'কোথাও কেউ নেই'-এর ফিরে আসা

কোথাও কেউ নেই নাটকে আসাদুজ্জামান নূর ও সুবর্ণা মুস্তাফা
কোথাও কেউ নেই নাটকে আসাদুজ্জামান নূর ও সুবর্ণা মুস্তাফা

নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত নাটক কোথাও কেউ নেই–এর অভিনয়শিল্পীরা আবার একত্র হচ্ছেন। কোনো নাটকের জন্য নয়। দুই যুগ পর তাঁরা একত্র হচ্ছেন আড্ডার একটি অনুষ্ঠানের জন্য। বাংলাদেশ টেলিভিশনের উদ্যোগে এবারের ঈদে অনুষ্ঠানটি দেখানো হবে। টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ এটিকে কোথাও কেউ নেই–এর ফিরে আসা বলতে চাইছেন। তাই তো তাঁরা বলছেন, এখানে সবাই আছেন।

কোথাও কেউ নেই–এর অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে ‘এখানে সবাই আছেন’ শিরোনামের অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা হারুণ রশীদের। তিনি বলেন, ‘এটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না, কোথাও কেউ নেই বাংলাদেশ টেলিভিশনের কালজয়ী নাটকের একটি। এখনো দর্শকেরা ইউটিউবে নাটকটি আগ্রহ নিয়ে দেখেন। এই নাটকের কারণে এখনো আসাদুজ্জামান নূর বাকের ভাই হিসেবে পরিচিত। আমরা এই নাটকের সেই সময়কার মানুষদের এক জায়গায় করার চেষ্টা করছি। এটাকে আমরা কোথাও কেউ নেই–এর পর্দার মিলনমেলা বলছি। সে জন্যই আমরা বলছি, “এখানে সবাই আছেন”।’

এই টিভি ধারাবাহিক এতটাই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল যে ধারাবাহিকটির প্রতিটা পর্ব দেখতে দর্শকেরা প্রবল আগ্রহ নিয়ে টেলিভিশনের সামনে অপেক্ষা করতেন। বাকের ভাই চরিত্রটি দর্শকেরা এতটাই পছন্দ করেছিলেন যে নাটকে তার ফাঁসির আদেশে ঢাকার রাস্তায় মিছিল হয়। চলতে থাকে দেয়াল লিখন, সমাবেশও। সে সময়কার সংবাদমাধ্যমেও বেশ গুরুত্বের সঙ্গে এই নাটকের সংবাদগুলো প্রকাশিত হয়। তখন অনেকে ভেবেছিলেন, হয়তো লেখক জনমতের কারণে গল্পের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ তা না করে ধারাবাহিকটিকে তাঁর মতো করে শেষ করেন। বাকের ভাইয়ের পক্ষে দর্শকদের তুমুল আবেগ এবং সমর্থন সত্ত্বেও ফাঁসি হয়।

জানা গেছে, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিল্পীরা সে সময়কার অভিজ্ঞতা বলবেন। এটা নিতান্তই মজার আলাপ–আলোচনার অনুষ্ঠান, সিরিয়াস বিষয় নয়।

‘এখানে সবাই আছেন’ অনুষ্ঠানের গ্রন্থনা ও সঞ্চালনায় আছেন নন্দিত অভিনয়শিল্পী আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘ভাবনাটা খুবই ভালো এ কারণে যে একটা সময়কে নতুন করে টেনে আনার চেষ্টা। সেই সময় সম্পর্কে আগ্রহ যাদের আছে, তারা জানতে পারবে একটা জনপ্রিয় নাটক সম্পর্কে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, টেলিভিশন তো চর্চা করার বিষয়, ঘুরেফিরে অনেক কিছুই হচ্ছে—আমরা বলি। এটা পুরোনো হলেও নতুন এই অর্থে, কখনো এমনটা ঘটেনি।’

আফজাল হোসেন এ–ও বলেন, ‘বিটিভির প্রতি আমার আলাদা একটা কৃতজ্ঞতা আছে। সামান্য পরিচিতি হলেও তো তা তৈরি করে দিয়েছে এই বিটিভি। তাই এত চমৎকার একটা ভাবনা নিয়ে অনুষ্ঠান করতে আগ্রহী হয়েছি।’

হুমায়ূন আহমেদ, হুমায়ুন ফরীদি, আফজাল হোসেন

বাকের ভাই চরিত্রে অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয়তা পান আসাদুজ্জামান নূর। বরেণ্য এই অভিনয়শিল্পী এই মুহূর্তে আছেন ভারতের দিল্লিতে। সেখান থেকে তিনি বলেন, ‘বিটিভি থেকে প্রযোজক মাহবুবা ফেরদৌস এমন একটি অনুষ্ঠানের কথা বললে ভাবনাটা ভালো লাগে। আমি মনে করি, অন্তত সবার সঙ্গে দেখা হবে, এটাও তো বড় ব্যাপার। আমাদের সবার তো আর দেখা হয় না। সুবর্ণার সঙ্গে অবশ্য ইদানীং সংসদে দেখা হয়। ভাবলাম, সবার সঙ্গে দেখা হবে। গল্প–গুজবও হবে।’

কোথাও কেউ নেই নাটকের রচয়িতা হুমায়ূন আহমেদ মারা গেছেন। নেই অভিনয়শিল্পী হুমায়ুন ফরীদিও। এই দুই গুণী সম্পর্কে তিনি বলেন, এই অনুষ্ঠানের সময় হুমায়ূন আহমেদকে মনে পড়বে অনেক। তাঁকে অবশ্য সব সময় মনে পড়ে। নাটকে হুমায়ূন যে ধারা সৃষ্টি করেছিলেন, তা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেছে। দু–একটা ভালো নাটক হলেও শত শত নাটকের ভিড়ে তা হারিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘এখানে সবাই আছেন’ অনুষ্ঠানটির দৃশ্যধারণ হবে ১০ আগস্ট। অনুষ্ঠানের প্রযোজক মাহবুবা ফেরদৌস। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত থাকবেন লাকী ইনাম, সুবর্ণা মুস্তাফা, লুৎফর রহমান জর্জ, খায়রুল আলম সবুজ, আফসানা মিমি, দীবা নার্গিস, মাহফুজ আহমেদ, পুতুল প্রমুখ।