প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিন ঘণ্টার মিটিং জাদুর মতো কাজে লেগেছে তিশার

১৩ অক্টোবর মুক্তি পেয়েছে ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ চলচ্চিত্রটি। শ্যাম বেনেগালের এই চলচ্চিত্রে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। এ ছাড়া মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ সিনেমা নিয়ে বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে গিয়েছিলেন অভিনেত্রী। গতকাল সোমবার বিকেলে কথা হলো তাঁর সঙ্গে

২৮তম বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হয় ৪ অক্টোবর। তার আগেই স্বামী নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও সন্তান ইলহামকে নিয়ে তিনি উড়াল দেন দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান শহরে। ১০ দিনের উৎসব শেষ হয় ১৩ অক্টোবর। তত দিনে দেশের ‘মুজিব’ ছবির প্রচারও চলতে থাকে। বুসানের সমাপনী দিনে ‘মুজিব’ ছবিটি মুক্তি পায়। তাই মুক্তির সময় দেশে থাকতে পারেননি তিশা। তবে উৎসব শেষ হতে না হতেই দেশে ফেরার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে ওঠে তাঁর।

নুসরাত ইমরোজ তিশা
ছবি : তিশার সৌজন্যে

তিশা বলছিলেন, ‘সব সময় মাথায় ছিল, সিনেমাটা মুক্তির পর কেমন প্রতিক্রিয়া পাবে? একরকম ভয়েই ছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ, তেমন কিছুই হয়নি। মুক্তির আগে যেদিন বিশেষ প্রিমিয়ার হয়, সেদিন প্রধানমন্ত্রী দেখলেন। নির্বাচিত দর্শকও ছিলেন। শো শেষে আমাকে কয়েকজন বললেন, “তোমাকে পর্দায় বেগম মুজিব চরিত্রে খুব ভালো লাগছে।” তখনো বিষয়টা নিয়ে এত মাথা ঘামাইনি। ভেবেছি, ফিল্মের সঙ্গে যুক্ত যাঁরা, সবাই তো ভালো বলবেনই। কারণ, অনেক কঠোর পরিশ্রম করে কাজটা শেষ করতে হয়েছে আমাদের।’

নুসরাত ইমরোজ তিশা

তবে বিষয়টা এখানেই শেষ হয়নি। এবার আর ছবির সঙ্গে যুক্ত কেউ নন, বাইরের মানুষের কাছ থেকেও প্রশংসা পাচ্ছিলেন এই অভিনেত্রী।

তিশা বলেন, ‘পরদিন এমন অনেকেই ফোন করেছেন, যাঁরা স্ত্রীদের সঙ্গেও কথা বলিয়ে দিয়েছেন। বলেন, “আমার বউ আপনার সঙ্গে কথা বলতে চায়।” সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমি যেহেতু খুব একটা সক্রিয় নই, সরয়ার আর আমার বোন বেশ কিছু স্ক্রিনশট পাঠাল। দেখলাম, অনেকে আমাকে নিয়ে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। ভালো বলছেন। প্রশংসা করছেন। তখন দেশে আসার জন্য মন আনচান করছিল। মনে হচ্ছিল, এখনই চলে আসি। আমাকে সবাই যেভাবে ভালোবাসা দিচ্ছেন, প্রশংসা করছেন, এটা দেশে বসেই উপভোগ করি। সবকিছু মিলিয়ে সিনেমাটা ভালো যাচ্ছে। প্রেক্ষাগৃহভর্তি দর্শক। দারুণ অনুভূতি কাজ করছে।’

‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় তিশা

তিন ঘণ্টার ম্যাজিক

২৬ বছরের অভিনয়জীবনে তিশা নানা চরিত্রে কাজ করেছেন। কিন্তু কখনোই এতটা চাপ ছিল না। ২০১৯ সালে যখন ‘মুজিব’ ছবিতে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের চরিত্রের জন্য নির্বাচিত হন, তখন থেকেই প্রাণান্তকর চেষ্টা ছিল, চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার। নানা নিবন্ধ পড়েছেন। কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি কথা বলেছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কাটানো তিন ঘণ্টার একটি সেশন জাদুর মতো কাজ করেছে বলে জানান তিশা। এই সেশনে বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানাও ছিলেন।

তিশার ভাষায়, ‘এই ছবিতে আমাদের যাত্রা লম্বা সময়ের। ২০১৯ সালে আমাদের বাছাই হয়। শুটিং হয়েছে অনেক পরে। এর মধ্যে বই পড়তে হয়েছে। আনিস ভাইকে অনেক জ্বালিয়েছি। তাঁর তো বইও আছে। পড়তে হয়েছে। তারপরও সঠিকভাবে চরিত্রটা ধারণ করা কেন জানি হয়ে উঠছিল না। শুধু আমার নয়, সবার জন্য সবচেয়ে কার্যকর ছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তিন ঘণ্টার লম্বা মিটিং। যেখানে তিনি তাঁর পরিবার সম্পর্কে আমাদের অনেক না বলা কথা বলেন। ওই তিন ঘণ্টায় দুই বোন মিলে আড়াই ঘণ্টা শুধু মায়ের কথা বলেন। দুই বোন মিলে যা বলেছেন, তা আমাদের সবার জন্য জাদুর মতো কাজে এসেছে।’

এক টাকা সম্মানী

প্রতিটা কাজে কমবেশি সম্মানী নিয়ে থাকেন শিল্পীরা। এই ছবিতেও অনেকে তা–ই নিয়েছেন। তবে এ ক্ষেত্রে তিশা নিয়েছিলেন মাত্র ১ টাকা। একই পরিমাণ সম্মানী ছিল মুজিব চরিত্রের অভিনেতা আরিফিন শুভরও।

‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় তিশা ও আরিফিন শুভ

তিশার ক্ষেত্রে কোন ভাবনা কাজ করেছিল জানতে চাইলে বলেন, ‘এক টাকাও নিতাম না। চুক্তিতে লিখতে হবে, তাই নিয়েছি। আমি শুধু ভালোবাসার জায়গা থেকে ছবিটা করতে চেয়েছি। এখন  মনে হয়েছে, যে ভালোবাসার কথা ভেবেছিলাম, তার চেয়ে অনেক বেশি পাচ্ছি। এর চেয়ে বড় সম্মানী কী হতে পারে?’

তিশা জানান, ছবিটি মুক্তির পর এমন সব প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন, যা তাঁকে মুগ্ধ করেছে। তিনি বলেন, ‘যাঁরা ছবিটি দেখছেন, অনেকে এভাবে বলছেন, “আমরা তো বেগম মুজিবকে কাছ থেকে দেখিনি, শুধু কথা শুনেছি। কিন্তু আপনাকে দেখে মনে হয়েছে, আপনিই সেই বেগম মুজিব। আমাদের মনে হয়, বেগম মুজিব বুঝি পর্দার আপনার মতোই ছিলেন। আমরা তাই অনুভব করতে পেরেছি।”’

নুসরাত ইমরোজ তিশা

আবার বুসান

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘টেলিভিশন’ সিনেমার জন্য প্রথম বুসান চলচ্চিত্র উৎসবে যাওয়া হয় তিশার। এরপর দীর্ঘ বিরতি শেষে এবার গেলেন চরকি অরিজিনালস ফিল্ম ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ নিয়ে। উৎসবের কিম জিসোক শাখায় মনোনয়ন পেয়েছিল ছবিটি। বুসানে এবার তিশা ও ফারুকীর সঙ্গে ছিল তাঁদের মেয়ে ইলহাম।

তিশা বলেন, ‘বুসান পৃথিবীর অনেক বড় চলচ্চিত্র উৎসবের মধ্যে একটি। এ রকম উৎসবে যখন দেশের সিনেমা যায়, তখন খুবই ভালো লাগে। এবার তো বাংলাদেশি ছবি কয়েকটি বিভাগে আমন্ত্রণ পায়। বাংলাদেশ থেকে ইকবাল (হোসাইন চৌধুরী) ভাই ‘বলী’ ছবির জন্য পুরস্কারও পেয়েছেন। খুবই ভালো লাগছে।’

২৮তম বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যাত্রা শুরুর সময় উড়োজাহাজের ভেতরে তিশার সেলফিতে এভাবেই দেখা গেছে ফারুকী ও ইলহামকে

এদিকে ‘অটোবায়োগ্রাফি’তে প্রথমবার ফারুকী ও তিশা একসঙ্গে অভিনয় করলেন। বুসানে ছবিটির প্রিমিয়ার হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিশা বলেন, ‘অভিনয়, লেখা মিলিয়ে আমার কাছে এই সিনেমা অনেক স্পেশাল। সরয়ার পরিচালনা করেছে, সহশিল্পী হিসেবেও ছিল। সত্যি বলতে, অনেকগুলো খুশির বিষয় ছিল। বুসানে অনেকেই ছবিটার প্রশংসা করেছেন। সবচেয়ে ভালো লেগেছে, অন্য ভাষার মানুষ তাঁরা, বাংলাটা তো বোঝেন না; সাবটাইটেল পড়ে বাংলাদেশি মুভি ও বিশ্বের আরও ছবির প্রশংসা করার বিষয়টা আমাকে অনেক মুগ্ধ করে।’

২৮তম বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও নুসরাত ইমরোজ তিশা

প্রেরণা

বুসানের মতো চলচ্চিত্র উৎসব অনেক বেশি অনুপ্রেরণার বলে মনে করেন তিশা। তিনি বলেন, ‘যখনই কোনো উৎসবে ছবি যায়, বিভিন্ন দেশের দর্শক ছবিটি নিয়ে কথা বলেন, তখন তা একজন শিল্পীর জন্য সত্যিই প্রেরণার হয়ে ওঠে। এদিকে, মা হওয়ার পর এটা আমার প্রথম ছবি।  তাই নিজেকে আবার ঝালিয়ে নিলামও। তিন বছর কোনো কাজ করিনি। এটা দিয়ে শুরু। উৎসবে গিয়ে আবারও কিছু কাজ করার অনুপ্রেরণা পাচ্ছি।’

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও নুসরাত ইমরোজ তিশা

অভিনেতা ফারুকী যেমন

১৩ বছরের সংসারজীবন ফারুকীর সঙ্গে তিশার। এ সময় ফারুকীর পরিচালনায় অনেক কাজ করেছেন। কিন্তু কখনোই তাঁকে সহশিল্পী হিসেবে পাননি। প্রথমবার পেলেন। অভিনেতা হিসেবে ফারুকী কেমন ছিলেন?

তিশা বলেন, ‘অভিনেতা ফারুকী তো ফাটিয়ে দিয়েছে। মনেই হয়নি ওর প্রথম অভিনয়। একজন সহশিল্পী হিসেবে সে আমাকে সাহায্য করেছে এবং খুবই ভালো কাজ করেছে। কিন্তু এখন তো আমার ঈর্ষাও হচ্ছে। না জানি আবার অন্য কোন শিল্পীর সঙ্গে কাজ শুরু করে (হাসি)।’

নুসরাত ইমরোজ তিশা