গতকাল বুধবার ছিল পয়লা ফাগুন ও ভালোবাসা দিবস। বিশেষ এই দিন উপলক্ষে আজ স্ত্রীর উদ্দেশে খোলাচিঠি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন গুণী অভিনেতা আফজাল হোসেন। সেই ফেসবুক পোস্টে উঠে এসেছে স্বামী হিসেবে এই অভিনেতা স্ত্রীর কাছে কেমন? প্রশ্ন রেখেছেন উপযুক্ত স্বামী কি হয়ে উঠতে পেরেছেন? বিয়ের পরে প্রতিটি দিন কীভাবে ভালোবাসার হয়ে উঠেছে, সে কথা বলেছেন এই অভিনেতা। তাঁদের বোঝাপড়া আর ভালোবাসার দিনগুলো কেমন ছিল?
শুরুতেই আফজাল হোসেন লিখেছেন, ‘কিছু কিছু প্রশ্নের স্বভাবই হচ্ছে, হঠাৎ হঠাৎ তিমি মাছের মতো ভুশ করে পানির উপর পিঠ ভাসিয়ে দেয়া। বসন্ত এসে গেছে। রাস্তাভরা ফাগুনের রং লাগা মানুষ দেখি। বাতাসে আনন্দের গন্ধ। কলকাতা আজ অন্যরকম। সুখী সুন্দর মানুষেরা ঝলমলাচ্ছে যেন। মনে একটা পুরানো প্রশ্ন জাগে। মনার প্রতি জন্মদিনেও এই প্রশ্নটা তিমি মাছের পিঠ দেখানোর মতো ভুশ করে জেগে ওঠে।’
ব্যক্তিজীবনে কিছুটা অগোছালো ছিলেন এই অভিনেতা। সৃজনশীল মানুষ হলে যেমন হয়। কিন্তু সেই মানুষটা একটা সময় বলদে যেতে শুরু করেন। নিজেকেই তিনি প্রশ্ন করেছেন, ‘আমি স্বামী হিসাবে কেমন? উত্তরটা ভালো কিংবা মন্দ নয়—ভাবায়।’ পরে তিনি আরও লিখেছেন, ‘উন্নত স্বামী হওয়ার উপাদান আমার মধ্যে কম, সেটা বুঝি। উপযুক্ত স্বামী হয়ে ওঠার জন্য কেমন কেমন গুণ থাকতে হয় জানলে গুণে মানে অনন্য একখান স্বামী হয়ে ওঠার উদ্যোগ কি গ্রহণ করতাম? সোজাসাপটা উত্তর হচ্ছে—না।’
‘আমি সৃষ্টিকর্তার সুনজরে থাকা মানুষ, তিনি কপালে লিখে দিয়েছেন, এই বান্দা চিরকাল তাইরে-নাইরে জীবন কাটাইতে চায়, তাহা মনজুর করা হইল। তারপর তিনি জোড়া বানানোর জন্য খাতা খুলে তালিকা দেখেন। খুঁজতে থাকেন বিপরীত পক্ষের অশেষ সহনশীল, ঠান্ডা মাথার, অতি গোছালো, কম কথা বলা, প্রেমময় কিন্তু মনে খুব জোরঅলা কাকে পাওয়া যায়!’ লিখেছেন আফজাল হোসেন।
বিয়ের জন্য এমন পাত্রী ঠিক তখনই পাওয়া যায়নি। পরে সহনশীল, ঠান্ডা মাথার অতি গোছালো, প্রেমময় একজন এই অভিনেতার জীবনে আসেন। তাঁকে নিয়ে আফজাল হোসেন লিখেছেন, ‘অতঃপর ওই সব উপাদানে সমৃদ্ধ একজনকে সৃষ্টি করার প্রয়োজন অনুভব করিলেন। সৃজন শেষ হইলে দেখিলেন, পুরুষটি উত্তরের হইলে নারী রত্নটি দক্ষিণের—শুধু ধরনে নয়, দুজনের বয়সের মধ্যেও বিস্তর তফাত হইয়া গিয়াছে। সৃষ্টিকর্তা ভাবিলেন, হউক। নারী রত্নটিকে অনেক গুণসমৃদ্ধ করিয়া প্রস্তুত করা হইয়াছে, সমস্যা হইবে না। সমস্যা হয়নি।’
এই অভিনেতা মতে, তিন দশকের সংসারজীবনে তাঁর মধ্যে অস্থিরতা কমেছে, হঠাৎ মাথা গরম হওয়া কমেছে, ঠান্ডা মাথায় ভাবার অভ্যাস তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া অনেক কিছু বিনা চেষ্টায় ভালোর দিকে বদলে গেছে। তারপরও নিজেকে প্রশ্ন করেছেন, ‘সবটা কি বদলেছে?’ বদলেনি। কিন্তু এটা যেন সংসারজীবনের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘অগোছালো স্বভাবটার কোনোই উন্নতি হয়নি। হয়নি বলেই অপর পক্ষের ঠান্ডা মাথা প্রায়ই গরম হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। ভাগ্যিস হয়। হয় বলেই বোঝা যায়, সংসারে প্রাণ আছে।’
আফজাল হোসেন আরও লিখেছেন, ‘কত মানুষকে বলতে শুনি, অবিবাহিত থেকে বিবাহিত হওয়া, শুধু অ-এর পার্থক্য নয়—জীবন বদলাতে হয়। ঘরে আমরা প্রায়ই মিনতির সুরে গাওয়া “আমাকে আমার মতো থাকতে দাও” গানটা শুনি। শচীন দেববর্মনের “তুমি আর নেই সে তুমি” গানটিও বাজে। এগুলো মনের কথার প্রতিধ্বনি নয়, আমাদের প্রিয় গান। প্রিয় বলেই বারবার শুনতে ভালো লাগে।’
নিজেদের মতো করেই সংসার নিয়ে খুশি এই অভিনেতা। তাঁরা স্বাধীনভাবেই জীবনটাকে কাটিয়ে দিতে চান, যেখানে কেউ কারও জন্য কখনোই বাধা হতে চান না। আর এটাই তাঁদের মানুষের মতো বাঁচতে, জীবনকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে। আফজাল হোসেন লিখেছেন, ‘বিবাহিত জীবন নিয়ে কত মানুষের বিচিত্র রকমের হাঁসফাঁস রয়েছে। আমার বা মনার হাঁস নেই, ফাঁসও নেই। সে তার মতো, আমি আমার মতো। কেউ কখনোই কারও ঘাড়ে চড়ে বসতে চাইনি। বত্রিশ বছর ধরে আমাদের ঘাড় স্বাধীন। বত্রিশ বছর ধরে সে আমাকে বিশেষ কোনো পরিচয়ের নয়, মানুষ বিবেচনা করে—এ দুয়ের চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে! রোজ ঘরে ঘরে ঘুরঘুর করুক ফাগুনের রং, বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস।’