ভয়াবহ বন্যায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় লাখো মানুষ মারাত্মকভাবে বিপদগ্রস্ত। দেশের এসব বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এগিয়ে এসেছেন, আসছেনও। ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিপদগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় রাতদিন কাজ করে যাচ্ছে। বন্যাকবলিত এলাকায় যেতে না পারলেও কেউ কেউ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সহযোগিতা করছেন। বিনোদন অঙ্গনের মানুষেরাও বন্যায় আক্রান্ত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন। দুর্গত এলাকায় অনেকের সঙ্গে ত্রাণ নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন ছোট পর্দার অভিনেত্রী সামিরা খান মাহিও। ২০ জনের একটি দল মিলে গত শুক্র ও শনিবার ফেনীর ১ নম্বর ইউনিয়নে বন্যার্ত প্রায় ৪০০ পরিবারকে ত্রাণসহায়তা দিয়েছেন মাহি। দুই দিন কাজ করার পর গত রোববার ভোরে ঢাকায় ফিরেছেন তাঁরা।
এ ব্যাপারে মাহি বলেন, ‘টেলিভিশন ও ফেসবুকে বন্যার্ত মানুষের অবস্থার ভয়াবহতা দেখে মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। হাজার হাজার ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। লাখ লাখ মানুষের অনিশ্চয়তা জীবন।
এমন করুণ পরিস্থিতি দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। আমার কাছে মনে হয়েছে, যদি আমার পরিবার এমন অবস্থায় পড়ত, তাহলে? আমরা তো মানুষ। একই দেশে বাস করি। বিপদ–আপদে একে–অপরের পাশে না দাঁড়াতে পারলে নিজেকে মানুষ হিসেবে দাবি করতে পারি না।’
মাহি জানান, ফেনী শহরে ঢোকার আগে ১ নম্বর ইউনিয়নের একেবারে ভেতরের দিকের গ্রামে তাঁরা ত্রাণ বিতরণ করেছেন। ফেনী শহরে অনেক আশ্রয়কেন্দ্র আছে। সেসব জায়গায় পর্যাপ্ত খাবারও পাচ্ছেন আশ্রয় নেওয়া লোকজন।
তিনি বলেন, ‘আমার এক পুলিশ অফিসার বন্ধুর তথ্যমতে ১ নম্বর ইউনিয়নের ভেতরে অজপাড়া গ্রামে গিয়েছিলাম। ঢাকা থেকে আমরা ২০ জনের টিম ছিলাম। সঙ্গে স্থানীয় কিছু মানুষ আমাদের সহযোগিতা করেছেন। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে কোমরপানিতে হাঁটতে হয়েছে। এরপর নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে ত্রাণ দিয়েছি। ওই এলাকাতে আগে তেমন ত্রাণ পৌঁছায়নি। এলাকাটিতে দুই দিন ধরে কাজ করেছি। আমরা ৪০০ পরিবারকে ত্রাণ দিতে পেরেছি।’
অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে মাহি বলেন, ‘আমি সাঁতার জানি। এটি একটি সাহসের ব্যাপার ছিল। তা ছাড়া এমন দুর্যোগ এলাকাতে কাজ করা একজন নারীর জন্য কঠিনই। তবে সেখানে শিশু ও বয়স্কদের করুণ অবস্থা দেখে আমি নিজেকে আর নারী-পুরুষ আলাদা ভাবিনি। মনে হয়েছে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।’
মাহি জানান, নিজেদের পরিবার–পরিজন থেকেই ফান্ড গঠন করে বন্যার্ত ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিজ উদ্যোগেই ফান্ড করেছিলাম। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছোট ভাই-বোন আমার সঙ্গে যুক্ত হয়। এ ছাড়া নাটকের কয়েকজন সহকারী পরিচালকও আছেন।’
মাহি আরও বলেন, ‘ঢাকায় ফিরে এখন আরও ফান্ড সংগ্রহ করছি। দুই দিনের মধ্যে ত্রাণ নিয়ে কুমিল্লা ও নোয়াখালীতে যাব। এবার এক হাজার অসহায় পরিবারে ত্রাণসহায়তা দিতে চাই।’