প্রথমবারের মতো ভারতের ছবিতে অভিনয় করার কথা ছিল বাংলাদেশের অপর্ণার। এই ছবিতে তাঁর সহশিল্পী হিসেবে থাকার কথা ছিল মিঠুন চক্রবর্তীর। করোনাভাইরাসের কারণে ছবিটির কাজ আর শুরু করতে পারেননি পরিচালক।
কলকাতার ছবির কাজ শুরু করবেন শুনেছিলাম...
২৩ মার্চ কলকাতায় যাওয়ার কথা ছিল। ২৪ মার্চ থেকে শুটিং শুরুর প্ল্যান ছিল। কিন্তু করোনা তো সবকিছু ওলট–পালট করে দিল। এই ছবির একটা অংশের কাজ বাংলাদেশেও করার কথা ছিল।
এটি তো দেশের বাইরে আপনার প্রথম ছবি হওয়ার কথা।
ঠিক তাই। গুপ্তচরবৃত্তি নিয়ে এই সিনেমা। এটি একটি বায়োপিক। এই ছবিতে আমার সহশিল্পী মিঠুন চক্রবর্তী, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও শাশ্বত চক্রবর্তী। ছবিতে আমি একজন গুপ্তচর, যার নাম ননীবালা দেবী। প্রথমবার ভারতীয় সিনেমায় কাজ করা নিয়ে কত প্রস্তুতি। ভেবেছিলাম, কাজ শেষ করে এসে সবাইকে জানাব। কিন্তু করোনার থাবায় সব থেমে গেল।
সরকারি অনুদানের একটি ছবিতেও তো অভিনয় শুরু করেছিলেন।
‘অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া’ নামের সেই ছবির কিছু কাজ করেছি। এই এপ্রিলে আবার শুটিং শুরু হওয়ার কথা। এখন তো সবকিছুই অনিশ্চিত। কবে যে পৃথিবী ঠিক হবে, সেটারই ঠিক নেই। এরপর হয়তো নতুনভাবে সবকিছু নিয়ে ভাবা হবে।
করোনায় সব থেমে আছে। আপনার সময় কীভাবে কাটছে?
ঘুমাচ্ছি, নেটফ্লিক্স দেখছি, বই পড়ছি, রান্নাঘরে কাজ করছি। আমার বোনও তো ঢাকায় থাকে। নিজেদের খাবার খাওয়ার জন্য হলেও রান্না করতে হয়। মিষ্টিও বানাই।
রান্না আগে করতেন না?
আগে করতাম না। সময়ও পেতাম না। বাসার কাজে সহযোগিতা করতে একটা মেয়ে ছিল। এই সময়টায় তাকে ছুটি দিতে হয়েছে। আমার কাছে রান্না করাটা একটা বাড়তি ঝামেলা মনে হতো। এখন তো আর উপায় নেই। রান্না করাটা যে কত বড় দায়িত্বের, এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। তবে আমি কিন্তু ডেজার্ট খুব ভালো বানাই। এই যেমন রসগোল্লা, রসমালাই, কেক।
অনেকে তো আবার হতাশা কাটাতে ব্যায়ামও করছেন।
আমি এক্সারসাইজ করছি। ভিডিও কল দিয়ে আমরা কয়েক বন্ধু (শাফায়েত মানসুর, মিশু সাব্বির, জন কবির) ব্যায়াম করছি। সময় কাটানোর জন্য গল্পও করছি।
সর্বশেষ শুটিং করেছিলেন কবে?
সিলেটের শ্রীমঙ্গলে ‘সুন্দরী’ নামের একটা ওয়েব সিরিজের শুটিং করেছিলাম। এক দিনের কাজ বাকি ছিল। করোনার কারণে এক দিনের শুটিং বাকি রেখেই আমরা ঢাকায় ফিরি। সেই ১৮ মার্চ যে বাসায় ঢুকেছি, আর বের হইনি। বই পড়ে আর ছবি দেখে সময় কাটাচ্ছি।
এই কয়েক দিনে কী কী বই পড়লেন আর ছবি দেখলেন...
এবার বইমেলায় যাওয়া হয়নি। কয়েক বছর ধরে বইমেলায় গেলে সেলফির যন্ত্রণায় থাকা যায় না। বই কিনতে পারি না। এবার না গিয়ে রকমারি থেকে বই কিনেছি। সাদাত হোসেন, মারজুক রাসেলের বই কিনেছি। আরও কয়েকটি বই কেনা হয়েছে। পড়ছি। সিনেমার মধ্যে ‘সিটি অব অ্যাঞ্জেলস’, ‘মিরাকল ইন সেল নাম্বার সেভেন’, ‘মেরিজ স্টোরি’, ‘ট্যাক্সি ড্রাইভার’, ‘প্যারাসাইট’ ও ‘ভুবনমাঝি’ দেখা হয়েছে। সিরিজের মধ্যে মানি হেইস্ট, ফ্রেন্ডস, তাজমহল ১৯৮৯ দেখছি।
করোনার থাবায় টালমাটাল বিশ্ব। এই পরিস্থিতি আপনি কীভাবে দেখছেন?
আমরা সিনেমায় দেখি, এভাবে বিশ্ব ধ্বংস হয়। করোনাভাইরাস নিয়ে পৃথিবীতে যা ঘটছে, এটাকে সত্যিই সিনেমা মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে, হলিউডের কোনো মুভি চলছে। ‘ট্রেন টু বুসান’ আর ‘কন্ট্যাজিয়ন’—এগুলো কেউ চালিয়ে রেখেছে। বিশ্বাস করেন, এমন পৃথিবী চাই না। সিনেমা দেখে যা না অনুভব করতে পেরেছি, তার চেয়ে বেশি অনুভূতি এখন হচ্ছে। উফ্! আমার তো কান্না চলে আসছে। এই সময়টা যেন দ্রুত চলে যায়, এই প্রার্থনা করছি। আমার বিশ্বাস, সবাই মিলে আবার নতুন করে স্পিরিট পাবে। সবকিছু স্টপ হয়ে আছে।
বোধের জায়গায় কোনো পরিবর্তন আসবে...
প্রতিটা যুদ্ধের পর একটা পরিবর্তন আসে। এটাও তো একটা যুদ্ধ। এই যুদ্ধ শেষে মানুষে মানুষে বিশ্বাস বাড়বে। মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাস উঠে গিয়েছিল। ঘৃণার পৃথিবী অনেকে হয়তো ভুলে যাবে। কিছুদিন আগে আমরা এভাবে মায়া দেখাইনি।
তবে আমি মনে করি, বিপদের প্রথম পর্যায়ে আছি। এরপরের বিপদটা ভয়াবহ। আমাদের সেক্টর বলেন, অর্থনৈতিক সেক্টর বলেন—সব জায়গা বিপদের মধ্যে পড়বে। এক শ বছর আগে যে ফ্লু হয়েছিল, তারপরও মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমি মনে করি, মানুষের ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। সৃষ্টিকর্তা মানুষকে সেই ক্ষমতা দিয়েছেন; কারণ, মানুষকে তিনি সৃষ্টির সেরা জীব বানিয়েছেন। ভাইরাস কখনোই মানুষের চেয়ে ক্ষমতাবান হতে পারে না। তবে মানুষকে এক কিংবা দুই বছর কষ্ট করতে হবে, এটা নিশ্চিত।