পেশাদার অভিনয়জীবনের ১৩ বছর পার করছেন নাজিয়া হক অর্ষা। অভিনয়ের জন্য বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেলেও এবার তিনি পেলেন মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কার। সমালোচক বিভাগে সীমিত দৈর্ঘ্যের কাহিনিচিত্র ‘গালিবের প্রেম ও বসন্তের কাব্য’–এর জন্য এ পুরস্কার পেয়েছেন। ওটিটিতে ‘সাহস, ‘জাহান, ‘কুহেলিকা’য় অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। এসব নিয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে কথা বলেছে বিনোদন
হাসপাতাল থেকে পুরস্কার মঞ্চে
আগস্টের শেষ দিকে অর্ষা ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। কিছুদিন ছিলেন শয্যাশায়ী। মা কিডনির রোগে ভুগছেন, ডায়াবেটিসের সমস্যাও বেড়েছে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তাই মাকেও ঢাকার বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। তিন বোন পর্যায়ক্রমে মায়ের দেখভাল করেন। বাবাও ডায়াবেটিসের রোগী। এদিকে ৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁকে হাজির থাকতে হয় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেম মিলনায়তনে।
এদিন মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান। চূড়ান্ত পর্বের মনোনয়নে অন্যদের সঙ্গে অর্ষাও ছিলেন। হাসপাতালে ভর্তি থাকা মায়ের কাছ থেকে কয়েক ঘণ্টার ছুটি নিয়ে উত্তরার বাসা হয়ে শেরেবাংলা নগরের অনুষ্ঠানে পৌঁছান। কিন্তু তখনো মাকে বলেননি, কোথায় যাচ্ছেন। শুধু বলেছেন, একটা কাজে যাচ্ছেন। পুরস্কারপ্রাপ্তির পর ট্রফি হাতে ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। হাসপাতালের নার্স ও চিকিৎসকেরা অসুস্থ মাকে জানান, অর্ষা আপু তো পুরস্কার পেয়েছে আন্টি। সেই ঘটনা এভাবেই বললেন অর্ষা, ‘জীবনে প্রথমবার এই পুরস্কার পেলাম। কিন্তু অনুভূতি অসাড়তায় পরিপূর্ণ।
অনুষ্ঠানের শেষ দিকে হঠাৎ মায়ের ফোন, “তুমি কি কোনো পুরস্কার পেয়েছে?” জিজ্ঞেস করলাম, কেমনে জানলা। মা বললেন, “হাসপাতালের নার্স ও ডাক্তারেরা বলাবলি করছিল।” বললাম, হ্যাঁ, মা পুরস্কার পেয়েছি। মা বললেন, “কোথায় গেছ তুমি? কই আমাকে তো কিছু বলোনি।” মা, তুমি অসুস্থ, তাই বলিনি। “যাক, তুমি পুরস্কার পেয়েছ, আলহামদুলিল্লাহ। এখন একটা ছবি তুলে ফেসবুকে দাও।” তারপর দিলাম। মা ভীষণ খুশি হয়েছেন। এটাই আসলে আনন্দের!’
মা সবচেয়ে বড় প্রেরণা
১৩ বছর আগে লাক্স–চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় নাম লেখান অর্ষা। কলেজজীবন শেষ করে তখন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির অপেক্ষা। নানা ধাপ পেরিয়ে তৃতীয় রানারআপ হন। শুরু থেকেই মা তাঁকে প্রেরণা দেন। কিন্তু বাবা খুব একটা পছন্দ করতেন না। কারণ হিসেবে বলতেন, এখানে মেয়েদের প্রতি খুব একটা শ্রদ্ধা দেখানো হয় না। আর ভবিষ্যৎও নেই, ক্যারিয়ার নেই।
অর্ষা বললেন, ‘মা খুব আধুনিক মানসিকতার ছিলেন। তিনি বলতেন, শাবানা, ববিতা, কবরীরা ক্যারিয়ার গড়েছেন। তাঁদের তো অনেক সম্মান। আমরাও তো অনেক শ্রদ্ধা করি। আমারও কেন জানি মন সায় দিচ্ছিল না খুব একটা। মা–ই তখন আমার সঙ্গে সময় দিতেন। এটা–ওটা করতে বলতেন। লাক্স–এ যাওয়ার পর যখন অ্যাড আসা শুরু করল, বাবাও একটু একটু সাপোর্ট দিতে থাকলেন। তিনি শুরুতে ভেবেছিলেন, আমি টিকব না। খামোখাই যাচ্ছি, প্রথম দিনই ফেরত আসব। এরপর মন খারাপ হবে, পড়াশোনা নষ্ট হবে। কিন্তু প্রতিটি রাউন্ডে যখন টিকছিলাম, তখন আব্বুকে তাঁর বন্ধুবান্ধব আর পরিচিতজনেরা বলতে শুরু করলেন, আপনার মেয়েকে টিভিতে দেখলাম। তখন ভালো লাগা শুরু করল। তবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় প্রেরণা মা।’
জমে আছে চিত্রনাট্য
দেড় বছরের বেশি সময় ধরে সপ্তাহে দুই দিন ধরে অর্ষার মায়ের ডায়ালাইসিস চলছে। শরীরে তাঁর আরও নানা জটিলতা বাসা বেঁধেছে। তাই শুটিং শেষে এখন মায়ের দেখভাল করাটাই তাঁর আসল কাজ। সময় সুযোগ পেলে পাহাড়, সমুদ্রের কাছে ছুটে যাওয়া অর্ষার এখন মায়ের ডায়ালাইসিসের জন্য হাসপাতালে থাকা লাগে। বললেন, ‘বেশ কিছু কাজ করার কথা ছিল। বাসায় অনেকগুলো চিত্রনাট্য জমা পড়ে আছে। মায়ের এমন অবস্থায় মনটাও ভালো থাকে না। তাই পড়তেও ইচ্ছা করছে না। এবার মাকে নিয়ে বাসায় ফিরলে হয়তো নতুন কিছু কাজ চূড়ান্ত করব। পরিচালকদেরও তাড়া আছে।’
তবে এরই মধ্যে ওরা সাতজন নামের একটি চলচ্চিত্রের শুটিং শেষ করেছেন অর্ষা। আরটিভি ও এনটিভির একাধিক নাটকের কাজও শেষ করেছেন। বললেন, ‘তিন বোন মিলে মাকে সময় দিচ্ছি। আমি যেহেতু বড়, তাই বেশি ভাবতে হয়। দেড় বছর ধরে এমনটা চলছে। খুব খুশিমনেও যে কাজ করছি, তা না। কোথাও গেলে মন পড়ে থাকে মায়ের কাছে। তাই কোথাও যাওয়াও হচ্ছে না। মায়ের এখন একটা চিন্তা, আমরা তিন বোন যেন মিলেমিশে থাকি। ওদের রেখে যেন আলাদা না থাকি। বিয়েশাদি করলেও ওদের যেন দেখে রাখি।’
ভিন্নধর্মী চরিত্রে
‘নেটওয়ার্কের বাইরে’, ‘সাহস’, ‘জাহান’, ‘কুহেলিকা’—পরপর কয়েকটি ওটিটির কাজে অর্ষাকে ভিন্নধর্মী চরিত্রে দেখা গেছে। এসব চরিত্রের কয়েকটি স্তর আছে। এসব চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসিতও হয়েছেন। ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’ ছবিতে তানিয়ার উপস্থিতি খুবই অল্প সময়ের। কিন্তু পুরো শুটিং বেশ উপভোগ করেছেন। কথায় কথায় অর্ষা এ–ও বললেন, ‘আমি সব সময় বলি, শিল্পীকে স্বাধীন ইচ্ছায় কাজ করতে হয়। শিল্পীদের স্বাধীন ও সাবলীল থাকতে হয়। সে ক্ষেত্রে গল্প বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ভিন্ন ধরনের গল্প বাছাই করি, যে জায়গায় আমার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে, সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারব।’