শারীরিক জটিলতার কারণে মা হতে পারবেন কি না, এই প্রশ্নই দুই বছর আগে ঘুরেফিরে আসছিল। দেশের চিকিৎসকেরা বলে দিলেন, মা হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা। নিজেকে সুস্থ রাখতে হবে। ভারতে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। তাঁরাও সাবধানে থাকতে বলেন। শারীরিক অসুস্থতায় যখন মা হওয়ার চিন্তা বাদ দিতে হয়েছে, তখন জানতে পারেন, মা হতে চলেছেন। এমন খবরে যেন নদীর পৃথিবীটাই বদলে যায়।
তাসলিমা হোসেন নদী জানান, দেশের চিকিৎসকেরা তাঁকে জানিয়েছিলেন জরায়ু ক্যানসারে আক্রান্ত তিনি। জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকেরা বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দেন, আপাতত কেমোথেরাপি দেওয়া হবে না তাঁকে।
এই অভিনেত্রী বলেন, ‘যখন আমাকে বলা হলো হয়তো আমি মা নাও হতে পারি। তখন নিজের সুস্থতার কথা বেশি ভাবতে হয়েছে। বাস্তবতা মেনে নিতে হয়েছিল। ধরেই নিয়েছিলাম, মা যদি হতে না পারি, তাহলে হয়তো পরবর্তী সময় সন্তান দত্তক (অভিভাবকত্ব) নেব। শারীরিক জটিলতার মধ্যে মা হতে পেরেছি, এটা আমার জীবনের অন্যতম একটা অর্জন। জীবন নিয়ে নতুন করে উপলব্ধি হলো। আমার মতো অসুস্থতা নিয়ে খুব কম মেয়েই মা হতে পারেন। এটা চিকিৎসকদেরও অবাক করেছে।’
অভিনেত্রী নদীর সন্তানের নাম মুসা। ওর বয়স প্রায় ২মাস। ছেলেকে নিয়েই দিন কাটছে এই অভিনেত্রীর। এর মধ্যে মা দিবসটাই নতুন করে ভাবাচ্ছে। ‘আমি ২৫ বছর বয়সে মা হয়েছি। হয়তো আমি সুস্থ থাকলে আরও পরে বাচ্চা নিতাম। এখন মা হওয়ার কারণে সারাক্ষণ ছেলেকে নিয়েই সময় কাটছে। আমি নিজেই পুরোটা বদলে গেছি। আমি ছিলাম পরিবারের সবচেয়ে ছোট সন্তান। বাচ্চা ধরতেই পারতাম না, কোলে নিতে পারতাম না। আমাকে নিয়েই পরিবারের সবার চিন্তা থাকত। এখন আমি সারাক্ষণ সন্তানকেই নিয়েই ভাবি। এবার মা দিবসটাই আলাদা হয়ে এল,’ বলেন নদী।
নিজের মতো করেই সন্তানকে মানুষ করতে চান। সেভাবে নতুন এই মায়ের সময় কাটছে। সময় পেলেই মা-ছেলে বেরিয়ে পড়েন। নদী বলেন, ‘মা হওয়ার খবর শোনার পরে তিন মাস মানসিকভাবে খারাপ সময়ের মধ্যে যাচ্ছিল। পরে মনে হলো এর প্রভাব আমার সন্তানের ওপর পড়বে। সেই থেকেই আমার নতুন জার্নি শুরু হলো। আমি তখন বাইরে বের হতাম, মঞ্চনাটকেও অংশ নিতাম। আমি কুসংস্কারে কান দিইনি। সব সময় সন্তানকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করেছি। শুধু মা দিবসই নয়, সব সময় আমাকে একটা জার্নির মধ্যে থাকতে হয়। মা আমাকে নিয়ে আগে যেভাবে চিন্তা করতেন, এখন আমাকে সেই চিন্তাগুলো করতে হয়।’
ক্যারিয়ার শুরুর পরপরই অন্তঃসত্ত্বা হন। এই সময়ে তাঁর বেশ কিছু শুটিংয়ে অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই সময়ে আর দীর্ঘমেয়াদি কোনো কাজ করেননি। একটা সময় অভিনয় থেকেই দূরে সরে যান। তিনি বলেন, ‘আমার অভিনয় আর মডেলিং ক্যারিয়ার মাত্র শুরু হচ্ছিল। ভালো সময় পার করছিলাম। এমনও হয়েছে, এক বছর ধরে আমি অডিশন দিয়ে সুযোগ পেয়েছি। সেই কাজ ছাড়তে হয়। হঠাৎ কাজ থেকে দূরে থাকা কষ্টের ছিল। পরে সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়েছে। এখন আরও সময় নিচ্ছি। অভিনয়ে ফেরার জন্য আরেকটু সময় নিতে চাই।’
তাসলিমা নদীর অভিনয় ক্যারিয়ার খুবই অল্প সময়ের। এই সময়েই তিনি ওয়েব সিরিজ ‘ইন্টার্নশিপ’, ‘পেট কাটা ষ’সহ বেশ কিছু কাজ করে আলোচনায় আসেন।