‘তারপরও বাঁচি-মরি, আমার দল বাংলাদেশ’

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচে কাল সোমবার সকাল ১০টায় নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার হোবার্টে এই খেলা ছাড়াও আরও চারটি ম্যাচে খেলবে বাংলাদেশ। এসব ম্যাচের দিকে তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের ক্রীড়ামোদীরা। বাংলাদেশের ম্যাচ শুরুর আগে বিনোদন অঙ্গনের ক্রীড়াপ্রেমীরা জানালেন বাংলাদেশ দলের জয় নিয়ে তাঁদের আশাবাদের কথা।

সুবর্ণা মুস্তাফার খেলাপ্রীতির কথা সবাই জানেন। তাঁকে ক্রিকেট খেলার ধারাভাষ্যকার হিসেবেও দেখা গেছে। এই অভিনয়শিল্পী ও সংসদ সদস্য বাংলাদেশ দল নিয়ে ভীষণ ইতিবাচক। তিনি জানালেন, নিজের দেশের দল নিয়ে একদম ক্রিটিক্যাল হতে পারেন না তিনি। সুবর্ণা বলেন, ‘বড় কথা হচ্ছে, ক্রিকেট দল আমাদের অনেক সম্মান ও পরিচিতি এনে দিয়েছে। হয়তো এখন একটু খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তারা, আমি বিশ্বাস করি, এটা তারা কাটিয়ে উঠবে। ভালো খেললে তো থাকে সবাই। বাংলাদেশ দল খারাপ খেললেও দলের সঙ্গে থাকব। ফেসবুকে একবার তো লিখেছিলাম, “সমালোচনা করো, কিন্তু দলকে গালাগালি করলে মনে হয়, অনেক দিন হয়ে গেছে, ফ্রেন্ডলিস্ট ছাঁটাই করা হয়নি। সো সাবধান থেকো।” আমার কথা হচ্ছে, গঠনমূলক সমালোচনা করার অধিকার সবার আছে। কিন্তু তাই বলে সমালোচনার নামে যা খুশি তা কেউ বলতে পারে না।’

সুবর্ণা মুস্তাফা

দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে সাকিবের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, স্পোর্টিং অ্যাটিচুড সাংঘাতিক ভালো লাগে বলে জানালেন সুবর্ণা। তিনি বলেন, ‘সাকিব সব সময় খেলার মধ্যে থাকে। অনেকে বলে, খেলোয়াড়েরা সব সময় ভালো খেলে না কেন। এটা তো আসলে সম্ভবও নয়। বাংলাদেশ জিতলে আমি কখনোই বিস্মিত হই না। মনে হয়, এটাই তো হওয়ার কথা। বরং খারাপ খেললে বিস্মিত হই। আমি সব সময় আমার ক্রিকেট দলকে ভালোবাসি।’
টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দল নিয়ে অমিতাভ রেজার প্রত্যাশা এবার কম। পাবনায় শুটিংয়ে ব্যস্ত এই পরিচালক বলেন, ‘শেষ যে কয়টা খেলা দেখেছি, তাতে আশাবাদী হতে পারছি না। আশাবাদ না থাকলেও সমর্থন সব সময় দেশের দলের জন্যই রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাকিব আল হাসান সব সময় ভালো করে, সে হচ্ছে মাস্টার প্লেয়ার। আমি চাই, অন্যরাও ভালো করুক। কিন্তু শেষ কয়েক দিনের খেলা দেখে মনে হচ্ছে, দলে ভারসাম্য নেই। ক্রিকেট যদিও সব সময় আনপ্রেডিক্টেবল। তারপরও আশা করতে পারছি না শেষ কয়েকটা ম্যাচ দেখে। বাংলাদেশের আরেকটা ব্যাপার দেখেছি, টি–টোয়েন্টিতে কেন জানি ভালো করতে পারে না। তারপরও বাঁচি–মরি, আমার দল বাংলাদেশ।’

অমিতাভ রেজা

টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের শারীরিক সীমাবদ্ধতা আছে বলে মনে করেন ইরেশ যাকের। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেট টিমের যারা যারা খেলোয়াড়, টি–টোয়েন্টি তাদের জন্য অস্বাভাবিক ধরন মনে হয়। আমাদের দলের খেলোয়াড়েরা ওডিআইতে সেরা। যেটা আমি সব সময় বলি, টি-টোয়েন্টিতে ১৬০ রান করলে জেতার সম্ভাবনা থাকে। বোলিংয়ের সময় যদি ঠিকঠাক স্পিন বোলিং করা যায় আর প্রথমে বোলিং করতে হলে অন্য দলকে ১৫০–১৬০–এ আটকে দেওয়া যায়, তাহলে জেতার সম্ভাবনা থাকে। যখনই চিন্তা করি ২০০ রান করব, তখনই দেখি ১২০–এ আউট হয়ে যায়। আমাদের কিন্তু কার্লোস ব্রাফেট আর হার্দিক পান্ডিয়ার মতো খেলোয়াড় নেই, যারা ১২ বলে ৩০ রান কিংবা ১৫ বলে ৪০ করবে। তাই ২০০ করাটা আমাদের জন্য আনলাইক। একই সঙ্গে এটাও বলা যায়, বুমরাহ কিংবা মিচেল স্টার্কের মতো বোলার নেই যে তাড়াতাড়ি উইকেট ফেলে দিতে পারবে। আমাদের দলের খেলোয়াড়দের যে দক্ষতা, তাতে টি–টোয়েন্টিতে ফেবারিট হওয়াটা মুশকিল।’

ইরেশ যাকের

কথায়–কথায় ইরেশ এ–ও বললেন, ‘প্রতিটা বড় দলের কিন্তু ২–৩টা প্লেয়ার আছে, যারা ২০০–২৫০ স্ট্রাইক রেটে ৫০ করতে পারে। আমাদের কিন্তু একজনও নেই। সাকিব ৫০ বলে ৭৫ করে, ওর স্ট্রাইক রেট ১৬৬ হবে। কিন্তু জস বাটলারদের মতো খেলোয়াড়েরা তো ২০০–২৫০ করে। নিউজিল্যান্ড দলে তো কদিন পরপর একটা দানব আসে মনে হয়। বাংলাদেশ ছাড়া প্রতিটা দলে এ রকম দু–তিনজন খেলোয়াড় থাকে, যারা যেকোনো সময় খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারে, যেটা আমাদের নেই। কেন জানি আমার মনে হয়, বোলিংয়ে মোস্তাফিজকে যদি খেলানো হয়, আর সে যদি তার মেধা অ্যাপ্লাই করে বোলিং করে, খুব বেশি প্রেসার না নেয়, তাহলে রান ব্লক করতে পারবে।’

টি–টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়া আর ভারত খুবই ভারসাম্যপূর্ণ দল, মনে করেন ইরেশ। আর পাকিস্তান সব সময়ই একটা ওয়াইল্ড কার্ড, এমনটাও জানালেন। তিনি এ–ও বলেন, ‘আমার মনে হয়, তিন ধরনের ক্রিকেটে পাকিস্তানের এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান বাবর আজম। বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে লিটনের কাছে সব সময় আশা করি। সাকিবের কাছে ধারাবাহিকভাবে ৫০ আশা করা যায়, এর বাইরে আর কোনো খেলোয়াড় নেই। আমার কথা হচ্ছে, প্রতিটা ম্যাচে ৫০ করতে হবে না, প্রতিটা খেলোয়াড় ২০–২৫ করে করুক। এটা করলে এমনিতে ১৬০ হবে, তাহলে জেতার সম্ভাবনা থাকে।’