একটা সময় প্রযোজকদের অভিযোগ ছিল, জোর করেও ঢাকা শহরের বাইরে তারকাদের নাটকের শুটিংয়ে নেওয়া যায় না। যাওয়া–আসায় সময় নষ্ট ও শিডিউলের জটিলতাসহ নানা কারণে তারকারা ঢাকার উত্তরা ও পুবাইলে শুটিং করতেন। সেই চিত্র এখন বদলে গেছে। তারকারা এখন ঢাকার বাইরে শুটিং করছেন; খুলনা, বাগেরহাট, সিলেট, রাঙামাটি, কক্সবাজার, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটেছেন।
‘পথে হলো দেরী’ দিয়ে নতুন আলোচনায় আসেন ছোট পর্দার অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব। নাটকটি ঘিরে আলোচনার বড় ছিল লোকেশন–বৈচিত্র্য। কক্সবাজারের বেশ কিছু জায়গায় নাটকের শুটিং হয়। দর্শকদের লোকেশন পছন্দ হওয়ার খবর অভিনেতা নিজেও শুনেছেন। তিনি বলেন, ‘কাজ দেখে দর্শকেরা চোখের আরাম চায়। ঢাকার কথাই যদি বলি, প্রচুর দর্শক খোলামেলা কোনো জায়গা পর্দায় দেখে আরাম পান। এখন শুনছি, অনেক নাটক ঢাকার বাইরে শুটিং হচ্ছে। এটা ভালো খবর। এর মধ্য দিয়ে দর্শকেরা নতুন গল্প পাবে। নতুন লোকেশন পাবে। ইন্ডাস্ট্রির পরিসর বাড়বে। নতুন দর্শকও তৈরি হবে।’ অপূর্ব ঈদকে টার্গেট করে একটিমাত্র নাটকের শুটিং করেছেন। সেই শুটিং হয়েছে সিলেটের জাফলংসহ বেশ কিছু জায়গায়।
গত বুধবার কথা হয় অভিনেতা তৌসিফ মাহবুবের সঙ্গে। তখন তিনি একটি ঈদনাটকের শুটিংয়ে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘বাইরেই এখন বেশি শুটিং করছি। এই গল্পগুলো ভিজ্যুয়াল লুকের জন্য দর্শকদের অন্য রকম আগ্রহ থাকে। নতুন লোকেশন দর্শক পছন্দ করেন। এটা বেশ ভালো লাগে। এখন অনেক গল্পই পাচ্ছি, যেগুলোর লোকেশন ঢাকার বাইরে।’
ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ঢাকার মধ্যেই নিয়মিত শুটিং করেছেন তরুণ অভিনেত্রী তানজিম সাইয়ারা তটিনী, সাদিয়া আয়মান, আইশা খানসহ আরও বেশ কয়েকজন অভিনেত্রী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিনেত্রী বলেন, ‘শুরুর দিকে যখন কাজে ব্যস্ততা বাড়তে থাকে, তখন অনেকেই আমাকে বলেছিল ঢাকার বাইরে শুটিং এড়িয়ে চলতে। এতে সময় নষ্ট হওয়া, শিডিউল জটিলতা, নিরাপত্তার অভাবসহ অনেক কথা বলা হয়েছিল। পরে কাজ করে আমার কাছে মনে হয়েছে, বৈচিত্র্য আনার জন্য ঢাকার বাইরে শুটিংয়ের বিকল্প নেই।’
ঢাকার বাইরে শুটিং করতে গিয়ে নানা রকম মজার অভিজ্ঞতার মধ্যেও পড়ছেন কেউ কেউ। তাঁদের মধ্যে একজন সাদিয়া আয়মান। বছরের শুরু দিকে প্রথম ঢাকার বাইরে পাবনায় একটি শুটিং করতে গিয়েছিলেন তিনি। সেই অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে বলেন, ‘আমি জানতামই না যে ঢাকার বাইরে আমাকে এত মানুষ চেনেন। যেখানে শুটিং করেছিলাম, সেখানে বহু মানুষ আমাকে দেখার জন্য এসেছিলেন। তাঁরা বলছিলেন, সাদিয়া আইমানকে একনজর দেখবেন। এখন ঢাকার বাইরে শুটিংয়ে গেলে বুঝি, ভক্তরা কতটা ভালোবাসেন।’
আগের চেয়ে ইউটিউবনির্ভর নাটকের চ্যানেলগুলোকে এখন টিকে থাকতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কেউ কেউ জানান, আয় গত এক বছরে অনেক কমেছে। সে ক্ষেত্রে এই লোকসান পোষানোর জন্য তাঁদের বৈচিত্র্যপূর্ণ কাজ করতে হচ্ছে।
সিএমভির স্বত্বাধিকারী শাহেদ আলী বলেন, ‘ঢাকায় একই লোকেশনের একই বাড়ি, একই রাস্তা, একই নাগরিক জীবনযাপন আর কত? এগুলো দর্শক এখন দেখছে না। এখন বাজেট বাড়লেও আমরা বৈচিত্র্য আছে, এমন গল্পে কাজ করতে চাইছি। আমাদের তো একটা নাটক কত মিনিট দর্শক দেখছেন, কত সময় থাকছেন, সেগুলো গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কক্সবাজার, সিলেট, রাজশাহী, খুলনাসহ অনেক জায়গায় শুটিং করেছি।’
ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলার পর্যটন এলাকাগুলো আরও সমৃদ্ধ হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন পরিচালকেরা। রাফাত মজুমদার বলেন, ‘খুলনা, বাগেরহাট, উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর, পঞ্চগড়সহ অনেক এলাকায় ভালো ভালো লোকেশন আছে। কিন্তু ভালো কোনো রিসোর্ট না থাকায় অনেক দূরবর্তী জায়গাগুলো তুলে ধরা সম্ভব হয় না। তা ছাড়া শুটিংয়ে তখন নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কিত থাকতে হয়। এ অবস্থায় যদি সব রকম সুবিধা বাড়ানো হয়, তাহলে আমাদের নিয়মিত ঢাকার বাইরে শুটিং করতে সমস্যা নেই।’