দেশের নাটক, সিনেমা আর ওটিটির কনটেন্টগুলোর চিত্রনাট্য দলে নারী লেখক খুব বেশি থাকেন না। দেশি কনটেন্টের বিরুদ্ধে অনেক সময় যে বৈচিত্র্যহীনতার অভিযোগ ওঠে, অনেক সমালোচক মনে করেন এর অন্যতম বড় কারণ নারী লেখকের শূন্যতা। তাই বেশির ভাগই গল্প লেখা হয় পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গিতে। এর মধ্যে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম অনামিকা মণ্ডল। এখন পর্যন্ত প্রচারিত হয়েছে তাঁর লেখা ১২০টি নাটক!
নারী লেখক যেহেতু কম, তাই অনামিকার সঙ্গে আলাপের শুরুতেই প্রশ্ন ছুড়ে দিই। উত্তর দিতে গিয়ে বাস্তবতা তুলে ধরলেন তিনি। জানালেন, নারী চিত্রনাট্যকারদের সাংসারিক ব্যস্ততাই এর বড় কারণ।
অনামিকার লেখালেখির শুরুটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়। দৈনিক পত্রিকায় রম্য গদ্য লিখতেন। তাঁর লেখা চিত্রনাট্য থেকে কয়েকটি নাটকও হয়েছিল সে সময়। তবে নিজেরই মনমতো হচ্ছিল না। তাই লেখা বন্ধ করে দেন। বছর পাঁচেক পরে এক ঈদে টিভিতে বিভিন্ন নাটকের প্রোমো দেখার সময় মনে হলো, আবার শুরু করলে কেমন হয়? পরিচালক ওসমান মিরাজ মাঝেমধ্যে ফোন দিয়ে জানতে চাইতেন, নাটক লিখবেন কি না। সব মিলিয়ে একসময় নিজেও সিরিয়াস হলেন।
কী চলছে’ সেটা নজরে রাখেন। বললেন, ‘চাই, আমার প্রতিটি কাজই অনেক ভিউ পাক, ট্রেন্ডিংয়ে আসুক। আমার কাজ ভিউ না পেলে মানে দর্শক না দেখলে আমার খারাপ লাগে।অনামিকা মণ্ডল
২০২০ সালের শেষের দিকে ওসমান মিরাজকে একটি গল্প শোনালেন। গল্প পছন্দ হলো, চিত্রনাট্য না। তিন–তিনবার বদলের পর তুষ্ট হন নির্মাতা। গার্লফ্রেন্ড যখন ভাবি নামের সেই নাটকটিতে অভিনয় করেছিলেন জোভান ও তানজিন তিশা। নাটকটির অনেক ভিউ হয়, চলে আসে ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়েও। এরপর একটার পর একটা প্রস্তাব আসে, বাড়ে ব্যস্ততা। এখন পর্যন্ত অনামিকার লেখা ১২০টির বেশি নাটক প্রচারিত হয়েছে, শুটিং হয়েছে ১৪০টি। এর মধ্যে ‘এমন একটা তুমি চাই’, ‘লাস্ট ফাইভ আওয়ারস’, ‘বন্ধু নাকি শত্রু’, ‘জানরে’, ‘কণা’, ‘বাড়িওয়ালি গার্লফ্রেন্ড’, ‘মিস্টার কুল’, ‘ক্রাশের বিয়ে’, ‘হাসিতে ফাঁসি’, ‘মিস ড্রাইভার’ নাটকগুলো তাঁর বেশি পছন্দ।
অনামিকার লেখা বেশির ভাগ নাটকই কমেডিধর্মী। জানালেন, এ ধরনের চিত্রনাট্যের চাহিদা বেশি, তাঁর নিজেরও পছন্দ; তাই কমেডি নাটকই বেশি লেখেন। অনামিকার লেখা অনেক নাটকেরই নামে ‘বউ’, ‘এক্স’ বা ‘গার্লফ্রেন্ড’ থাকে। এ বিষয় তিনি নিজেও ভেবেছেন। চেষ্টা করছেন যতটা সম্ভব কমিয়ে আনতে। তবে যা তিনি আরও বাড়াতে চাইবেন, সেটা হলো ‘ভিউ’। আলাপে আলাপে অনামিকা জানালেন, নাটকের যেন ভিউ বেশি হয়, লেখার সময়ই সেটা তাঁর মাথায় থাকে। নাটকের বিষয়বস্তুর জন্য চোখ-কান খোলা রাখেন সব সময়, ফেসবুকে ‘কী চলছে’ সেটা নজরে রাখেন। বললেন, ‘চাই, আমার প্রতিটি কাজই অনেক ভিউ পাক, ট্রেন্ডিংয়ে আসুক। আমার কাজ ভিউ না পেলে মানে দর্শক না দেখলে আমার খারাপ লাগে।’
পারিশ্রমিক নিয়ে দেশের লেখকদের অনেক অভিযোগ। অনামিকার অভিজ্ঞতা কী? ‘নাটকের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত অভিজ্ঞতা ভালো, সিনেমার ক্ষেত্রে ভালো না। তবে নাটকের ক্ষেত্রে দু-একটি নেগেটিভ ঘটনা যে ঘটেনি তা নয়। সে ক্ষেত্রে আমি প্রোডাকশন হাউসকে জানালে তাঁরা পাওনা পেতে সাহায্য করেছেন। যাঁরা প্রতিষ্ঠিত পরিচালক, তাঁরা কখনো পারিশ্রমিক নিয়ে ঘোরান না।’
অনামিকা মনে করেন, নাটকে আরও বেশি নারী লেখক যুক্ত হলে সেটা কনটেন্টে আরও বৈচিত্র্য যোগ করবে।