পরীক্ষায় ভালো করা মানেই জীবনটা সরলভাবে চলবে না। আবার খারাপ ফলাফল মানেই জীবন থেমে থাকবে না। জীবনটা সব সময় এগিয়ে যায় সবার পরিশ্রমে। এ জন্য ধৈর্য ধারণ করে আগামীর পথ চলতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে মনে করেন সময়ের সফল অভিনয়শিল্পী মেহজাবীন চৌধুরী, তৌসিফ মাহবুব, তাসনিয়া ফারিণরা। তাঁরা এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন।
‘মনে রাখবেন, এটি শেষ নয়’—মেহজাবীন চৌধুরী
সম্প্রতি বুসান চলচ্চিত্র উৎসব থেকে দেশে ফিরেছেন অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী। সেখানে তাঁর অভিনীত ‘সাবা’ সিনেমাটি ‘আ উইন্ডো অন এশিয়ান সিনেমা’ বিভাগে এশিয়ান প্রিমিয়ার হয়। তার আগে কানাডার টরন্টো চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নেন ও প্রশংসিত হন মেহজাবীনরা। অভিনয় অঙ্গনে সময়ের সফল অভিনয়শিল্পীদের একজন তিনি।
মেহজাবীন আজ মঙ্গলবার এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব এইচএসসি পরীক্ষার্থী, যাঁরা ফলাফল পেয়েছেন, তাঁদের অভিনন্দন জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অতিক্রম করার জন্য। আপনার ফলাফল যেমনই হোক না কেন, জেনে রাখুন, এটি আপনার যাত্রার কেবল এক অধ্যায়। সাফল্য একক কোনো ফলাফলের ওপর নির্ভর করে না, বরং আপনার প্রচেষ্টা, বুদ্ধি ও ধৈর্যের মাধ্যমে আসে।’
মেহজাবীন জানান, যাঁরা আজ ভালো ফলাফল উদ্যাপন করছেন, তাঁরা এই অর্জনকে আলিঙ্গন করুন। একই সঙ্গে তরুণদের স্বপ্নকে দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এই সময় পরীক্ষায় যাঁরা ভালো বা প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলাফল অর্জন করতে পারেননি, তাঁদের উদ্দেশে মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, ‘যাঁদের ফলাফল প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি, মনে রাখবেন, এটি শেষ নয়। জীবনে বারবার সুযোগ আসে এবং কখনো কখনো বাধাগুলোই সবচেয়ে বড় সফলতার সিঁড়ি হয়ে দাঁড়ায়। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন, সামনে এগিয়ে যান এবং কখনো আপনার স্বপ্ন হারাবেন না। আপনার সামনের পথ সম্ভাবনায় পূর্ণ এবং আমি আপনাদের ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা জানাই।’
‘যে হিরো হতে চাও, সমস্যা নেই’—তৌসিফ মাহবুব
তৌসিফ মাহবুব সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতার একজন। বর্তমানে ‘চক্র’ ওয়েব সিরিজ দিয়ে ভক্তদের সামনে নতুনভাবে আসছেন। অভিনয় ক্যারিয়ারে সফল হলেও তিনি চেয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ার হবেন। সেভাবেই পড়াশোনা শুরু করেন। এইচএসসি পাস করার পরে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ধৈর্য ধারণ করে এগিয়েছেন। তা না হলে হয়তো আজকের এই জায়গায় আসা সম্ভব হতো না বলে মনে করেন তৌসিফ।
এই অভিনেতা পাস করা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘সবার আগে পড়াশোনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনটাকে গুরুত্ব দিতে হবে। এখন সবার হাতে মোবাইল রয়েছে। সেটা দিয়ে এসব তরুণ শিক্ষার্থীরা নাটক দেখছে, টিকটক বানাচ্ছে বা ভিডিও বানাচ্ছে কেউ কেউ। কিন্তু এ সবই করতে হবে, তবে পড়াশোনার বাইরে। আমি সেটাই করেছি, আগে পড়েছি। কারণ, ক্যারিয়ার গড়ার সময়ই এখনই নয়। সময় আসবে। এ জন্য ক্যারিয়ার গড়ার সময়কে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে।’
নিজের উদাহরণ দিয়ে তৌসিফ বলেন, ‘আমি পড়াশোনা করেছি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। পরে অনেক দেরিতে আমি অভিনয় শুরু করেছি। তার আগে আমি নিয়মিত পড়াশোনার ওপর গুরুত্ব দিয়ে অন্য কাজ এগিয়ে নিয়েছি। নিয়মিত পড়াশোনা করে যাওয়া, পড়াশোনার বাইরে অনেক জানা—এগুলো আমাকে ক্যারিয়ারের জন্য ম্যাচিউর করেছে। সেটা অভিনয়েও কাজে দিয়েছে। যে হিরো হতে চাও, সমস্যা নেই, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়টাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। বাকি সব পড়াশোনার পরে।’
‘ভর্তি পরীক্ষা আরও কড়াকড়ি হতে পারে’—তাসনিয়া ফারিণ
এবার এইচএসসি ও সমমানের সব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। কিছু পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিছু বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। বাতিল পরীক্ষাগুলোর নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে (বিষয় ম্যাপিং করে)। এ পদ্ধতি অনুসরণ করে ফলাফল প্রকাশ করায় কিছু শিক্ষার্থীর ওপর চাপ তৈরি হবে বলে মনে করেন তরুণ অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ।
ফারিণ জানান, অটো পাস অনেকের ফলাফলের ওপর প্রভাব ফেলবে। অনেকের ফলাফল খারাপও হতে পারে। হয়তো আশানুরূপ হবে না। এখন তাঁদের ভর্তি পরীক্ষার সময় পড়াশোনা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই।
ফারিণ বলেন, ‘অটো পাসের কারণে কেউ এগিয়ে থাকবে, কেউ পিছিয়ে থাকবে। যে কারণে যাদের ফলাফল আশানুরূপ হয়নি, তাদের জন্য এখন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার সময়টা গুরুত্বপূর্ণ। ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে নিজেদের প্রমাণ করতে হবে। ফলাফলে কে এগিয়ে, কে পিছিয়ে, ভাবার সময় নেই। কারণ, পরীক্ষা হয়নি। এটা মেনে নিতে হবে। সেই কারণে ভর্তি পরীক্ষা আরও কড়াকড়ি হবে ধরে নিতে হবে। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়বে। এই সময়টাকে কাজে লাগাতে হবে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়জীবনটা আরও গুছিয়ে নেওয়ার সময়। পড়াশোনার পাশাপাশি নানা বিষয়ে জ্ঞান রাখতে হবে। সবার জন্য শুভকামনা।’