একসময় ঈদনাটক মানেই ছিল কমেডিনির্ভর। প্রয়োজনে–অপ্রয়োজনে হাস্যরসাত্মক গল্পের দিকে ঝোঁক ছিল প্রযোজক, নির্মাতা ও টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের। দীর্ঘ সময় ধরে চলছে কমেডি ও রোমান্টিক ঘরানার নাটক। সেই ধারা এবার পরিবর্তিত হতে চলেছে বলে জানা গেল। ঈদনাটকে প্রাধান্য পাচ্ছে বাস্তবতানির্ভর সমসাময়িক গল্প। সেসব গল্পে উঠে আসছে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের মানবিক গল্পগুলো।
কয়েক বছর আগেও ঈদে ‘যমজ’, ‘সেই রকম চা–খোর’, ‘সিকান্দার বক্স’সহ একাধিক নাটকে দর্শকেরা বিনোদিত হয়েছেন। গত কয়েকটি ঈদেও ‘জায়গায় খায় জায়গায় ব্রেক’, ‘পিনিকম্যান সিকুয়েল’, ‘মাথা গরম জামাই’সহ একাধিক নাটক দেখা গেছে ঈদে। এবার দৃশ্য কিছুটা বদলাচ্ছে, নাটকে কমেডি গল্পের পাশাপাশি যোগ হচ্ছে মানবিক গল্প। অভিনেতা মোশাররফ করিম বলেন, ‘ঈদ এলে ঘুরেফিরে নাটকের দর্শকেরা কমেডি গল্প পছন্দ করেন। এই গল্পগুলোও কিন্তু মানবিক। এর সঙ্গে অর্থ যুক্ত আছে। নিছক কোনো গল্প নয়। এই গল্পে নানা রকম বার্তা থাকে। দর্শক উপকৃত হন। সেই কাজের জায়গায় এবার বেশ কিছু গল্পে কমেডির পাশাপাশি মানবিক বিষয়গুলো বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। জীবনবোধের এই গল্পগুলোও দর্শকেরা পছন্দ করছেন।’
দীর্ঘ সময় ধরে একের পর এক কমেডি নাটকে অভিনয় করেছেন নিলয় আলমগীর। তাঁর নাটকের মান নিয়ে ভক্তদের দীর্ঘদিন অভিযোগ ছিল। কিন্তু নাটকগুলোর দর্শক–চাহিদা বেশি থাকায় একই ঘরানার নাটক থেকে বের হতে পারেননি নিলয়। প্রায়ই কমেডির ভিড়ে কিছু সমাজবাস্তবতা–সম্পর্কিত পারিবারিক গল্পে অভিনয় করলেও সেগুলোর ভিউ কম হতো। পরে দর্শকদের চাহিদার কারণে কমেডি নাটক করলেও নতুন বছরে জীবনবোধের গল্পের দিকে ঝোঁকেন এই অভিনেতা। শুরুতেই পৈতৃক সম্পত্তিতে বোনের অধিকার নিয়ে নাটক মামার বাড়ি। ভাইয়ের কাছ থেকে জমি বুঝে নিতে গিয়ে বোনকে নতুন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। মানবিক এই গল্পের ভাই–বোনের বেশ কিছু দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
এসব নাটকে নিলয়ের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি জুটি হয়েছেন জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি। তিনি বলেন, ‘পরিবর্তনের সূচনাটা নিলয় ভাইয়ের। ভিন্ন কিছুর জন্য তিনিই প্রথম পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। শুরুতেই আমরা সফল হয়েছি। ঈদের ছয়–সাতটি নাটকে আমরা জুটি হয়েছি। এসব গল্পে যেমন কমেডি রয়েছে, তেমনি মানবিক গল্পগুলোও প্রাধান্য পাচ্ছে।’
‘জায়গায় খায় জায়গায় ব্রেক’ নাটকের জনপ্রিয়তার পর এবারের ঈদে মোশাররফ করিম ও তানিয়া বৃষ্টি জুটিকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে জায়গায় ব্রেক। নাটকটির নির্মাতা জাকিউল ইসলাম বলেন, ‘দর্শকদের রুচি এখন বদলে যাচ্ছে। কদিন আগে ভাত নামে একটি সিরিয়াস গল্প নির্মাণ করেছিলাম, সেটি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি দর্শক দেখেছে। কিন্তু আমরা মনে করি, দর্শক শুধু কমেডি চায়। এই ধারার এবার পরিবর্তন আসছে। আমি পাঁচটি নাটক বানিয়েছি, সব কটি সিরিয়াস গল্প। কারণ, দর্শকের চাহিদাই এখন সমসাময়িক ঘটনার দিকে।’ পরিচালক রাফাত মজুমদার বলেন, ‘আমি এর আগেও পরিবারকেন্দ্রিক মানবিক গল্প বানিয়ে প্রশংসা পেয়েছিলাম। এখন দর্শক সিরিয়াস গল্প পছন্দ করছে। এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি সব কটি সিরিয়াস গল্প করার। প্রযোজকেরাও আগ্রহ দেখাচ্ছে। দর্শকদের রুচি পরিবর্তিত হলে সবাই সেদিকে যাবে, এটাই স্বাভাবিক।’
কেন দেখা হলো না, নরসুন্দরী, মাস্তান, নূর, নয়নতারা, ‘রূপকথা’, রোদ বৃষ্টির গল্প’সহ পাঁচ শতাধিক নাটক প্রচারের অপেক্ষায় রয়েছে। রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার বিষয়; এলাকার সমসাময়িক মাস্তানের বাজে কাজ ও তার প্রভাব; হারিয়ে যাওয়া প্রেম দীর্ঘদিন পর ফিরে আসা; সংসারের হাল ধরতে সেলুনে কাজ করা নারীর সংগ্রাম—বাস্তবমুখী এমন সব গল্প দিয়েই এবার অনুষ্ঠান সাজাচ্ছে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের মহাব্যস্থাপক আলফ্রেড খোকন বলেন, ‘দর্শকেরা সব সময় যে গল্পগুলো পছন্দ করেন, সেই গল্পগুলোই আমরা দেখানোর চেষ্টা করি। এখন জীবনমুখী গল্পগুলো দর্শক বেশি দেখছেন। আমরা একটা ব্যালান্স করে সব শ্রেণির দর্শক ধরতে চাই। এবারও আমাদের নাটকে বৈচিত্র্য রয়েছে।’