চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই অভিনেত্রী হতে চেয়েছিলেন তিনি। অভিনেত্রী হবেন, এই বাসনা নিয়েই দীর্ঘ একটা সময় কেটে যায়। কিন্তু কীভাবে শুরু করবেন, বুঝে উঠতে পারছিলেন না। এদিকে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পরে ক্যারিয়ার কোন দিকে যাবে, এই নিয়ে পরিবারের মুখোমুখি হন। পরিবারের লোকেরাও তখন ক্যারিয়ার হিসেবে অভিনয়ে সায় দেন। সেই সময় ভিট–চ্যানেল আই টপ মডেলের আয়োজনে ছবি পাঠান। সেই ছবি ও জীবনবৃত্তান্ত দেখে ডাক পরে তানিয়া বৃষ্টির। সেখানে ধাপে ধাপে নিজেকে প্রমাণ করে রানারআপ হন। এরপর তাঁর ইচ্ছা ছিল সিনেমায় অভিনয় করার। কিন্তু বিরূপ অভিজ্ঞতার কারণে সেই থেকে সিনেমা থেকে দূরে তানিয়া। সেই সময়ে কী হয়েছিল, সেটাই জানালেন তিনি।
এক দশকের ক্যারিয়ারে নাটক দিয়েই এখন জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী। কিন্তু সেই নাটকে অভিনয়ের শুরুতে তাঁর আগ্রহ খুবই কম ছিল। শৈশবে নাটক দেখলেও বেশির ভাগ সিনেমার সঙ্গে সখ্য ছিল। তাঁকে টানত সিনেমার নায়িকার চরিত্রগুলো। পরে সুযোগ পেয়ে যান ‘ঘাসফুল’ সিনেমায়। আকরাম খান পরিচালিত সিনেমাটিতে তাঁকে ভিন্ন চরিত্রে দেখা গেছে। প্রশংসাও পেয়েছেন এই ছবি থেকে।
তানিয়া বলেন, ‘আমি তো প্রথম দিকে বিজ্ঞাপন করেছি, মডেলিং করেছি। পরে নাটক করেছি। এর মধ্যে ভালো লাগত সিনেমা। পরে আমার “ঘাসফুল” সিনেমা দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু হলো। ইমপ্রেস টেলিফিল্মের সিনেমা। সেই সিনেমার শুটিং এবং মুক্তির পরে অনেকেই আমাকে সিনেমায় অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব দিতেন। কিন্তু বিশেষ কারণে করিনি।’
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে অনেক সিনেমায় প্রস্তাব পেয়েছেন। নিজেকে বড় পর্দার নায়িকা হিসেবে দেখার খুবই ইচ্ছা ছিল, তাই ভেবেছিলেন সহজেই সেই ইচ্ছা পূরণ হবে। কিন্তু পরিবেশ ছিল ভিন্ন। এ প্রসঙ্গে তানিয়া বলেন, ‘ফিল্মে অনেক প্রস্তাব পেলেও স্বপ্নটা এগিয়ে নিতে পারিনি। তখন মনে হয়েছে, ওই সময়টায় ওই জায়গা আমার জন্য নয়। যে কারণে প্রস্তাব গ্রহণ করিনি। আমার বড় পর্দার নায়িকা হওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল, কিন্তু সেসব প্রস্তাব নিতে পারছিলাম না। সেই কারণে আমার মন খারাপ ছিল।’
সিনেমার প্রস্তাবের জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেও পরবর্তী সময়ে আর সিনেমায় নাম লেখানো হয়নি। এসব নিয়ে মন খারাপ থাকত তরুণ অভিনেত্রী তানিয়ার। এই মন খারাপের কারণ কী? ‘প্রস্তাবগুলো নিয়ে কী বলব, এগুলো ঠিকমতো উপায়ে ছিল না। আমি একটা প্ল্যাটফর্ম থেকে আসছি, কাজ করব। সেই সুযোগ নাটকে সহজেই হয়ে যায়। কিন্তু সিনেমায় একটু কঠিন। সিনেমার প্রস্তাবে শুনতে হয়েছে, কাজের বিপরীতে কিছু চায়। সবাই না, এই কথাগুলো কেউ কেউ বলেছেন। তাঁদের প্রস্তাবে মন খারাপ হতো। হয়তো যথাযথ প্রতিষ্ঠানের তাঁরা ছিলেন না। তাঁদের হয়তো উদ্দেশ্য ভালো ছিল না।’
এ সময় তানিয়া আরও বলেন, ‘যেটা আমি আগেই বলেছি, নাটকে সেই রকম কোনো প্রস্তাব পাইনি, কিন্তু ফিল্মে পেয়েছি। এসব প্রস্তাব মেনে কাজ করাটা সম্ভব ছিল না। যে কারণে আমি ফিল্ম থেকে সরে এসেছি। পরে নাটক কনটিনিউ করেছি। এখনো সেটাই করছি, দ্যাটস ইট।’
গত ঈদুল ফিতর ও পরবর্তী সময়ে ‘ছোবল’, ‘লতিফ দপ্তরি’, ‘আইসিইউ’, ‘সব দোষ হোসেন আলীর’, ‘কাছের মানুষ’, ‘জায়গায় খায় জায়গায় ব্রেক’ নাটকগুলোতে এক নতুন তানিয়াকে খুঁজে পান দর্শক। গল্পগুলোতে মাদক, অন্তঃসত্ত্বা নারীর সমস্যাসহ নিম্নবিত্ত মানুষের কথা উঠে এসেছে। এসব নাটকও কোটি ভিউয়ে নাম লেখাচ্ছে। ঈদের বিরতির পরে আগামী বৃহস্পতিবার তাঁর ‘ফ্রিল্যান্স ধান্দাবাজ’ নামের একটি নাটক বাংলাভিশনে প্রচারিত হবে। নাটকে তাঁর সহশিল্পী নিলয় আলমগীর। এটি পরিচালনা করেছেন এস আর মজুমদার। তানিয়া বলেন, ‘উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে ২০১২ সালে “ভিট–চ্যানেল আই টপ মডেল”-এ যোগ দিয়ে রানারআপ হই। শুরু হয় মিডিয়ায় পথচলা। এখন নিয়মিত নাটকে অভিনয় করছি।’