যুক্তরাষ্ট্রর আটলান্টা থেকে কানাডার ক্যালগিরিতে ছেলের তাশফিন হোসেনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন টেলিভিশন ও মঞ্চ নাটকের একসময়ের ব্যস্ত অভিনয়শিল্পী জামাল উদ্দিন হোসেন। এর মধ্যে গেল বুধবার জামাল উদ্দিন হোসেন হঠাৎ অসুস্থবোধ করলে ছেলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরীক্ষা–নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকেরা তাঁর ইউরিন ইনফেকশনের খবর জানান, এমনটাই জানিয়েছেন তাশফিন হোসেন।
কানাডার স্থানীয় সময় সোমবার সকালে জানা যায়, তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে পারছেন না। এরপর চিকিৎসকেরা তাঁকে ভেন্টিলেশন রাখার সিদ্ধান্ত নেন। কানাডার ক্যালগিরি থেকে এমনটাই জানিয়েছেন এই অভিনয়শিল্পীর ছেলে তাশফিন হোসেন।
সত্তরের দশকের মাঝামাঝি থেকে মঞ্চ নাটকে অভিনয় শুরু করেন জামালউদ্দিন হোসেন। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের এই সদস্য পরে টেলিভিশন নাটক এবং চলচ্চিত্রেও কাজ করেন। গেল ১৫ বছর ধরে অভিনয়ে একেবারে অনিয়মিত তিনি। এই সময়টায় যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া-আসার মধ্যে ছিলেন। মাঝেমধ্যে যখন দেশে ফিরতেন, টুকটাক অভিনয় করতেন। সাত–আট বছর ধরে একেবারে অভিনয়ে নেই। থাকেন না বাংলাদেশেও, যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে আছেন। জামালউদ্দিন হোসেনের ছেলে তাশফিন হোসেন কানাডার মাউন্ট রয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনান্স বিভাগের অধ্যাপক। মেয়ে তাঁর পরিবার নিয়ে থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে।
কানাডার ক্যালগিরি থেকে তাশফিন হোসেন আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় সকালে প্রথম আলোকে বললেন, ‘আব্বা আসলে খুবই অসুস্থ। এখন ভেন্টিলেশনে আছেন। কানাডার স্থানীয় সময় সোমবার সকাল থেকে তাঁকে এখানকার রকি ভিউ হাসপাতালের ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়েছে। প্রথমে বাসায় খুব অসুস্থবোধ করছিলেন। এরপর হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকেরা জানান, আব্বার ইউরিন ইনফেকশন। এর আগেও আব্বার এমনটা হয়েছিল। এবার আব্বার শরীরে এমন একটা ব্যাকটেরিয়া পেয়েছে, যেটা দ্রুত ফুসফুসে ছড়িয়ে নিউমোনিয়া হয়ে গেছে। আব্বার বয়স এবং স্বাস্থ্যগত অন্যান্য অবস্থার কারণে তিনি ফাইট করতে পারছেন না। অনেক কাবু হয়ে গেছেন। শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়ায় মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হওয়াতে স্বাভাবিকভাবে আব্বা নিশ্বাস নিতে পারছেন না, তাই ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়েছে।’
তাশফিন জানালেন, অভিনয়শিল্পী বাবা জামালউদ্দিন হোসেনের বয়স এখন ৮১। এর আগেও তাঁর দুবার স্ট্রোক হয়েছে। তিনি এ–ও বললেন, ‘আসলে কোভিডের সময় আব্বার প্রোস্টেট ক্যানসার হয়েছিল। ওইটার পর থেকে আব্বাকে দেখছি যে কিছুদিন পরপরই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।’
জামালউদ্দিন হোসেন ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন। ১৯৯৭ সালে তিনি তাঁর নিজের নাট্যগোষ্ঠী নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বল শুরু করেন এবং এর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বেতার টেলিভিশন শিল্পী সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জামালউদ্দিন হোসেন ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’, ‘রাজা রাণী’, ‘চাঁদ বণিকের পালা’, ‘আমি নই’, ‘বিবি সাহেব’, ‘যুগলবন্দী’সহ কয়েকটি আলোচিত মঞ্চ নাটক পরিচালনা করেছেন। জামালউদ্দিন হোসেনের অভিনয়শিল্পী স্ত্রী রওশন আরা হোসেনেরও শারীরিক অবস্থাও ভালো না।