বছরের শুরুতে মেহজাবীন চৌধুরী ও তৌসিফ মাহবুব অভিনীত ‘কাজলের দিনরাত্রি’ নাটকটি আলোচিত হয়। ভালোবাসা দিবসে তানজিন তিশার সঙ্গে ‘মেময়ার অব লাভ’ নাটকে অভিনয় করেও বেশ সাড়া পাচ্ছেন। নাটকসহ নানা প্রসঙ্গে ‘বিনোদন’–এর সঙ্গে কথা বলেছেন তৌসিফ মাহবুব।
‘মেময়ার অব লাভ’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সাড়া পাচ্ছে...
ভালোবাসা দিবসে আমার চারটি নাটক প্রচারিত হয়েছে। ‘ওয়েডিং কাপল, ‘যত দূরে’, ‘পিকআপ আর্টিস্ট’ ও ‘মেময়ার অব লাভ’। তবে ‘মেময়ার অব লাভ’–এর জন্য বেশি সাড়া পাচ্ছি। ইউটিউবে ভিউও বেশি। প্রচারের আগেই নাটকটি নিয়ে আমার নিজের প্রত্যাশা ছিল। যেমনটি বছরের শুরুর দিকে কাজলের দিনরাত্রি নাটকেও এমন সাড়া পেয়েছিলাম।
এ নাটক দর্শকের আলাদা করে পছন্দ হওয়ার কারণ কী?
এটি গতানুগতিক গল্পের নাটক নয়। দুই-আড়াই বছর ধরে এ ধরনের গল্পের নাটক নিয়ে এই একই পরিচালকের (জাহিদ প্রীতম) সঙ্গে কাজ করছি। তাঁর সঙ্গে এর আগে এ ধরনের গল্পের আরও পাঁচটি নাটকে কাজ করেছি। এবারই প্রথম এ ধরনের গল্প দর্শকের পছন্দ হয়েছে। বর্তমান সময়ে এসে ব্যবসা হবে না ভেবে এ ধরনের নাটকে বিনিয়োগ করতে চান না প্রযোজকেরা। এমনও হয়েছে, গল্প শুনে কোনো কোনো প্রযোজক সরে গেছেন। তাঁদের ধারণা, কমেডি বা চটুল গল্প ছাড়া ভিউ হবে না, ব্যবসাও হবে না। কিন্তু আমরা প্রমাণ করেছি, কমেডি বা চটুল ধরনের বাইরে গিয়েও ব্যবসা হতে পারে। নাটকটি আট দিনে প্রায় দশ লাখের কাছাকাছি ভিউ হয়েছে। অনেক দিন ধরেই কাজ করছি, আমি মনে করি, দিন শেষে গল্পই বেছে নেন দর্শকেরা।
ভালোবাসা দিবসে নিজের ছাড়া আর কার নাটক দেখেছেন?
অন্য কারও নাটক দেখা হয়নি। তবে চরকিতে ‘উনিশ২০’ ওয়েব ফিল্মটি দেখেছি। আমার প্রিয় পরিচালক, প্রিয় শিল্পীদের কাজ। পরিচালক দারুণভাবে প্রেমের গল্পে বলেছেন। অসাধারণ লেগেছে কাজটি। গল্পে প্রেম–ভালোবাসার একটু অন্য ধরন আছে, যেটা দর্শকের কাছে নতুন মনে হতে পারে। বিশেষ করে বিন্দু আপাকে অনেক দিন পর পর্দায় দেখলাম। তাঁর সঙ্গে আমার কাজ করা হয়নি কিন্তু আমি তাঁর ভক্ত। পর্দায় সেই আগের বিন্দুকেই খুঁজে পেয়েছি।
ওটিটির কারণে নাটকে কি প্রভাব পড়েছে?
অবশ্যই পড়েছে। কারণ, ওটিটির কনটেন্টে ভালো গল্প, ভালো বাজেট আছে। পরিকল্পনা করে সময় নিয়ে কাজ হচ্ছে। ফলে দর্শকের আগ্রহ বাড়ছে ওটিটির কনটেন্টে। নাটক, টেলিছবির আবেদন হয়তো শেষ হবে না, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, ইন্ডাস্ট্রি ওটিটির দিকেই এগোচ্ছে। আমার নিজেরও ওটিটির কাজে আগ্রহ আছে।
আপনার সমসাময়িক অনেক শিল্পীই ওটিটিতে ব্যস্ত, আপনি করছেন না কেন?
অনেক প্রস্তাব আছে। কিন্তু ভালো গল্প পাইনি। এ ছাড়া ওই রকম বড় কোনো প্ল্যাটফর্ম থেকেও প্রস্তাব আসেনি। বড় প্রজেক্ট, বড় প্ল্যাটফর্ম দিয়েই শুরু করতে চাই। ব্যাটে–বলে এখনো মেলেনি। তবে আশা করছি, শিগগিরই ওটিটির বড় একটা কাজ হতে পারে।
অনেকে বলেন নিশো, অপূর্ব, মেহজাবীন, ফারিণরা নাটকে কাজ কমিয়ে দেওয়ার কারণে এই অঙ্গনে প্রভাব পড়েছে, শিল্পীসংকটও তৈরি হয়েছে। আপনি কী বলবেন?
অবশ্যই প্রভাব পড়েছে, শিল্পীসংকটও কিছুটা তৈরি হয়েছে। তবে এক-দেড় বছরের মধ্যে এ সমস্যা কেটে যাবে। কারণ, অপূর্ব ভাই, নিশো ভাইদের পর আমরা যারা আছি, তাদের ওনাদের পর্যায়ে কাজ করতে হবে। মুশফিক ফারহান তো মোটামুটি তৈরিই হয়ে গেছে। এ ছাড়া আরোশ, কেয়া পায়েল, মাহি, তটিনি, সাদিয়া আয়মানরাও একটা সময় ভালোভাবেই দাঁড়িয়ে যাবে। তখন আর শিল্পীসংকট থাকবে না।
সাফা কবির, সাবিলা নূরদের সঙ্গে জুটি বেঁধে কাজ কমিয়ে দিয়েছেন। কোনো সমস্যা হয়েছে কি?
না, কোনো সমস্যা হয়নি। ২০১৩ সাল থেকে একসঙ্গে কাজ করছি। সাফার সঙ্গে প্রায় ৩০০ নাটক, সাবিলার সঙ্গে প্রায় ১৫০ নাটকে কাজ করেছি। এক–দেড় বছর হলো, নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বছরে দুই-চারবারের বেশি জুটি বেঁধে কাজ করব না। একঘেয়েমি হয়ে যাচ্ছিল। দর্শকেরা বিরক্ত হতে পারেন। তা ছাড়া অন্যান্যদের সঙ্গে কাজ করলে নিজের জানার, শেখার জায়গাটাও বাড়ে। কাজে বৈচিত্র্য আসে।
কিছুদিন আগে বিবাহবার্ষিকী পালন করতে দেশের বাইরে গিয়েছিলেন...
এবার আমরা পঞ্চম বিবাহবার্ষিকী পালন করলাম। বিবাহবার্ষিকীর দিন ৯ ফেব্রুয়ারি সকালে থাইল্যান্ডে গিয়েছিলাম। ৯ দিন ছিলাম। নিজেদের মতো করে সময় কাটিয়েছি। সময়টা দুজন কাছাকাছি থাকতে চেয়েছি। শুটিংয়ের কারণে সারা বছর তো স্ত্রীকে সময় দিতে পারি না। বিবাহবার্ষিকীতে সাধারণত আমরা দেশের বাইরেই যাই। মাঝখানে করোনার কারণে যাওয়া হয়নি। এর আগে ভুটান, নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ায় গিয়েছি।
এখন কী কাজ করছেন?
ভালোবাসা দিবসের পর গত বৃহস্পতিবার থেকে শুটিং শুরু করেছি। নারী দিবসের একটি কাজ—‘চোখ’। পরিচালক প্রীতি দত্ত। কোনো নায়ক-নায়িকাকেন্দ্রিক গল্পের নাটক নয়। এখানে আমার চরিত্রের একটা চমক আছে। গল্পটি ভালো লেগে গেল। তাই কাজটি করছি। আমার সঙ্গে ফারিণ আছেন। আরও দুই দিন শুটিং চলবে।
সাক্ষাৎকার: শফিক আল মামুন, ঢাকা