আমি আসাদ তাঁর একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট

রাতেই জাকী ভাইয়ের মৃত্যুর খবরটা শুনেছি। এর পর থেকে আমার কিছুই মনে পড়ছে না। কোনো বোধই কাজ করছে না। ৫৩ বছরের সম্পর্ক আমাদের। আমরা একে অপরকে কাছ থেকে দেখেছি, বিষয়টা এমন নয়, আমরা একসঙ্গে থেকেছি বলা যায়। বয়সে আমার সিনিয়র নাসির উদ্দিন ইউসুফ, তাঁরও সিনিয়র সৈয়দ সালাহউদ্দীন জাকী। কিন্তু তারপরও আমাদের দুজনের অন্য রকম একটা সম্পর্ক ছিল।

সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী
ছবি: সংগৃহীত

সেই সম্পর্ক স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় থেকে মৃত্যুর আগপর্যন্ত ছিল। আমরা একসঙ্গে ড্রামা সার্কেল, নাট্যচক্র, সিনিয়র সার্কেল, সিনেক্লাব, স্বপক্ষ নামের একটি পত্রিকাসহ কত কী যে করেছি! একুশে ফ্রেবুয়ারির প্রভাতফেরিকে কেন্দ্র করে কার্ড নামে একটা পত্রিকা বের করতেন। একসঙ্গে কয়েক বছর আমরা এটা করেছি।

‘ঘুড্ডি’ ছবির একটি দৃশ্যে সুবর্ণা মুস্তাফা ও রাইসুল ইসলাম আসাদ

জাকী ভাইয়েরা কয়েকজন মিলে ঢাকা থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করলেন। আমিও অংশ হলাম। তারপর তো তাঁর চলচ্চিত্র। একটি–দুটি–তিনটি চলচ্চিত্রে একসঙ্গে কাজ করা। সবকিছু মিলিয়ে এত বছরের চলমানতা। এক–দুই দিনে এসব তো বলে শেষও করা যাবে না। আমাদের সম্পর্কটা যে কী! এটাকে কি শুধু বন্ধুত্ব বলব? অনেকভাবে আমাদের সম্পর্ককে ব্যাখ্যা করা যায়। সোজা কথায় যদি বলি, আমি রাইসুল ইসলাম আসাদ তাঁর একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট। আমাদের সম্পর্কটা আবার গুরু–শিষ্যেরও নয়। গুরু–শিষ্য হলে তো একটা দূরত্ব কাজ করে, তা–ই না! কিন্তু আমাদের মধ্যে কোনো দূরত্ব ছিল না। এই জীবনে তাঁর সঙ্গে আমি কী করিনি। সবই করেছি। সবই। এক-দুই তিন বছরের বিষয় তো নয়, ৫৩ বছরের একটা ভ্রমণ।

সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী

আমরা যারা একসঙ্গে থেকেছি, তাঁর কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, তারা তো বলব, সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী অসাধারণ নির্মাতা ছিলেন। সব সময়ই ভালো বলব। তবে তিনি শুধু অসাধারণ নির্মাতাই নন, শিক্ষকও ছিলেন। বহু চলচ্চিত্র নির্মাতা এখন আছেন, উনি তাঁদের সরাসরি শিক্ষক।

সৈয়দ সালাহউদ্দীন জাকী ভাইকে তুলনামূলক বিচার করাটা আমার জন্য খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তবে আমি তাঁর সঙ্গে যখন কাজ করেছি, শুধু যে অভিনেতা হিসেবে করেছি, তা কিন্তু নয়। আমি তাঁর অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করতে গিয়ে প্রধান চরিত্রের অভিনেতা হয়ে গেছি। পরে যতকাল কাজ করেছি, যত কিছুই করেছি, সত্যি কথা বলতে, আমি তাঁর সহকারী হিসেবেই তা করে গেছি। আমি কিন্তু কোনো দিন অভিনয়শিল্পী হতেই চাইনি। সালাহউদ্দিন জাকী, নাসির উদ্দিন ইউসুফ—তাঁদের চাপে আমাকে অভিনেতা হতে হয়েছে। তাঁরা আমাকে অভিনেতা বানিয়ে দিয়েছেন। তারপর আমার ভালো লেগেছে। এরপর দায়িত্ব মনে হয়েছে। এরপর করতে করতে অভিনয়ে ৫০ বছর পার হয়ে গেছে।