বন্যার্তদের সাহায্যার্থে টানা দুই দিন বন্যাদুর্গত এলাকায় ছিলেন অভিনয়শিল্পী সামিরা খান মাহি। এরই মধ্যে তিনি ঢাকায় ফিরেছেন। তবে টিমের কেউ আবার ছুটেছেন বন্যাদুর্গত এলাকায়। অভিনয়শিল্পী মাহি শোনালেন সেই অভিজ্ঞতা।
টেলিভিশন ও ফেসবুকে বন্যার্ত মানুষের ভয়াবহ অবস্থা। কয়েক দিন ধরে চোখে পড়ছিল। এসব দেখে খুব খারাপ লাগছিল নিজের কাছে। শুটিং বা অন্য কোনো কাজে মন বসছিল না। আমার কাছে মনে হয়েছে, যদি আমার পরিবার এমন অবস্থায় পড়ত, তাহলে? আমরা তো মানুষ। একই দেশে বাস করি। বিপদ-আপদে একে অপরের পাশে না দাঁড়াতে পারলে নিজেকে মানুষ হিসেবে দাবি করতে পারি না। এরই মধ্যে দেখলাম আমাদের নাটকের পরিচালক, শিল্পীরাও বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য কাজ করছেন। নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে ফান্ড গঠন করছেন। তত দিনে মিডিয়ার কিছু মানুষ বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে পৌঁছে যাওয়ার খবরও পেলাম। এরপর আমি একটি ফান্ড তৈরির উদ্যোগ নিই। আমার নিজের পরিবারের কয়েকজনকে বললাম। তাঁরাও সাড়া দিলেন। এরপর নাটকের কয়েকজন সহকারী পরিচালকও আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন। এর মধ্যে খবরটি জেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন ছোট ভাইবোন আমার সঙ্গে যোগ দিতে চাইল। সব মিলিয়ে আমরা ২০ জনের একটি টিম হয়ে গেলাম।
নিজেদের সংগ্রহ করা ফান্ড দিয়ে সব বয়সের মানুষের জন্য খাবার কেনাকাটা করলাম। সঙ্গে মোমবাতি, ওষুধ ও লাইট কিনলাম। সবকিছু গুছিয়ে গত শুক্রবার আমরা ফেনীর উদ্দেশে রওনা হই।
ওখানে আমার এক পুলিশ কর্মকর্তা বন্ধু ছিল। পৌঁছানোর পর ওই বন্ধু বলল, ‘ফেনী শহরে অনেক আশ্রয়কেন্দ্র আছে। সেসব জায়গায় প্রচুর ত্রাণ আসছে। কিন্তু ফেনীতে ঢোকার আগে ১ নম্বর ইউনিয়নের ভেতরে এমন কিছু গ্রাম আছে, অনেক দূরের গ্রাম, সেখানে ত্রাণ সেভাবে পৌঁছাইনি।’ বন্ধুর কথা শুনে সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু পুরোটাই পানিপথ। আমরা তো ওই সব গ্রাম চিনি না। স্থানীয় কিছু মানুষকে সঙ্গে নিয়ে লাইফ জ্যাকেট গায়ে রওনা হলাম। কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমরপানি, কোথাও বুকপানি। টানা পাঁচ ঘণ্টা হেঁটেছি। যাওয়ার পর স্বচক্ষে তাঁদের অবস্থা দেখে মনটা আরও খারাপ হয়ে যায়। এভাবে দুই দিন আমরা কাজ করেছি। প্রায় ৪০০ পরিবারে ত্রাণ দিয়েছি।এ ধরনের ভয়াবহ বন্যাদুর্গত এলাকায় নারী স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য ঝুঁকিও আছে।
আমি সাঁতার জানি। এটা একটা সাহসের ব্যাপার ছিল আমরা জন্য। তা ছাড়া এমন দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় কাজ করা একজন নারীর জন্য কঠিনই। তবে সেখানে শিশু ও বয়স্কদের করুণ অবস্থা দেখে আমি নিজেকে আর নারী-পুরুষ আলাদা ভাবিনি। মনে হয়েছে, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। দুই দিন থাকার পর রোববার ভোরবেলা ঢাকায় ফিরেছি।এক দিন বিশ্রাম নিয়ে আবার ফান্ড সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। নিজের পরিবার, আত্মীয়স্বজন—যাঁর কাছে যেভাবে পাচ্ছি, সংগ্রহ করছি। তবে এবার কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠান গুঁড়া দুধ, পানির বোতল, টোস্ট বিস্কুট আমাদের ফান্ডে দিয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপুরে রওনা হব।
এবার আমরা রান্নাসামগ্রী নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে দিয়ে দেব। আর শুকনা খাবার, ওষুধজাতীয় জিনিসগুলো হাতে হাতে বিতরণ করব। এখন পর্যন্ত আমাদের হাতে যা আছে, তাতে এবার এক হাজার অসহায় পরিবারে ত্রাণসহায়তা দিতে পারব। লক্ষ্মীপুরের অজপাড়াগাঁয়ে যাব। বেশি লোক থাকলে একটু সমস্যা হয়। এবার আটজনের টিম নিয়ে যান। স্থানীয় লোকজন বেশি রাখতে চাই। সেভাবেই আমরা যোগাযোগ করছি। স্থানীয় লোকজন সঙ্গে থাকলে পথঘাট চিনতে সমস্যা হয় না। সহজেই বন্যায় আক্রান্ত মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়। গতবার পথঘাট অপরিচিত হওয়ায় পৌঁছাতে সমস্যা হয়েছিল। তাই এবার আমরা যেসব গ্রামে যাব, আগে ওই সব গ্রামের রুট ঢাকায় বসেই ঠিক করে নিচ্ছি।