শোকে স্তব্ধ ছোট পর্দার অভিনয়শিল্পী লারা লোটাস। ৯ দিন ধরে তেমন কারও সঙ্গে কথাও বলছেন না। ফোনও ধরছেন না। এর মধ্যেই তাঁকে পাওয়া গেল ফেসবুক লাইভে। ৩৮ মিনিটের এই লাইভের প্রায় পুরো সময়ই কাঁদলেন অভিনয়শিল্পী। বাবার শোকে প্রতিমুহূর্তেই কান্না যেন বেড়েই চলেছিল। গত ২৬ জুলাই হঠাৎই তাঁর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যান। ভেবেছিলেন প্রতিবারের মতো এবারও বাবা হাসতে হাসতে বাসায় ফিরবেন, তা আর হলো না।
শোকে স্তব্ধ লারা লোটাস লাইভে বলেন, ‘আব্বু ছাড়া আমার পৃথিবীটাই অন্ধকার। অনেকেই বলছেন, আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু দিন দিন আমি আব্বুর অভাব আরও বেশি ফিল করছি। আব্বু যে সময়টা থেকে নেই, সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত একরকম হাহাকার লাগছে। যাঁরা আমাকে পৃথিবীতে এনেছেন, তাঁরাই কাছে থাকবেন না, এটা কি কখনো হয়? প্রিয়জন হারালে না পথে থাকা যায়, বাবা হারালে না ঘরে থাকা যায়’, কথাগুলো বলেই বাবা–শূন্যতায় ভেঙে পড়েছেন অভিনয়শিল্পী।
বাবার সঙ্গে তাঁর অনেক মিল। সব সময় বাবার কাছ থেকে শিখতেন। নাটকের অভিনয়ের সময় কিংবা উপস্থপনার সময় সবার আগে প্রতিবার তিনি বাবার সঙ্গে কথা বলতেন। পরামর্শ নিতেন। কার সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হবে, সেগুলো বাবা শিখিয়ে দিতেন। এই অভিনয়শিল্পী বলেন, ‘আমাদের সিনিয়র শিল্পীদের সম্পর্কে আমি আর কতটুকু জানি। যখন অনেক জানার প্রয়োজন হতো, তখন সবার আগে বাবাকেই ফোন করতাম। বাবা বলে দিতেন সেসব শিল্পী সম্পর্কে, কখনো রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে থাকতেন। তখন বাবা তাঁদের সম্পর্কে জানাতেন। কার সঙ্গে কীভাবে ব্যবহার করব, সম্মান জানাব, সেটাও বাবার কাছ থেকে শেখা। বাবা ছিলেন বন্ধুর মতো। বাবা ছাড়া জীবনটাই ভাবতে পারছি না।’
প্রয়াত বাবার স্মৃতিচারণায় প্রতিমুহূর্তেই কাঁদতে থাকেন। কণ্ঠে নিস্তব্ধতা, চোখে শূন্যতা। বলতে থাকেন, ‘বাবার হাসিমুখ বারবার চোখের সামনে ভাসছে। বাবা অনেক হাসতেন। বাবার হাসি ছাড়া কোনো ছবি নেই। এবার হাসপাতালে ভর্তির সময়ে বুঝতে পারছিলাম, বাবা আর বাড়ি ফিরবেন না। সকালে হাসপাতালে গেলাম। ১২টার দিকে বাবাকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। তখনই আমার বুকটা ভেঙে যায়।’ এই সময়ে বারবার বাবার কথাগুলো মনে পড়ছিল তাঁর। কিছুটা চুপ থেকে লারা লোটাস বলেন, ‘বাবা কয়েক মাস ধরেই আরও বেশি হাসিখুশি ছিলেন। হয়তো ভেতরটা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছিল। প্রায়ই বলতেন, “আমি তো খুব বেশি দিন থাকব না, আমি চলে যাব।” বাবা আমাকে বাবু ডাকতেন। তিনি এই কয় মাসে সবচেয়ে বেশি বলেছেন, “বাবু, তুমি সিরিয়াস হও। যে কাজটা করছ, সিরিয়াসলি কর। আব্বু তো তোমার পাশে আছে। আমি তোমার জন্য সব করব।”’
লারা লোটাসের অভিনয়ের শুরুটা মা–বাবার হাত ধরে। শৈশব থেকে তাঁদের উৎসাহেই এত দূর আসা। চলতি এই পথে পরিবারের বাইরে অন্য কারও কাছ থেকে তেমন কোনো সহায়তা পাননি। ক্যারিয়ারের পেছনে বাবার অবদানের কথা বলতে গিয়ে কান্না যেন আর থামে না। কথা বলতে বলতে কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে। কখনো চুপচাপ দুই হাত দিয়ে চোখ মুছতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘আমার জীবনে এমন খুবই কম হয়েছে, কেউ বলছেন, “লারাকে একটা কাজ দিই। ও একসময় অনেক কাজ করেছে, তার পাশে এখন দাঁড়াই।”এই সময়ে বাবা আমাকে সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট করেছেন। কখনো মন খারাপ হলে বুঝতে পেরেছেন। আমি বড় গলায় বলতাম, বাবা হচ্ছে বটবৃক্ষ, বাবা ছায়া। সেই ছায়া সরে গেল। বাবা ছাড়া আমাদের ভাইবোনের কাছে পৃথিবীটা অন্ধকার। বাবা, তোমার কি এতটাই চলে যাওয়ার দরকার ছিল। আমাদের সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল।’ কথাগুলো বলেই কাঁদতে থাকেন অভিনয়শিল্পী।
জীবনে চলতে হলে সবার আগে দরকার বিশ্বাস ও সততা। শৈশব থেকে মা–বাবার কাছ থেকে এমন অনেক নৈতিকতা শিখেছেন। জানালেন, বাসার সোফা, চেয়ার থেকে শুরু করে ব্যবহারের প্রতিটি জিনিস বাবার জন্য আলাদা। সেগুলো প্রতিমুহূর্তে প্রয়াত বাবাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাবার ডায়াবেসটিস ছিল। সঙ্গে হালকা কিছু জটিলতা। কিন্তু চিকিৎসক দিনের পর দিন ভুল চিকিৎসা দিয়েছিলেন। এখন আমরা কী করব। এটা আমাদের জন্য কষ্টের একটি অধ্যায়। এই বিপদে পড়ে কাছের মানুষদের চিনেছি। বিপদে বন্ধুর পরিচয়, এটা আরও ভালো করে শিখলাম। জীবনে চলতে হলে এই শেখাটাও দরকার আছে। আপনারা আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন। সবাই মা–বাবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন। মা– বাবাকে ভালোবাসুন। মা–বাবাকে কষ্ট দেবেন না। তাঁরাই আপনার জীবনের সেরা গিফট।’ কান্নার জন্য তিনি লাইভে বারবার ভক্তদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।