আফজাল হোসেন
আফজাল হোসেন

যে যত বেয়াড়া, সে তত স্মার্ট এই শহরে! ফেসবুকে আফজাল হোসেন

সড়কে জ্যাম, এটা যেন সারা দেশের অন্যতম একটি সমস্যা। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় যাঁরা থাকেন, তাঁদের জন্য তো এটা প্রতিদিনের একটা ভোগান্তির নাম। গেল আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। সড়কে দায়িত্ব পালনের মতো ট্রাফিক সেই অর্থে ছিল না। ওই সময় শিক্ষার্থীরা যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য সড়কে নামেন। কারও কারও মতে, জনজীবনে তা কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। আজ মঙ্গলবার এক ফেসবুক পোস্টে দেশের নন্দিত অভিনয়শিল্পী, নির্দেশক ও চিত্রকর আফজাল হোসেনও উল্লেখ করেন, ছাত্রছাত্রীদের যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে নিয়ম মানতে বাধ্য করার ঘটনা তাঁকে অবাক করেছিল।
ঢাকার ধানমন্ডিতে আফজাল হোসেনের অফিস। সেই অফিস থেকে একদিন তিনি রাস্তায় ছাত্রছাত্রীদের যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণের দৃশ্য দেখছিলেন। সেই ঘটনার বর্ণনা করে ফেসবুক পোস্টে আফজাল হোসেন লেখেন, ‘কিছুদিন আগে যখন ছাত্রছাত্রীরা রাস্তায় নেমে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছিল, সে সময়ে একদিন অফিসে দাঁড়িয়ে তিনতলা থেকে সে নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম অবাক হয়ে দেখছিলাম। দেখছিলাম, আমাদের অনিয়মের শহর ছুমন্তরে নিয়ম মেনে চলতে পারে।’

ঢাকা শহরের সড়কে প্রায় সময়ই দেখা যায় যানবাহনচালকের নিয়ম না মানার দৃশ্য। আফজাল হোসেন সেই অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘মানুষ ও বিভিন্ন ধরনের যানবাহন এই শহরের রাস্তায় কীভাবে চলাচল করে, তা সকলেরই জানা। নিয়ম মানা কারও ধাতে নেই। দীর্ঘকাল ধরে অনিয়ম করতে করতে স্বাভাবিক চরিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে নিয়ম না মানা। যে যত বেয়াড়া, সে তত স্মার্ট এই শহরে।’

আফজাল হোসেন

আফজাল হোসেনে লিখেছেন, ‘রাস্তায় চলাচলের যত রকম নিয়ম আছে, কেউই মানতে পছন্দ করে না, করত না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম, চাইলেই সব পারা যায়। মনে ভেসে ওঠে—বাঙালি শক্তের ভক্ত নরমের যম। যে মানুষ যত উল্টোপাল্টা শহরজুড়ে বীরদর্পে করে থাকে, একই মানুষ ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে চলাচলের সময় চিরকালের ভদ্রলোকের মতো কড়ায়–গন্ডায় নিয়ম মানে। সেদিন ওপর থেকে দেখছিলাম, কেউ কেউ এগোনোর জন্য একটু অনিয়ম করে গাড়ির মাথাটা লাইন থেকে অল্প বের করে দিতে গিয়ে যেই দেখেছে—সামনে একটু দূরে কোনো ছাত্রকে দেখা যাচ্ছে, সাথে সাথে গাড়ি জায়গামতো ফিরিয়ে নিয়ে খুব ভালো মানুষ হয়ে যাচ্ছে।’
তবে এখন আবারও সেই পুরোনো জ্যামের চিত্র ফিরে এসেছে রাস্তাঘাটে। ঢাকার বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ট্রাফিক ব্যবস্থা যা ইচ্ছে তা–ই! প্রায়ই সড়কের ভোগান্তির কথা ঢাকা শহরের মানুষ ফেসবুকে লিখে থাকেন। এই পরিস্থিতি তুলে ধরে আফজাল হোসেন বলেন, ‘পথ চলা স্বাধীন করে দেওয়া হলো। আবার শহর ও মানুষ নিজের চলা-বলা ফেরত পেয়ে গেল। সবাই চলছে নিজের ইচ্ছামতো, বলছেও যার যার যেমন ইচ্ছা তেমন করে।’

আফজাল হোসেন

এদিকে বাক্‌স্বাধীনতা নিয়েও মন্তব্য করেছেন নন্দিত এই অভিনেতা। আফজাল হোসেন লিখেছেন, ‘একসময় সবাইকে কথা হিসাব করে বলতে হয়েছে। এখন যার যেমন খুশি বলা যায় বলে লাগামছাড়া কথা বলাবলি হচ্ছে। যখন বলা দরকার; বলা যায়নি। বিড়াল হয়ে কাটানো জীবনে হঠাৎ বাঘ হয়ে দেখানোর সুযোগ মিলেছে। এখন মানুষ নিশ্চিত, নিজের গলায় বাঘের গর্জন দিলে কারও চোখরাঙানি দেখতে হবে না বা ঘর চেপে ধরতে আসবে না কেউ। আমাদের সভ্যতা–ভব্যতার সীমা জানা নেই। অপমানজনক আচরণ, কথা বলায় আমাদের দক্ষতা সর্বজনবিদিত। এখন যেন বুক ফুলিয়ে অনুচিত কাণ্ড করা যায়। যেমন খুশি বলে ও করে মর্যাদা বৃদ্ধির সুবর্ণ সুযোগ এসেছে।’

কারও নাম উল্লেখ না করে সবশেষে আফজাল হোসেন বলেন, ‘গতকাল দেখতে পেলাম, অসম্মান করে কথা বলা মানুষ টেলিভিশন চ্যানেলে খবর হয়েছে। বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তাকে পর্দায় হাজির করা হলো। টেলিফোনে দায়িত্বশীল, দেশপ্রেমিক দাবি করা মানুষটাকে বলতে শোনা গেল, সে উচিত কাজই করেছে, কোনো অন্যায় করেনি।’