দেশীয় তারকাদের মধ্যে জুয়ার অ্যাপের প্রচারণায় কোনো তারকার অন্তর্ভুক্তি এবারই প্রথম নয়। কেউ শুভেচ্ছাদূত হয়ে সরাসরি এসব জুয়ার অ্যাপের প্রচারণায় যুক্ত হয়েছেন। কেউবা তাঁদের অনুষ্ঠানে এসব জুয়ার অ্যাপের স্পনসরের মাধ্যমে যুক্ত থেকেছেন। এর আগে নুসরাত ফারিয়া, পরীমনি, অপু বিশ্বাস, মাহিয়া মাহি, শবনম বুবলীর মতো তারকাদেরও দেখা গেছে জুয়ার অ্যাপের প্রচারণায়। এবার সেই তালিকায় দেখা গেছে মডেল ও অভিনয়শিল্পী জান্নাতুল পিয়ার নাম। শুরু হওয়া এবারের বিপিএল ঘিরে একটি জুয়ার অ্যাপের পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি অনুষ্ঠানে কথা বলতে দেখা গেল এই মডেল ও অভিনয়শিল্পী তারকাকে।
মডেল ও অভিনয়শিল্পী জান্নাতুল পিয়া একজন পেশাদার আইনজীবীও। তাই বিনোদন অঙ্গন–সংশ্লিষ্টদের মতে, একজন আইনজীবী হয়ে তিনি কীভাবে একটি জুয়ার অ্যাপ স্পনসর হয়েছে, এমন একটি অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হলেন। আইন জানা কেউ যদি এমন করেন, তাহলে আইন না জানা ব্যক্তিরা কী করবেন, তা নিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিপিএল উপলক্ষে পিয়া জান্নাতুল একটি ক্রিকেটবিষয়ক অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করছেন। ফেসবুক ও ইউটিউবে জন্য তৈরি এই অনুষ্ঠানে জান্নাতুল পিয়াকে ম্যাচ–পূর্ববর্তী বিশ্লেষণ করতে দেখা গেছে। উপস্থাপনার সময় এই মডেল ও অভিনেত্রী জুয়ার অ্যাপের নামসংবলিত একটি টি–শার্ট পরিহিত ছিলেন। তবে তিনি দাবি করেছেন, এই অ্যাপের শুভেচ্ছাদুত নন তিনি।
প্রথম আলোর পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে জান্নাতুল পিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁর কাছে প্রশ্ন ছিল, অনুষ্ঠানে জুয়ার অ্যাপের পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়টা কি আগে থেকে জানতেন? না জানলে ফেসবুকে আপলোড করার পর তো জানলেন। এখন জুয়ার অ্যাপ বিষয়ে আপনার অবস্থান কী? এ বিষয়ে তিনি কোনো উত্তর দেননি।
পিয়ার কাছে আরেকটি প্রশ্ন ছিল, অভিনয়শিল্পী ও মডেলের পাশাপাশি আপনি একজন আইনজীবী। দেশের প্রচলিত আইন সম্পর্কেও আপনি অবগত। এভাবে জুয়ার অ্যাপের প্রচারণায় যুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে আপনার বক্তব্য কী? এই বিষয়েও পিয়া কোনো সরাসরি কথা বলেননি। তবে পিয়া জান্নাতুল বলেছেন, ‘আমি একজন ক্রিকেটপ্রেমী। বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে আমি কথা বলতে ভালোবাসি। আমি শুধু ক্রিকেট নিয়ে পোস্ট করছি, যা ক্রিকেট সম্পর্কে আমার ভালোবাসা প্রকাশ করে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জান্নাতুল পিয়া যেই জুয়ার অ্যাপের টি–শার্ট পরে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছেন, তা বাংলাদেশের সেরা জুয়ার এজেন্টদের একটি, যা ১০ বছর আগে চালু হয়।
এদিকে প্রস্তাবিত সাইবার সুরক্ষা আইনে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি সাইবার স্পেসে জুয়া খেলার জন্য কোনো পোর্টাল বা অ্যাপসে বা ডিভাইস তৈরি করে বা পরিচালনা করেন বা জুয়া খেলায় অংশগ্রহণ করেন বা খেলায় সহায়তা বা উৎসাহ প্রদান করেন বা উৎসাহে প্রদানের জন্য বিজ্ঞাপনচিত্রে অংশগ্রহণ করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।’
জানা গেছে, বাংলাদেশের আইনে যেকোনো ধরনের জুয়া ও বাজি ধরা নিষিদ্ধ। প্রচার-প্রচারণাতেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। গেল জুন মাসে তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষকদের বরাতে প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়, সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে তারকাদের এ ধরনের বিজ্ঞাপনচিত্রে নেওয়া হয়। এতে সাধারণ মানুষ তারকাদের কথায় প্রলুব্ধ হয়ে জুয়ার ফাঁদে পা দেন। বিষয়টি নিয়ে অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন বলেছিলেন, ‘জুয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো কোটি কোটি টাকার অবৈধ ব্যবসা করে। সেখান থেকে কিছু অংশ বিজ্ঞাপনে ব্যয় করে। তারকারাও নৈতিক ব্যাপারটা মাথায় রাখছেন না।’
এর আগে অনলাইনে জুয়ার বিস্তার নিয়ে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশসহ (টিআইবি) বিভিন্ন সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা পাচার করা হচ্ছে বলেও দাবি করেছে টিআইবি। এদিকে গত ১২ মে প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘খেলায় চলছে জুয়ার বিজ্ঞাপন, দেখেও দেখছে না কেউ’ শিরোনামে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮ নম্বর অনুচ্ছেদে জুয়া খেলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।