উপস্থাপনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌসুমী মৌ। পাশাপাশি চলছে টিভি নাটকের কাজ ও মূকাভিনয়। এই মূকাভিনয় নিয়েই সম্প্রতি ঘুরে এলেন দক্ষিণ কোরিয়া। এসব নিয়ে গতকাল রোববার দুপুরে মোবাইলে তাঁর সঙ্গে কথা বলল ‘বিনোদন’
আপনার ফেসবুকে প্রায়ই বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপস্থাপনার ছবি দেখা যায়। কাজটা কেমন উপভোগ করেন?
উপস্থাপনায় আমি নিজেকে খুঁজে পাই, এটা আমার নেশা ও পেশা দুটিই। আমি আমার কাজ উপভোগ করি। তাই কখনো মনে হয় না, কাজ করছি। আনন্দ নিয়ে উপস্থাপনা করতে করতে সময় পার হয়ে যায়। এখন স্টেজ শো কম। গত দুই মাস আইপিএল উপস্থাপনা নিয়ে খুব ব্যস্ত সময় গেছে। আজ (রোববার) আইপিএল ফাইনাল হলো। এবার আমি টি-স্পোর্টস এবং জিটিভিতে দুটি শো করেছি। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও টেলিভিশনে আমার নিয়মিত ছয়টি শো প্রচারিত হচ্ছে। জুনের প্রথম সপ্তাহে শুরু করব আমার খুবই পছন্দের একটি অনুষ্ঠান, এ মুহূর্তে নাম বলা বারণ আছে। এরপর শুরু করব উইমেন্স সুপার লিগ, সরাসরি মাঠ থেকে চারটি শো করব, আগে ও পরে। ব্যস্ত থাকতেই আমার ভালো লাগে।
কখনো কি ভেবেছিলেন, উপস্থাপনায় নিজেকে এমন ব্যস্ত দেখবেন?
না, এমনটা ভাবিনি। তবে যখন উপস্থাপনা শুরু করি, স্বপ্ন দেখতাম একদিন ভালো করব। আমার বাবা একটা কথা প্রায়ই বলতেন, প্লেইন লিভিং হাই থিঙ্কিং। এটা আমি মেনে চলি। স্বপ্ন দেখতে তো দোষ নেই। আমি পরিশ্রম করতে পারি, আর কাজের প্রতি শতভাগ সৎ। পরিশ্রম, সততা ও বিনয় নিয়ে একটু একটু করে পথ চলছি।
কদিন আগে মূকাভিনয় নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া ঘুরে এসেছেন।
অসাধারণ অভিজ্ঞতা। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার দেশটিতে যাওয়া। আগেরবার গিয়েছিলাম ‘এশিয়া সলো পারফরম্যান্স ফেস্টিভ্যাল’–এ। সেবার কোরিয়া থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। এবার গিয়েছি বাংলাদেশ দূতাবাসের আমন্ত্রণে, বাংলা নববর্ষ ১৪৩০ উদ্যাপন অনুষ্ঠানে। মূকাভিনয়ের সঙ্গে এবার নেচেছিও, যা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।
বড় পাওয়া কেন?
ছোটবেলায় আমি এবং আমার ছোট ভাই দুজনে সদরপুরে (ফরিদপুর) মান্নান স্যারের কাছে নাচ শিখতাম। প্রতি মঙ্গলবার শিল্পকলায় ক্লাস শেষে আমাদের বাসায় এসে রাতে ভাইবোনকে স্যার নাচ শেখাতেন। পরদিন চলে যেতেন। স্যার গোপালগঞ্জ থেকে সদরপুর আসতেন। জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় যখন উপজেলা, জেলা পেরিয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে ঢাকায় আসতাম, তখন আব্বু আমাদের দুই ভাই-বোনকে নিয়ে শিশু একাডেমির বারান্দায় ঘুমাতেন। আব্বু ব্যাগ মাথায় আর আমরা দুজন একটা বালিশ মাথায় দিয়ে ঘুমাতাম—যে বালিশটা আমরা ব্যাগে ভরে নিয়ে আসতাম। কারণ, ওই সময়ে ঢাকায় আমাদের কোনো আত্মীয়স্বজন ছিল না। অনেকেই মনে করেন, আমি হুট করে উপস্থাপক হয়ে গেছি। বিষয়টি মোটেও তেমন না। এই আমি একদিনে তৈরি হইনি। উপস্থিত বক্তৃতায় কখনো দ্বিতীয় হইনি, সব সময় প্রথম হতাম। যা–ই হোক প্রসঙ্গে ফিরি, হিসাব করলে ১৩ বছর পর নেচেছি, তা–ও আবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে, যা আমার জন্য পরম আনন্দের। মাঝে প্রথম আলো বন্ধুসভার জাতীয় সমাবেশেও নেচেছি। কোরিয়ায় আমার আইডল সাদিয়া ইসলাম মৌ আপুর কস্টিউম পরে নেচেছি, এটাও অন্য রকম ভালো লাগার। আর ছিল ছোটবেলার সেই ঘুঙুর।
উপস্থাপনার পাশাপাশি টেলিভিশনে আপনাকে অভিনয় করতেও দেখা যায়।
আসলে অভিনয়টাই করতেই চেয়েছিলাম। প্রাচ্যনাট স্কুল অব অ্যাক্টিংয়ের আমি ২৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। প্রাচ্যনাটে যুক্ত হওয়ার আগেই মূকাভিনয়ে যুক্ত হই। কিন্তু ভাগ্য আমার সহায় হয়নি। আমি নাটকে নিয়মিত হতে চাই। তবে সমস্যাটা হয় সময়ের। যেহেতু আমার পেশা উপস্থাপনা, সেদিকে ফোকাস করতে গিয়ে অভিনয়ের সময় মিলে না। আবার সময় মিললেও গল্প ভালো লাগে না। ভালো কাজের সুযোগ পেলে উপস্থাপনার পাশাপাশি অভিনয়ের জন্য সময় বের করব।
চলচ্চিত্রে কাজ করার ইচ্ছে নেই?
অবশ্যই আছে। এই জানুয়ারিতে সরকারি অনুদানের একটি চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেও বাদ দিতে হয়েছে। আমার অনেক কাজের শিডিউল নষ্ট হয়েছে এই সিনেমায় কাজ করতে গিয়ে। জুলাই-আগস্টে আরেকটি সিনেমার শুটিং শুরু করার কথা। মহড়াও করেছি। যদি সব ঠিকঠাকভাবে হয়, তবে এটাই হবে আমার প্রথম সিনেমা।
এখন বিনোদনমাধ্যমে কাজ করছেন। এমনটাই কি স্বপ্ন দেখেছিলেন নাকি কাজ করতে করতে আগ্রহ জন্মেছে?
ছোটবেলায় আমার স্বপ্ন পরিবর্তিত হতো। কখনো ডাক্তার, কখনো পাইলট, কখনো জজ, কখনো শিক্ষক আবার কখনো নায়িকা হতে চেয়েছি। বলিউডের কাভি খুশি কাভি গাম ছবিটি শুধু কারিনা কাপুরের অংশগুলো টেনে টেনে দেখতাম। পরে অবশ্য এ স্বপ্ন ছিল না। ডাক্তার হতে চেয়েছিলাম। এটাকে অনেকটা বাবা-মায়ের চাপিয়ে দেওয়া স্বপ্ন বলা যেতে পারে। এখন কাজ করতে করতে দীর্ঘদিন ধরে লালন করা সুপ্ত স্বপ্নটাকে জাগিয়ে তুলেছি।