হুমায়ুন ফরীদিকে সব সময় গুরু মেনে এসেছেন অভিনেতা আফরান নিশো। নিশো কি তাঁর গুরুর পথেই হাঁটছেন? কীভাবে এক প্রজন্মের অভিনেতা আরেক প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেন, পড়ুন এই লেখায়।
হুমায়ুন ফরীদি আমার শিক্ষক নন, আমার গুরু।
ছোটবেলায় কখনো ভাবিনি অভিনেতা হব। তাই তাঁর অভিনয় দেখে বড় হয়েছি, তিনি ছিলেন আমার স্বপ্নের নায়ক—এসব বললে ভুল হবে। নাটকের সেটে প্রথম দেখাতেই তাঁর চাহনি, ভঙ্গি ও কথা বলার ধরন নজর কেড়েছিল। তিনি এলেই সেটের পরিবেশ বদলে যেত। তাই বলে হুমায়ুন ফরীদিকে দেখলেই যে চট করে দাঁড়িয়ে যেতাম, শ্রদ্ধায় মাথা নত করতাম, তা নয়। অহেতুক তোষামোদি জিনিসটা আমাকে দিয়ে হয় না। বোধ হয় এ কারণেই তিনিও আমাকে পছন্দ করেছিলেন।
খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের বন্ধুত্ব হয়েছিল। আমরা আড্ডা দিতাম, দুষ্টুমি করতাম, হাসতাম, হাসাতাম। অন্তর্মুখী আমাকে খোলস ছেড়ে বের হতে তিনি খুব সাহায্য করেছিলেন। ফরীদি ভাই জোর দিয়ে বলতেন, ‘সবার সঙ্গে তোমার মিলবে না, কিন্তু তোমাকে কথা বলতে হবে।’
সবার সঙ্গে না মিললেও হুমায়ুন ফরীদির সঙ্গে আমার মিলেছিল। তাঁর খাদ্যাভ্যাস, দুষ্টুমির ধরন, রসবোধ, আচরণ, পাগলামি যখন কাছ থেকে দেখেছি; মনে হয়েছে কী আশ্চর্য—এ মানুষটা তো আমার মতো! অভিনয় নিয়ে আমি খুব সিরিয়াস ছিলাম না। ফরীদি ভাই মাঝেমধ্যে টুকটাক টোটকা দিতেন। বলতেন, ‘নিশো, ডোন্ট ট্রাই টু অ্যাক্ট। অভিনয় করার চেষ্টা কোরো না। স্বাভাবিক থাকো। শুধু ঠিকঠাক রিঅ্যাকশন দাও।’
ফরীদি ভাই ছিলেন আমার গুরু, বন্ধু, বাবা। অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদিকে চেনার আগেই আমি ব্যক্তি হুমায়ুন ফরীদির প্রেমে পড়েছিলাম। চলে যাওয়ার পরই তিনি যেন আমার ওপর আরও বেশি করে ভর করলেন। এখনো মাঝেমধ্যে ফরীদি ভাই স্বপ্নে হাজির হন, আড্ডা দেন, সাহস দেন। মনে আছে ‘লোটাকম্বল’ নামের একটা নাটক করার আগে আমি খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম।
কীভাবে কী করব, বুঝতে পারছিলাম না। রাতে ফরীদি ভাইকে স্বপ্নে দেখলাম। তিনি বললেন, ‘তুই পারবি।’ পরদিন আমি একটুও আটকে যাইনি। আমার জীবনের এই সময়টাতেই তাঁকে সবচেয়ে দরকার ছিল। যদি আবার তাঁর সঙ্গে দেখা হতো, কিছুতেই তাঁকে যেতে দিতাম না। কখনোই ছাড়তাম না।
(লেখাটি ২০২১ সালে প্রথম আলোতে প্রকাশিত। আজ হুমায়ুন ফরীদির প্রয়াণদিবস উপলক্ষে তাঁকে স্মরণ করে লেখাটি আবার প্রকাশ করা হলো)