ডিপজল-মিশা নতুন প্যানেল, কেন নির্বাচনে আসছেন না জায়েদ খান

ডিপজল ও মিশা। ছবি: ফেসবুক
ডিপজল ও মিশা। ছবি: ফেসবুক

দুই বছর পর আবার শুরু হয়েছে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি নির্বাচনের দৌড়ঝাপ। দুই বছর মেয়াদি শিল্পীদের এবার কারা নেতৃত্ব দেবেন, সেটা নিয়ে এখন তুমুল আলোচনা সিনেমাপাড়ায়। বেশ কিছু প্যানেলের কথা শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে শিল্পী সমিতির নির্বাচনে গত পরিষদের আলোচিত জায়েদ খান এবার সরে দাঁড়াচ্ছেন। অন্যদিকে গত বছর প্যানেলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ইলিয়াস কাঞ্চন ও নিপুণের শপথ অনুষ্ঠানে শপথ পড়াতে গিয়েছিলেন মিশা। এবার সেই মিশা সওদাগরকে নিয়ে নতুন প্যানেল করছেন মনোয়ার হোসেন ডিপজল। প্রশ্ন উঠে, দুই খল অভিনেতার কারণেই কি জায়েদকে সরে যেতে হলো?

গত নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে একের পর এক জটিলতা তৈরি হয়। প্রথম দিকে জায়েদ খান নির্বাচিত হলেও পরে এই ফলাফল মেনে নেননি আরেক সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী নিপুণ আক্তার। তিনি মামলা করেন। নির্বাচন কমিশন পরবর্তীকালে নিপুণকে জয়ী করে। জায়েদ খানও মামলা করেন। পরবর্তী সময় শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিয়ে একের পর এক আইনি জটিলতা তৈরি হয়।

জায়েদ খান। ছবি: সংগৃহীত

কেউ সাধারণ সম্পাদক পদ ছাড়তে চাননি। এর মধ্যে সবশেষ গত দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন নিপুণ। কিন্তু শেষ মুহূর্তেও সাধারণ সম্পাদক পদ ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে প্রত্যাশী ছিলেন জায়েদ খান। অবশেষে মেয়াদ শেষ হলে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে চেয়েছিলেন। এর মধ্যেই শোনা যাচ্ছে জায়েদ এবার নির্বাচন করবেন না। তাহলে কি নিজেদের মধ্যে কোনো মান–অভিমানের তৈরি হলো?

মান–অভিমানের প্রশ্ন আসার কারণ, জায়েদ খান কিছুদিন আগেও জানিয়েছিলেন নির্বাচন করবেন। তাঁদের প্যানেল প্রস্তুতের কথাও জানিয়েছিলেন। এখন কেন ডিপজল ও মিশার জন্য সরে দাঁড়াচ্ছেন জায়েদ? কথার শুরুতেই ডিপজল বলেন, ‘জায়েদ আর কি মান–অভিমান করবে। ও তো আমাদের ছেলে। বলছে নির্বাচন করবে না। এখানে মান–অভিমানের কিছু নেই। ও নিজ থেকেই সরে দাঁড়াচ্ছে। এখন ও কি কারণে নির্বাচন করবে না, সেটা তো আমরা জানি না। আবার আমাদের একটি প্যানেল থাকা দরকার। এখন ওকে ছাড়াই আমরা প্যানেল চূড়ান্ত করেছি।’

অভিনেতা মিশা সওদাগর। ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ এক দশক ধরে কাজের চেয়ে শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়েই বেশি আলোচনায় এসেছেন জায়েদ খান। গত বছর নির্বাচন ঘিরেই ভাইরাল হয়েছেন। বেড়েছে জনপ্রিয়তা। সেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয় কৌতূহলী এই অভিনেতার সহকর্মী ও ভক্তরা। কেউ কেউ বলছেন, ‘জায়েদ খান কি তাহলে মাইনাস হতে যাচ্ছেন?’, ‘তা না হলে কেন সরে দাঁড়াচ্ছেন’ সেই প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসছে। এ নিয়ে সরাসরি জায়েদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নির্বাচন নিয়ে এর আগে অনেক সময় দিয়েছি। ব্যক্তিগতভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। পরিবারকে সময় দিতে পারিনি। এর মধ্যে মা-বাবাকে হারিয়েছি। এখন আমার অভিভাবক বোন। তিনিসহ পরিবারের অনেকেই চাইছেন না নির্বাচনে যাই। পরে আমি নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে।’
গত বছর নির্বাচনের পর সাধারণ সম্পাদক পদ ঘিরে জটিলতা তৈরি হলে আদালতের শরণাপন্ন হতে হয়। সেখান থেকে নির্বাচিত জায়েদ খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে সাধারণ সম্পাদক পদে নিপুণকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। সেই নির্বাচনে মিশা ও জায়েদ খান প্যানেল হয়েছিল। পরবর্তী সময় প্রতিপক্ষ প্যানেল সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন ও সাধারণ সম্পাদক নিপুণদের শপথ অনুষ্ঠান বয়কট করে মিশা-জায়েদ প্যানেল। সেই শপথ অনুষ্ঠানে এসে চমক সৃষ্টি করেন মিশা সওদাগর। এই নিয়ে মিশা-জায়েদ প্যানেলের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়। সেই মিশাকে এবার দেখা যাবে একই প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক পদে।

গত নির্বাচনে শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে চমক দেখান মিশা। ছবি: প্রথম আলো

ডিপজল জানালেন, কোনো কিছুই কোনো প্রভাব ফেলবে না। তাঁদের মধ্যে কোনো মান–অভিমান নেই। দূরত্ব নেই। ভুল–বোঝাবুঝি নেই। সবাই তাঁরা এক হয়েছেন। তাঁদের উদ্দেশ্য আগামী নির্বাচন। ডিপজল বলেন, ‘গত দুই বছর শিল্পী সমিতির অবস্থা করুণ ছিল। এই সমিতি কি আমরা চেয়েছিলাম? এফডিসির দিকে এখন আর তাকানো যায় না। সবাই যেখানে দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি পিছিয়েছে। আমি এমনিতেই কিছুটা অসুস্থ। চোখসহ বেশ কিছু সমস্যা। এটাই হয়তো শেষ নির্বাচন।’
এবার নির্বাচন করার ইচ্ছা না থাকলেও শিল্পী সমিতির সদস্যদের জন্য নির্বাচনে এসেছেন, এমনটাই জানালেন ডিপজল। আরও জানান, দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে প্যানেল তৈরি করছেন। শিল্পীদের অধিকার সুরক্ষার জন্য তিনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তিনি মনে করেন, নির্বাচনে সবাই তাঁকে ভোট দেবেন।

ডিপজল বলেন, ‘এখন উৎসব ছাড়া ছবি কই। কোনো ছবি চলে? এখন আমরা বিদেশি সিনেমার ওপর নির্ভর হয়ে যাচ্ছি। এর আগেও চুক্তি হয়েছিল। আমরা সেটা বাদ দিয়েছিলাম। কারণ, নিজেদের কোমর শক্ত না করে আমরা সিনেমা আনার পক্ষপাতি নই। আমাদের আগে উঠে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু সেই অবস্থায় এখন শিল্পী সমিতির ভূমিকা নেই। দুই বছর ধরে শুনছি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আসবে, এই করবে, সেই করবে, কথার ফুলঝুরি। কিন্তু কেউ কিছুই দেখলাম না। আমি শেষ চেষ্টা করব শিল্পীদের জন্য কিছু করে যেতে। এই জন্য নির্বাচন করছি। খুব শিগগির প্যানেল ঘোষণা করব।’