মাসুদ আলী খান। কবির হোসেন
মাসুদ আলী খান। কবির হোসেন

কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন, এখনো অভিনয়ে থাকতে পারতাম

ফুটবল খুব ভালো লাগত মাসুদ আলী খানের। ছোটবেলায় ফুটবল খেলতেন। স্কুল-কলেজে থাকতেও খেলেছেন। তাই ফুটবল খেলা বরাবরই ভালো লাগা ছিল। মৃত্যুর দুই বছর আগেও প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, তখনো নিয়মিত খেলা দেখতেন। এ ছাড়া নিয়মিত গান শুনতেন। সেই সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন নিজের প্রিয় শিল্পীদের কথাও। একই সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, এখনো অভিনয় করতে না পারার আক্ষেপের কথাও।

কথায় কথায় জানিয়েছিলেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে বেশির ভাগ সময় ঘুমিয়ে কাটাতেন। যতক্ষণ জেগে থাকতেন, গান শুনতেন, বই পড়তেন আর টিভি দেখতেন। তাঁর প্রিয় শিল্পী কারা? এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাসুদ আলী খান বলেছিলেন, ‘মান্না দে আমার সবচেয়ে প্রিয় শিল্পী। মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ও আমার প্রিয়। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ও ভালো লাগে। এর বাইরে বাংলাদেশের সৈয়দ আবদুল হাদী ও সাবিনা ইয়াসমীনের কণ্ঠ খুব ভালো লাগে। দেশের বাইরে আমার আরেকজন প্রিয় গায়ক কবীর সুমন।

প্রথম আলোর ক্যামেরায় ঢাকার গ্রীণরোডের বাসায় মাসুদ আলী খান

গান গাইতে গাইতে তার কথা বলার যে ব্যাপারটা, এটা দারুণ! ঢাকায় এসেছিল শুনেছি, খুব ইচ্ছা ছিল যাওয়ার। যেতে পারিনি বলে খুব খারাপ লেগেছে। আর ইনস্ট্রুমেন্টের মধ্যে সরোদ খুব প্রিয়। ঢাকায় বাহাদুর হোসেন খানের সামনে বসে সরোদ শুনেছি। আমার “নদী ও নারী” ছবিতে তিনি মিউজিক ডিরেক্টর ছিলেন।’

একই সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন তাঁর পরের প্রজন্মের প্রিয় অভিনয়শিল্পীদের কথাও। জানিয়েছিলেন, রাইসুল ইসলাম আসাদ, সুবর্ণা মুস্তাফাকে ভালো লাগে তাঁর। হুমায়ুন ফরীদিকেও খুব ভালো লাগত। তরুণদের মধ্যে অপি করিমকে ভালো লাগে। মাসুদ আলী খান বলেছিলেন, ‘আমার সঙ্গে যারা অভিনয় করত, তাদেরও খুব ভালো লাগে। শর্মিলী অভিনয় করত, সে মারা গেছে। দিলারা জামান—ওদের কথা বলতে গেলেই কান্না পায়। আমি যদি এখনো অভিনয়ে থাকতে পারতাম (কান্না)! লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন—শব্দগুলো খুব মিস করি। আমার কিন্তু অভিনয় করার সময় মনে থাকত না ক্যামেরার সামনে কিছু করছি। আমি সব সময় ওই চরিত্র হওয়ার চেষ্টা করতাম। ভাবতাম, আমিই যদি বিশ্বাস না করি, তবে দর্শক কেন বিশ্বাস করবে?

অভিনয়ে কিন্তু আমরা বানানো কথাই বলি। অন্যের কথা বলি। সেগুলো তখন যদি নিজের কথা ভেবে বলি, যদি না ফিল করতে পারি আমারই কথা, তাহলে তো অভিনয় হবে না। যাদের সঙ্গে অভিনয় করেছি—দিলারা জামান, শর্মিলী—তারা ছিল বন্ধুর মতো। দিলারা এখনো নিয়মিত ফোন করে। আর বেশির ভাগ নায়িকাই আমাকে বাবা বলে ডাকত। আমিও তাদের সন্তানস্নেহে দেখেছি সব সময়।’

বরেণ্য অভিনেতা মাসুদ আলী খান আর নেই। আজ বিকেলে ৯৫ বছর বয়সে রাজধানীতে নিজ বাড়িতে ঘুমের মধ্যে মৃত্যু হয় তাঁর। সাত দশকের অভিনয়জীবন তাঁর। মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র—তিন মাধ্যমে সমানতালে কাজ করেছেন।