পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও এখনো দুশ্চিন্তা কাটছে না নাটকের শুটিং নিয়ে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে ১০ দিন ধরে শুটিং বন্ধ। হাতে গোনা কিছু ধারাবাহিক ও খণ্ড নাটকের শুটিং হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও সিংহভাগ নাটকের শুটিং বাতিল হয়েছে। নাটকের পরিচালক, প্রযোজক ও অভিনয় শিল্পী সংঘের তথ্যমতে, শতাধিক নাটকের শুটিং বন্ধ। পুরোদমে শুটিং শুরুর বিষয়টি নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। ফলে ক্ষতির মুখে নাটকের কলাকুশলীরা।
ঈদের ছুটি শেষে ছোট পর্দার তারকারা নিয়মিত হচ্ছিলেন শুটিংয়ে। ঈদের বিরতির পর শুটিং নিয়মিত হতে না হতেই কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে দেশের সব নাটকের শুটিং স্থগিত হয়। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও এখনো শুটিংয়ে ফেরার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে জানান নাটকের পরিচালক ও কলাকুশলীরা।
মোশাররফ করিম, তৌসিফ মাহবুব, ফারহান আহমেদ জোভান, মুশফিক আর ফারহান, খায়রুল বাসারসহ একাধিক অভিনয়শিল্পী শুটিং বাতিল করেছেন। এর মধ্যে সর্বাধিক চারটি নাটকের শুটিং বাতিল করেছেন খায়রুল বাসার। ১৯ জুলাই থেকে তাঁর টানা শুটিং ছিল।
খায়রুল বাসার বলেন, ‘স্থবির একটি অবস্থার মধ্যে আছি। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে এখনো মানুষ আতঙ্কে রয়েছে। এখনো ছাত্ররা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি। এর মধ্যে কীভাবে শুটিংয়ের পরিবেশ তৈরি হবে? দোকানদারেরা হয়তো কিছু সময়ের জন্য দোকান খোলা রাখতে পারছেন, ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এটা আমাদের জন্য কঠিন। মানসিকভাবে এমন পরিস্থিতির মধ্যে শুটিং করা কঠিন। আবার শুটিংই আমার জীবিকা। মাস শেষে তো খরচটা শুটিং করেই চালাতে হয়। বেশি দিন তো বসে থাকারও উপায় নেই।’ এই অভিনেতা চিন্তা করছেন, ১ আগস্ট শুটিং শুরু করবেন।
শুটিং নিয়ে শিল্পীদের মতো মানসিকভাবে অস্থির অবস্থায় রয়েছেন নির্মাতারাও। এর মধ্যে সালাহউদ্দিন লাভলু, তুহিন হোসেন, ভিকি জাহেদ, রাফাত মজুমদার, মোহন আহমেদ, তারেক রেজা, মাহমুদ মহিনসহ অনেক নির্মাতা জানান, তাঁরা নাটকের শুটিং স্থগিত করেছেন। তবে কারফিউ শিথিল হওয়ায় কেউ কেউ শিডিউলের জটিলতা এড়াতে শুটিং করেছেন। কেউ ধারাবাহিক নাটকের প্রচার আটকে যাওয়া থেকে বাঁচতে শুটিং করেছেন। তেমন একজন পরিচালক তুহিন হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার শুটিং ছিল রাজশাহীতে। কিন্তু শেষ দিন পরিস্থিতি ভালো না থাকায় শুটিং আটকে যায়। এদিকে আমার ক্যাম্পাস নাটকের প্রচারের জটিলতা এড়াতে শুটিং করতে হচ্ছে। আমরা রাজশাহীর কিছু অংশের শুটিং উত্তরায় করছি। উপায় নেই।’
ক্যাম্পাস নামের এই ধারাবাহিকের শুটিংয়ে অংশ নিয়েছেন অভিনেত্রী নাজিয়া হক অর্ষা, পাভেলসহ আরও অনেকে। শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে অর্ষা বলেন, ‘একদমই বাধ্য হয়ে, ঝুঁকি নিয়ে শুটিং করতে হচ্ছে। আসলে এখনো যে পরিবেশ, তাতে শুটিং করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত নই। প্রচারের জটিলতা না থাকলে এমন সময় শুটিং করতাম না। প্র্যাক্টিক্যালি শুটিংয়ের পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। এই যে আমাকে বাসায় ফিরতে হবে, রাস্তায় থাকে জ্যাম। এর মধ্যে শুটিং থেকে ফেরা নিয়েও খুবই চিন্তা করতে হচ্ছে। কখন কী হয়!’
স্ত্রীকে নিয়ে ঈদের সময়টা দেশের বাইরে ঘুরতে গিয়েছিলেন অভিনেতা নিলয় আলমগীর। দেশের অস্থির অবস্থার মধ্যেই সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। কারফিউ শিথিল হওয়ায় পুবাইলে একটি নাটকের শুটিংয়েও অংশ নিয়েছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন অভিনেত্রী জান্নাতুল হিমি। প্রাথমিকভাবে নাম ঠিক হওয়া গরুর ডাক্তার নাটকের পরিচালক মাইদুল রাকিব। অভিনেত্রী হিমি বলেন, ‘থানা থেকে পরিচালক অনুমতি নিয়েছিলেন। সব নিয়ম মেনেই আমরা শুটিং করেছি। শুটিং হাউসের মধ্যে কোনো সমস্যা হয়নি। তারপরও দুশ্চিন্তা হচ্ছিল। পুরো পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আতঙ্ক কাটবে না।’ তিনি জানান, আজ শনিবারও তিনি ও নিলয় উত্তরায় একটি নাটকের শুটিংয়ে অংশ নেওয়ার কথা ভাবছেন।
অভিনয়শিল্পীরা গত বৃহস্পতিবার থেকে কক্সবাজার, গাজীপুরের পুবাইলসহ অনেক জায়গায় শুটিংয়ে আটকে পড়েছিলেন বলে জানান অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবীব নাসিম। তিনি মনে করেন, পুরোদমে শুটিংয়ের এখনো পরিবেশ তৈরি হয়নি। কারণ, এখনো অভিনয়শিল্পীরা অনেকেই আতঙ্কে রয়েছেন। এর মধ্যে অনেকের বাসার সামনে অস্থির পরিবেশ ছিল, কেউ কেউ শুটিংয়ে আটকে পড়ে আতঙ্কিত ছিলেন। শিল্পীদের এই নেতা বলেন, ‘আমরা সবাই পরিবেশ স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি। আমাদের এমনিতেই অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল। এটা চলতে থাকলে অনেক সহকর্মীর জীবন–জীবিকা একেবারে থেমে যাবে। সবাই পরিস্থিতি পুরো স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষায়। কবে নাগাদ সেটা হবে, তা নিয়েই চিন্তা হচ্ছে।’