এবার ধর্মঘটে বিজ্ঞাপনচিত্রের প্রযোজকেরা

বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে ফাঁকে পরিচালক আদনান আল রাজীব ও প্রীতম হাসান। ছবি: পরিচালকের সৌজন্যে
বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে ফাঁকে পরিচালক আদনান আল রাজীব ও প্রীতম হাসান। ছবি: পরিচালকের সৌজন্যে

সময়মতো বকেয়া টাকা পরিশোধ, সুনির্দিষ্ট ওয়ার্ক অর্ডারসহ চার দফা দাবি আদায়ে ধর্মঘট ডেকেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাডফিল্ম অ্যান্ড কনটেন্ট প্রডিউসারস (বিএএসিপি)।

প্রতিষ্ঠানটির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান। তিনি তারেক নামে পরিচিতি। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা দাবি নিয়ে কথা বলছিলেন। বিভিন্ন সময় দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস পেলেও নানাভাবে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। কর্মক্ষেত্রে তৈরি হচ্ছিল বিশৃঙ্খলা। যে কারণে বাধ্য হয়েই তাঁরা গতকাল থেকে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। এতে থমকে আছে বিজ্ঞাপচিত্রের শুটিং।

হাবিবুর রহমান। ছবি: ফেসবুক

বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করে এই বিজ্ঞাপন প্রযোজকেরা। তাঁরা জানান, প্রতিটি বিজ্ঞাপনের ক্লায়েন্ট ও এজেন্সির সঙ্গে তাঁরাই ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত থাকেন। প্রযোজকদের অভিযোগ, কাজের আগে ওয়ার্ক অর্ডার, পরে অগ্রিম নিয়ে কাজ শুরু, কাজ শেষে পারিশ্রমিক প্রদানসহ সবকিছুর সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে প্রায়ই তাঁদের নানা রকম বাধার মুখে পড়তে হয়।

সংগঠনের আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ৯০ দিনের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ করার কথা। কিন্তু বছরের পর বছর আমরা ক্লায়েন্ট ও এজেন্সি থেকে টাকা পাই না। দ্বিতীয়ত, সময়মতো আমরা ওয়ার্ক অর্ডার পাই না। আমাদের আগেই ওয়ার্ক অর্ডার দিতে হবে। পরে দেখা যায়, অ্যাডভান্স না পেলে এখনো অনেকেই কাজ করতে চান না। আমাদের বেশির ভাগ অর্থ পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতা থাকে। সেখানে ৫০ ভাগ অ্যাডভান্স নিয়ে কাজ করতে ঝামেলা পোহাতে হয়। এটা আরও ২৫ ভাগ বাড়াতে হবে। আমাদের বিজ্ঞাপনচিত্র জমা দেওয়ার পর দেখা যায়, অনেক ক্লায়েন্ট সেটা নিয়ে বড় একটা সময় আর কোনো কথাই বলে না। আমরা বিলও তৈরি করতে পারি না। আমরা যেহেতু সব কাজ প্রস্তুত করে জমা দিই। এখন থেকে জমা দেওয়ার দিন থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে বাকি অর্থ পরিশোধ করতে হবে। এই চারটি মূল দাবি আপাতত তুলে ধরেছি।’

তারেক রহমান আরও বলেন, ‘আমাদের কাজ করতে গিয়ে নানাভাবে বাধার মুখে পড়তে হয়। আমরা কারও পারিশ্রমিক বকেয়া রাখতে পারি না। অন্যদিকে বছরের পর বছর ক্লায়েন্টের কাছে টাকার জন্য ধরনা দিতে হয়। আমরা এখন থেকে মৌখিক অর্ডারে কাজ করব না। একটা ফরম তৈরি করেছি। সেটা পূরণ করেই কাজ করব। আমাদের ন্যায্য দাবি যারা মানবে না, তাদের কাজ করব না। যারা মেনে কাজ করবে, তাদের সঙ্গে যেকোনো সময় থেকেই কাজ করতে আমাদের বাধা নেই। আমরা মূলত একটা শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা করছি। আমরা আর হয়রানি হতে চাই না।’
ইতিমধ্যে তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে আর্ট ডিরেক্টর অ্যান্ড কস্টিউম ডিজাইনার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। একইভাবে প্রযোজকদের দাবি সমর্থন করেছেন মেকআপ, প্রোডাকশন ম্যানেজার, লাইট, ক্যামেরা, কাস্টিং ডিরেক্টরসহ ভুক্তভোগীরা।

বিজ্ঞাপন এজেন্সি ও ক্লায়েন্ট হিসেবে প্রযোজকদের দাবিকে যৌক্তিক দাবি বললেন এশিয়াটিকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নাভিল ফেরদৌস হাসান। তিনি বলেন, ‘এটা যৌক্তিক দাবি। কিন্তু আমাদেরও কিছু প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়। আমরা ক্লায়েন্টের কাছ থেকে অনেক সময় ঠিকমতো অর্থ পাই না, আমাদের ঘুরতে হয়। আবার যে অ্যাডভান্স পাই, সেটা দিয়ে কাজ ওঠানো সম্ভব হয় না। আমরাও ক্লায়েন্টের সঙ্গে কথা বলব, আলোচনা করব। তারা নিয়মগুলো মানলেই আমরা নিয়ম মেনে কাজ করতে পারব। আমরাও এর একটা সমাধান চাই। শৃঙ্খলা ফিরুক এটাই চাই।’

রানআউট প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার পরিচালক আদনান আল রাজীব বলেন, ‘আমাদের বড় একটা ইন্ডাস্ট্রি। দেখা যায়, ক্রমেই অর্থ লেনদেন নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়, কখনো টাকা পেতে এক বছরের বেশি সময় লেগে যায়। এ সময়ে অ্যাডভান্স কমে যাওয়াসহ নানা ধরনের সমস্যা বেড়েই যাচ্ছে। আমরা এ সমস্যা বা জটিলতাগুলোর উত্তরণ চাই।’