চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে এবার মুখ খুললেন অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী। নারীদের ওপর হামলা নিয়ে কথা বলেছেন এই অভিনেত্রী। নিজের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে তিনি লিখেছেন, ‘ছোটবেলা থেকে জেনেছি, পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র নারীর গায়ে হাত তোলা সমর্থন করে না। আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থও কখনো নারীর প্রতি সহিংসতা দেখায়নি। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “তোমরা নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।” হাদিসে বলা হয়েছে, “তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক ভালো মানুষ তারাই, যারা নারীদের সঙ্গে সদাচরণ করে।”’
তারপরও এবারের কোটা সংস্কার আন্দোলনে একাধিক নারী শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়। যাকে দুর্ভাগ্যজনক বলে অভিহিত করে মেহজাবীন লিখেছেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য, গণমাধ্যম বা সামাজিক মাধ্যমে আজকাল এর ভিন্ন চিত্র, মর্মান্তিক সব ভিডিও চিত্র দেখতে হচ্ছে। একজন নয়, দুজন নয়, আমারই অসংখ্য বোনের ওপর নির্বিকার ভঙ্গিতে হামলা চালানো হচ্ছে, রক্তাক্ত করা হচ্ছে। কী নির্মম, কী নৃশংস!’
মেহজাবীন আরও লিখেছেন, ‘ন্যায়-অন্যায়ের প্রসঙ্গে পরে আসছি, তবে আমার অবস্থান থেকে বলব, সর্বোচ্চ কোনো যুক্তির অজুহাতেও নারীর প্রতি এই সহিংসতা মেনে নেওয়া যায় না। “না” মানে “না”; কক্ষনো না। ছাত্র-ছাত্রীরা কীইবা করেছিল? তারা তাদের অধিকারের ব্যাপারে সোচ্চার হয়েছিল। কোটা সংস্কারের দাবি তুলেছিল। তা–ই তো? একটি গণতান্ত্রিক দেশে স্বাধিকারের দাবি যে কেউ তুলতে পারে। কিন্তু তা–ই বলে নারীর গায়ে হাত তোলা।’
শুধু নারীর ওপর হাত তোলার প্রসঙ্গেই থেমে থাকেননি মেহজাবীন। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় নিহত হয়েছেন রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ। তাঁর প্রসঙ্গে মেহজাবীন লিখেছেন, ‘আবু সাঈদের মতো সম্ভাবনাময় তরুণকে হত্যা করা, এসব কি সভ্যতার পর্যায়ে পড়ে? সমাধানের অন্য কোনো উপায় কি ছিল না? গুলি কেন করতে হলো? পরিস্থিতি হয়তো আজ কিংবা কাল স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু যে মায়ের বুক খালি হলো, যে পরিবারের মুখের হাসি চলে গেল, আমরা কি সেই শূন্যতা অন্য কিছুর বিনিময়ে পূর্ণ করতে পারব? কক্ষনো না। তা ছাড়া ইতিহাস সাক্ষী; শক্তি যত বড়ই হোক, ছাত্রসমাজের ওপর চড়াও হয়ে যুগে যুগে কেউ কখনো কিছুই অর্জন করতে পারেনি।’
ছাত্রদের ওপর হামলা কখনো শুভ কোনো কিছু বয়ে আনবে না। এটাকে মেহজাবীন বললেন, ‘ব্যর্থ আস্ফালন।’ তিনি লিখেছেন, ‘মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ কিংবা আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা সব সময়ই বুকের ভেতর লালন করি। আমরা গর্ব করি বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের প্রাণের বিনিময়ে আমাদের একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু এই দেশে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করা যাবে না, অধিকারের দাবি তোলা যাবে না, সবকিছুর ঊর্ধ্বে যোগ্যতার পরিচয়টাকেই সবচেয়ে বড় করে দেখা যাবে না, প্রশাসনের চাওয়া-পাওয়ার বিরুদ্ধে গেলেই হামলার শিকার হতে হবে, অকাতরে অকাল প্রাণ বিলিয়ে দিতে হবে—এমন বাংলাদেশের স্বপ্ন কি আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেখেছিলেন? আমার মনে হয় না।’
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়েও প্রসঙ্গে টেনেছেন মেহজাবীন। তিনি লিখেছেন, ‘দুর্নীতি প্রায় সব ইস্যুতেই তো আমরা চুপ থাকি। রক্ষক ভক্ষক হয়ে গেলেও আমরা নীরবে সয়ে যাই। অপেক্ষা করি, হয়তো একটা না একটা সমাধান আসবে। আজ না হলেও দুদিন পরে আসবে। অন্যান্য ইস্যুতে আমরা সামাজিক মাধ্যমেও এতটা সোচ্চার হই না। তাহলে ইদানীং কেন হচ্ছি? কেন কোটা সংস্কার ইস্যুতে দলমত-নির্বিশেষে আমাদের মতো সাধারণ জনগণ সরকারের পদক্ষেপের নিন্দা করছি? কারণ একটাই, কোটা সংস্কার এখন সময়ের দাবি।’
দ্রুত কোটা সংস্কার প্রত্যাশা করেন এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী। ‘ভুলে গেলে চলবে না, আমরা এই সাধারণ জনগণই কিন্তু মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, উড়ালসেতু ইত্যাদিসহ সরকারের অনেক যুগান্তকারী সাফল্যে গর্বিত হয়ে হাততালি দিয়েছিলাম। গালভরা প্রশংসা করেছিলাম। সামাজিক মাধ্যমে সরব হয়েছিলাম। নিশ্চয়ই ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি মেনে কোটা সংস্কার হওয়ার পর আমরা পুনরায় সরকারের পাশে দাঁড়াব। এক পক্ষ হয়ে দেশের সব সমস্যার সমাধান করার জন্য সরকারকে সহযোগিতা করব। সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’ লিখেছেন মেহজাবীন।
একটি দেশের প্রাণ মেধাবী ছাত্র। তাঁদের চাওয়াকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তিনি লিখেছেন, ‘সব কথার শেষ কথা, ছাত্ররা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। দমিয়ে না রেখে তাদের যৌক্তিক দাবিতে সমর্থন দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সর্বোচ্চ আদালতের কাছে আমি মেহজাবীন চৌধুরী আকুল আবেদন করছি। আমার বিশ্বাস, আমরা নিরাশ হব না।’