ঈদ মৌসুমের সেই কষ্ট ঘুরে দাঁড়াতে বাধ্য করেছে, বললেন ইমন খান

সংগীতশিল্পী ইমন খান। ছবি: ফেসবুক থেকে
সংগীতশিল্পী ইমন খান। ছবি: ফেসবুক থেকে

বন্ধু, সহকর্মী, আত্মীয়স্বজন যাঁদের সামর্থ্য রয়েছে, তাঁরা ঈদের ১৫/২০ দিন আগেই কেনাকাটায় ব্যস্ত হতেন। কিন্তু নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য কী কী কিনবেন, সেগুলো ঈদের আগে চাঁদরাত পর্যন্তও জানতেন না ‘আজও প্রতি রাত জেগে থাকি’ গায়ক ইমন খান। অ্যালবামের পারিশ্রমিকের জন্য চাঁদরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। কখনো অর্থের জন্য শুনতে হতো অসম্মানজনক কথা। সেসব কথাই তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছে। তাঁকে শিখিয়েছে নিজের মতো করে গান নিয়ে এগিয়ে যেতে। নিজের একটি জায়গা তৈরি করতে। সেই কষ্টের দিনগুলো তার কাছে এখনো অতি আপন।

২০০৪-০৫ সালের কথা। সিরাজগঞ্জ থেকে এসে গাজীপুর কোনাবাড়িতে থাকতেন। এখানে এসে প্রথম সুযোগ পান অ্যালবাম করার। পরপর চারটি অ্যালবাম করেছেন। গানই ছিল তাঁর আয়ের উৎস। অন্য কোনো আয়ের পথ ছিল না। তিনি সারা দিন ছুটে চলতেন স্টুডিওতে বা কীভাবে কাদের সঙ্গে গান করা যায়, সেই পথ খুঁজতেন। সময়গুলো ভালো–মন্দ মিলিয়েই ছিল। অন্যান্য সময় মানিয়ে নিলেও ঈদের সময়গুলোয় অপেক্ষা তাঁর মন খারাপ করে দিত।

সংগীতশিল্পী ইমন খান। ছবি: ফেসবুক থেকে

ইমন বলেন, ‘ঈদের অনেক আগে থেকে অপেক্ষায় থাকতাম, কবে সম্মানী পাব। কবে সেই অর্থ দিয়ে মা-বাবা, ভাই আর পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা করব। দেখা যেত, সবাই কেনাকাটা করে ঈদের দুই/তিন দিন আগেই বাড়িতে চলে গেছে। কিন্তু আমি আছি অপেক্ষায়। আবার জানতামও না, সম্মানী হিসেবে কত টাকা পাব। হয়তো ধরে রেখেছি এক রকম, পরে দেখা যেত, পেয়েছি তার চেয়ে কম। এটা নিয়ে মন খারাপ হলেও সেটা নিজের কাছেই রাখতে হতো।’
গান শৈশব থেকেই ইমন খানকে টানত। তাঁর নেশার মতো ছিল গান করা। তাঁর কখনোই উচ্চাভিলাষ ছিল না। শুধু চেয়েছিলেন গান করে খেয়ে–পরে বেঁচে থাকতে। কিন্তু সেটাই তাঁর কাছে একসময় অনেক চ্যালেঞ্জিং হয়ে ধরা দেয়। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন। গাজীপুরে এসে শুধু চেয়েছিলেন গান করে ঠাঁই পেতে। দেড় যুগ আগের সেসব দিনের কথা ইমনের কাছে এখনো সেদিনের মনে হয়।

সংগীতশিল্পী ইমন খান। ছবি: ফেসবুক থেকে

‘দেখা যেন ঈদের সময় অনেক মন খারাপ থাকত। আবার ভালো লাগাও থাকত। অ্যালবামের জন্য যাঁদের কাছে সম্মানী পাব, তাঁদের সঙ্গে হয়তো দেখা হচ্ছে, কথা হচ্ছে। এটাই ভালো লাগা। এর মাঝে যদি পারিশ্রমিক নিয়ে কিছু জানতে চাইতাম, তখন কড়া কথা শুনতে হতো। কেউ কেউ বলতেন, এত তাড়াহুড়া কেন? এত অস্থির হয়ে যাচ্ছি কেন? টাকা কি চাইলেই পাওয়া যায়। কথাগুলো শুনে খারাপ লাগত। কষ্ট পেতাম। আবার ঘটনার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতাম। নিজেকেই বোঝাতাম, কষ্ট করেই আমাকে এগিয়ে যেতে হবে। কষ্টগুলোই আমাকে বাধ্য করেছে ঘুরে দাঁড়াতে।’ কথাগুলো বলেন ইমন।
গাজীপুরে আসার পরে এই গায়কের চারটি অ্যালবাম প্রকাশ পায়। সেগুলো হাতে গোনা কয়েকটি জেলায় বিক্রি হতো। যে কারণে স্বল্প পরিসরে তাকে নিজের জেলা সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ, গাজীপুর কুমিল্লার কিছু শ্রোতা চিনতেন। হাতে গোনা কয়েকটি জেলার বাইরে তাঁর অ্যালবাম তেমন একটা পাওয়া যেত না। কিন্তু চোখের সামনে গুণী শিল্পীদের সাফল্য তাকে অনুপ্রাণিত করত।

সংগীতশিল্পী ইমন খান। ছবি: ফেসবুক থেকে

তাকে কোনো ঘটনাগুলো সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছে এমন প্রশ্নে এই গায়ক বলেন, ‘একটা সময় আমি পারিশ্রমিকের জন্য খুব বেশি আর কথা বলতাম না। কিন্তু এটা বুঝতাম যাদের অ্যালবাম সারা দেশে মুক্তি পাচ্ছে যাদের পরিচিতি বেশি তারা কিন্তু ঠিকই অনেক আগে পারিশ্রমিক পেতেন। তাদের ঘুরতে হতো না। আমিও স্বপ্ন দেখার চেষ্টা করতাম, দিন ঘুরবে। ভালো দিন আসবে। মানুষের কষ্ট সব সময় থাকে না। জীবনটা তখন আমাকে এটা ভালো করে শিখিয়েছিল, কষ্ট পেলে কেউ ভেঙে পরে, না হলে ঘুরে দাঁড়ায়। আমি ভেঙে পড়িনি। সেই দিনগুলোই আমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছে’
সবাই যখন বাড়িতে পৌছে যেতেন, ইমনের শুরু হতো পারিশ্রমিক পাওয়ার পরে ঈদের কেনাকাটা। এরপর গভীর রাতে বাড়ির উদ্দেশ্যে বাসে রওনা হতেন। কখনো ঈদের নামাজ ধরতে পারতেন, কখনো সময় গড়িয়ে যেন। এর মধ্যেই খুঁজে পেতেন পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ।
ব্যক্তিগত উদ্যোগে ইমন ২০০৭ সালের শেষের দিকে ১২টি গান নিয়ে প্রকাশ করেন তাঁর ৫ নম্বর অডিও অ্যালবাম ‘কেউ বোঝে না মনের ব্যথা’। সেই অ্যালবামেই ছিল ‘আজও প্রতি রাত জেগে থাকি তোমার আশায়’ গানটি। রাতারাতি আলোচনায় উঠে আসে গানটি। শোনা যায়, ২০০৮ সালে ইমন খানের এই অ্যালবামের মোট ১৫ লাখ কপি বিক্রি হয়।

গানটি আজ প্রকাশ পাবে।

ইমন বলেন, ‘আমার শুধু ঈদ নয়, জীবনটাই বদলে দেয় অ্যালবামটি। এই অ্যালবাম প্রকাশের পর থেকে নিয়মিত সব কাজের জন্য আগেই পারিশ্রমিক পাই। আগেই ঈদ করতে বাড়ি চলে আসি। ঈদের সময়টা আমার পরিবারের সঙ্গে কাটাতে খুবই ভালো লাগে।’ শেষে ইমন জানান, এবার ঈদ উপলক্ষে ইতিমধ্যে তাঁর দুটি গান প্রকাশ পেয়েছে। আরও দুটি গান প্রকাশ পাবে। এর মধ্যে ‘পাপের সাজা’ শিরোনামে একটি গান আজ মুক্তি পাবে। ঈদের পরে আবার গান ও স্টেজ প্রোগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত হবেন ইমন।