‘একটা দুঃখের বিষয় কি জানো, আমার মা মারা গেছে। দোয়া করো, মা যেন সুস্থ হয়ে ফিরে আসে।’ কথাগুলো প্রয়াত অভিনেত্রী রিশতা লাবণী সীমানার সাত বছরের অবুঝ ছেলে শ্রেষ্ঠর। এসব কথা শুনেই বোঝা যায়, মায়ের মৃত্যু সাত বছরের শিশুমন তখনো বুঝতে পারেনি।
অন্যদিকে সীমানার আরেক ছেলে স্বর্গের বয়স ৩ বছর। অভিনেত্রীকে যখন দাফনের জন্য শেরপুরের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন এসবের কিছুই বোঝেনি ওরা। জীবনের অমূল্য সম্পদ হারানো বুঝতে না শেখা এসব শিশু এখন কোথায়, কার কাছে থাকছে!
৪ জুন দুপুর ১২টায় শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে নিয়ে আসা হয় এই অভিনেত্রীকে। সেখানে গণমাধ্যমে মাকে নিয়ে কথা বলে সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয় শিশু দুটি। তাদের মাকে দেখতে বারবার ছুটে যাওয়ার হৃদয়বিদারক দৃশ্যগুলো দেখে কেঁদেছেন অনেকে। একই সঙ্গে ছোট দুই ভাইয়ের একে অন্যকে জড়িয়ে আদর করার দৃশ্যগুলো দেখে উপস্থিত অনেকে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
ছোট দুটি শিশু এখনো তাদের মাকে খোঁজে। কথা হয় শিশুর মামা এজাজ বিন আলীর সঙ্গে। তিনি বোনের অসুস্থতার খবর পেয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে এসেছিলেন। এখনো দেশেই রয়েছেন। শিগগির যেতে হবে যুক্তরাষ্ট্রে।
তিনি বলেন,‘এখনো পারিবারিক ভাবে শোকের আবহেই রয়েছি। শেরপুরে দাফন এবং পরে সেখানে এতিমখানায় মিলাদ মাহফিল করেছি। আমার মা-বাবা এখনো আমাদের এলাকার বাড়িতেই রয়েছেন। আমরাও ছিলাম। পরে ঢাকায় চলে এসেছি। আমাদের পরিবারের সবার বড় ছিলেন আপু। তাঁকে ঘিরেই সব সময় সবকিছু হতো। এগুলো আমাদের খুব কষ্ট দিচ্ছে।’
এদিকে সীমানার বড় ছেলে শ্রেষ্ঠ এখন তার মামা-মামির সঙ্গে থাকছে। এজাজ বলেন, ‘পারভেজ ভাইয়ের সঙ্গে শ্রেষ্ঠ থাকে। ভাইয়া সম্প্রতি কানাডা গিয়েছেন। সেখানে কনসার্ট রয়েছে। সময়টা শ্রেষ্ঠ আমাদের সঙ্গেই থাকবে। পারভেজ ভাইয়ের সঙ্গে শ্রেষ্ঠ থাকলেও মাঝেমধ্যেই সে আমাদের সঙ্গেও থাকে। আমাদের যখন মনে হতো, তখন তাকে নিয়ে আসা হতো। দুই পরিবার মিলেই থাকত। আগে তো আপা ছিল। আপার সঙ্গে থাকত। এখন শ্রেষ্ঠ তার নানা–নানির সঙ্গেও মাঝেমধ্যে থাকবে। এটা নিয়ে কারও কোনো সমস্যা নেই।’
শ্রেষ্ঠকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া–আসা করছেন এজাজ। তিনি জানান, সে এখনো মাকে খুব মিস করে। মাকে প্রায়ই খোঁজে। এজাজ বলেন, ‘শ্রেষ্ঠ মায়ের সঙ্গে খুব কথা বলতে চায়। মাকে কল্পনা করে। আমি স্কুলে দিয়ে আসি, নিয়ে আসি। গতকাল ওকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছি, তখন সে মাকে কল্পনা করে বলছে, “আম্মু বাই”। মাকে খুব মিস করে। দুজনই ভালো থাকুক। মায়ের ইচ্ছা পূরণ করুক। তাদের জন্য দোয়া করবেন।’
সীমানার ছোট ছেলে স্বর্গ। সর্বশেষ মায়ের সঙ্গে শেরপুরে গিয়েছিল দাফনে। পরে ঢাকা ফিরেই সে তার বাবার সঙ্গে থাকছে। এখন স্বর্গের নানা-নানি না থাকায় তাদের বাসায় স্বর্গকে আনা হয়নি। মাঝেমধ্যে নানাবাড়িতেও সময় কাটাবে এটা নিয়ে কোনো সমস্যা নাই বলে জানান এজাজ। তবে দুই শিশুই তাদের বাবার কাছে বড় হবে।
গত ২১ মে রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন সীমানা। সেদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাঁকে দ্রুত ধানমন্ডির বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে জানতে পারেন মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। পরদিন আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য সীমানাকে ধানমন্ডির আরেকটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁকে ঢাকার আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।