেছে ১০ বছর, আর ওজন কমাতে লেগেছে মাত্র ১ বছর। দুই দশকের কয়েকজন বন্ধুদের কারণে জীবনের এত বড় ট্রমায় যেমন রুনা খান পড়েছেন, তেমনি এই এক বছরের জার্নিতে নতুন কিছু বন্ধুকে পাশে পেয়েছেন, যাঁরা তাঁর জীবনে আশীর্বাদও।’ রুনা খানের ভাষায়, ‘দে ব্রিং হ্যাপিনেস ইন মাই লাইফ’।