এক দশকের ক্যারিয়ারে একের পর এক বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয়ের জন্য আলাদা পরিচিতি পেয়েছেন মনোজ প্রামাণিক। গত ঈদুল আজহায় চরকিতে মুক্তিপ্রাপ্ত ওয়েব সিরিজ ‘বাজি’–তে পুলিশ কর্মকর্তা চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা পেয়েছেন তিনি। অভিনেতাকে নিয়ে লিখেছেন মনজুরুল আলম
২০১৪ সালের দিকে মনোজ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, অভিনয়টাই পেশা হিসেবে নেবেন। ক্যারিয়ারজুড়ে বরাবরই চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে মনোজের ওপর ভরসা করেন নির্মাতারা। কখনো কখনো তাঁকে কেন্দ্র করেই নাটক নির্মাতাদের কাছ থেকে শুনতে হয় তাঁকে নিয়ে গল্পটি লেখা, অভিনয় করতেই হবে। মনোজের ভাষ্যে, ‘কোনো পরিচালক যখন আমার ওপর নির্ভর করে চিত্রনাট্য তৈরি করেন, তখন খুব চাপে থাকি। নিজের সঙ্গে একধরনের প্রতিযোগিতা থাকে। নিজেকে তৈরি করি। কিন্তু শুটিংয়ে যখন যাই, তখন চাপ ভুলে চরিত্রে ডুবে যাই। হয়তো এ জন্য দর্শকেরা আমার কাছে আরও বেশি প্রত্যাশা করেন।’
প্রশংসা শুনলে ভয় লাগে
আরিফুর রহমানের ওয়েব সিরিজ ‘বাজি’–তে পুলিশ কর্মকর্তা তপু চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা পাচ্ছেন মনোজ। তিনি বলেন, বাজি–তে আমাকে সবচেয়ে বেশি শুনতে হয়েছে দৃশ্যগুলো খুবই আবেগঘন। অভিনয়ে আবেগটা তৈরি করতে পেরেছি। আমার অভিনয় অনেক ভালো হয়েছে। ভক্তদের কাছ থেকে এগুলো সেরা পাওয়া আর সত্য বলতে প্রশংসা শুনলে ভয় লাগে। তখন আমি এই ভালোবাসার প্রতিদান কী দেব, সেটা বুঝে উঠতে পারি না। আমার কী বলা উচিত, সেটাই বুঝি না। শুধু ধন্যবাদ দিলেও অনেক কম মনে হয়। অনেক সময় প্রশংসা শুনে নির্বাক হয়ে বসে থাকি। তখন মনে হয় আমাকে আরও এগিয়ে যেতে হবে।’
হঠাৎ অভিনয়ে
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্র বিষয়ে পড়ান মনোজ প্রামাণিক। তার আগেই যোগ দিয়েছিলেন থিয়েটারে। ইচ্ছা ছিল, শখে অভিনয় করে যাবেন। কখনোই চাননি অভিনয়কে পেশা হিসেবে নিতে। ২০১৪ সালে ক্লোজআপ কাছে আসার গল্পে কাজ করে পরিচিতি পেতে শুরু করেন। তখন অনেকেই কাজের জন্য মনোজকে ডাকেন। কেউ কেউ প্রধান চরিত্রে ভাবেন। যে চরিত্রগুলো কখনোই ভাবেননি, সেগুলো ধরা দিতে থাকে। সেই বছরই সিদ্ধান্ত নেন নিয়মিত অভিনয় করে যাওয়ার।
মনোজ বলেন, ‘পরিবার থেকেই আমার অভিনয় শুরু। থিয়েটারও করেছি। এই সবই শখে। ফুলটাইম অভিনয় করব, প্রধান চরিত্রে কাজ করব, এটা ভাবিনি। আমি নিজেকে নিয়ে কম ভাবি। যখন একটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হলো, তখন মনে হলো পেশা হিসেবে অভিনয়কে নেওয়া যায়।’
এবার নতুন পরিচয়ে
২০২৪–২৫ অর্থবছরে অনুদান পেয়েছে মনোজ প্রযোজিত সিনেমা ‘সেয়ানা’। এটি পরিচালনা করবেন তাঁর ছাত্র ইকবাল হাসান খান। সিনেমার সঙ্গে যুক্ত বেশির ভাগই তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষার্থীদের নিয়ে নাটক ও ওটিটিতে কাজ করছেন। শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিতে মনোজ লগ্নিও করেছেন। সেখানে থেকে তিনি বড় পরিকল্পনা করেন। পেয়ে যান সিনেমার অনুদানও।
‘এটা আমাদের জন্য দারুণ একটি উদ্যোগ। এর আগে আমরা ১৪ জন শিক্ষার্থীদের নিয়ে টেলিভিশনের কাজ শুরু করেছিলাম। আমি ক্রিয়েটিভ প্রযোজক ছিলাম। পরে আরও বেশ কিছু কাজ করে সফল হয়েছি। এবার সিনেমায়ও আমরা সফল হব, আশা করি। অনুদানের সিনেমা বড় একটি দায়িত্ব। এটা যেমন আনন্দ দিয়েছে, তেমনি চাপও বেড়েছে। সবকিছু নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। আশা করি, এই তরুণদের হাত ধরেই চলচ্চিত্র আরও এগিয়ে যাবে।’, বলেন এই অভিনেতা।
ভুল থেকে শিক্ষা
নাটক কম করলেও এখন নিয়মিত সিনেমা ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে দেখা যায় মনোজকে। ক্যারিয়ার নিয়ে খুশি হলেও দীর্ঘ ১০ বছরে আরও বেশি এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল বলে জানান মনোজ। এই সময়ে কোনো ভুল আছে কি না, জানতে চাইলে মনোজ বলেন, ‘তুলনামূলক কম মেধাসম্পন্ন হয়েও শুধু ইন্ডাস্ট্রি ওরিয়েন্টেড বা ইন্ডাস্ট্রি বোঝার কারণে কেউ কেউ এগিয়েছেন। শুরু থেকে ইন্ডাস্ট্রিটা বুঝে হিসাবি হওয়ার দরকার ছিল। এ ছাড়া আরও বেশি অভিনয় স্কিল বাড়ানো যেত। ভুল থেকেই শিক্ষা নিতে চাই। এখন বুঝে পা ফেলতে চাই। আমি আরও শিখতে চাই। কারণ, বেশির ভাগ সময় প্রশংসা পেলেও আমার নিজের কাজ দেখে মনে হয় কিছুই হয়নি। নিজেকে আরও দক্ষ করে গড়ব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’
সবশেষে তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর ৪৬ মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আমার সঙ্গে সুব্রত সরকারের চিত্রনাট্য ও পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘হইতে সুরমা’ নিয়ে অংশগ্রহণ করি। নন-কম্পিটিশন বিভাগে সিনেমাটি অফিসিয়ালি সিলেক্টেড হয়েছিল। এটা সিনেমা নিয়ে আমার আগ্রহ আরও অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে।’