প্রায় তিন মাস ঘরে বসা আফরান নিশো। ১ জন থেকে ছোট পর্দার শুটিংয়ের অনুমতি মিললেও এখনো শুটিংয়ে নামেননি এই অভিনেতা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আপাতত নামারও ইচ্ছা নেই। তাই ঈদুল আজহার নাটকের শুটিং অনিশ্চিত। তবে নিশো বলেছেন পরিস্থিতি ভালো না হলে ঈদের নাটকে কাজ হবে না। ভক্তদের জন্য ঘরে বসেই দু–একটি কাজ হতে পারে। এসব কথাসহ গেল ঈদে প্রচারিত নাটকগুলো নিয়ে কথা বলেছেন ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় অভিনেতা।
বিরক্ত লাগছে না?
তা তো বটেই। তিন মাস বাসায়। কোথাও বের হইনি। আগে প্রতিদিনই পাগলের মতো শুটিং করতাম। কাজের মধ্যে ছিলাম। তাই টানা কাজের মধ্যে এই ভাইরাসের কারণে যখন কাজ বন্ধ হলো তখন প্রথম মাস, দ্বিতীয় মাস বিরক্ত লাগেনি। কিন্তু এখন বেশ বিরক্ত লাগছে। মনে হচ্ছে সবকিছু ভুলে যাচ্ছি। কয়েক দিন আগে আমার আগের করা কাজের কথা মনে করছিলাম, খেয়াল করলাম সব কাজের কথা মনে পড়ছে না। এখন মনে হচ্ছে আমি যে একজন অভিনেতা, সেটাই ভুলে গেছি।
ঘরে বসে কী উপলব্ধি হচ্ছে?
আমার কাছে মনে হচ্ছে, আমাদের অনেক ক্ষমতা, অনেক বাড়াবাড়ি আছে কিন্তু দিন শেষে মানুষের কোনো ক্ষমতাই নেই। এই বোধটা আমার মধ্যে তৈরি হয়েছে। এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টিকর্তা আমাদের দিয়েছেন, যা মানুষের কিছুই করার নেই। আমার মনে হয় জীবনদশায় আমাদের পূর্বপুরুষেরা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হননি কখনো।
গেল ঈদে কতগুলো নাটক প্রচারিত হয়েছে আপনার? কেমন সাড়া ছিল?
২০টির মতো প্রচারিত হয়েছে। তবে সেগুলো ঈদের নাটক ছিল না। আগের শুটিং করা পুরোনো নাটক। ঈদের জন্য মনমতো গল্পের যেসব নাটক করার পরিকল্পনা করা ছিল, একটি কাজও করা যায়নি। তার আগেই শুটিং বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তারপরও প্রচারিত নাটকগুলোয় ভালো সাড়া ছিল। বিশেষ করে ‘উপহার’, ‘মধ্যবৃত্ত’, ‘ফটোফ্রেম’, ‘দেবদাস অ্যান্ড জুলিয়েট’ নাটকগুলো দর্শকসমৃদ্ধ ছিল। প্রচুর দর্শক ভিউ হয়েছে নাটকগুলোতে।
আপনার জুটি হিসেবে কাকে বেশি পছন্দ করে দর্শকেরা? মেহ্জাবীন? নাকি তানজিন তিশা?
বিষয়টা এমন না। আমার ভক্ত–দর্শকেরা আমার অভিনীত নাটকই দেখতে চান। তবে নাটক যদি বিনোদন দিতে পারে তাহলে আমার বিপরীতে মেহ্জাবীন, তিশার বাইরে অন্য অভিনেত্রীকেও পছন্দ করেন দর্শকেরা। ভিউ দেখে মনে হয়েছে গত ঈদে দুটি নাটকে আমার বিপরীতে তাসনিয়া ফারিন ও শায়লা সাবিকে বেশ পছন্দ করেছে দর্শক। তবে এখন পর্যন্ত দর্শক পছন্দে আমার বিপরীতে মেহ্জাবীন ও তিশা এগিয়ে আছেন। নুসরাত ইমরোজ তিশাকেও পছন্দ করেন দর্শক।
আপনি, অপূর্ব, মেহ্জাবীন ও তানজিন তিশার জুটিবদ্ধ নাটক তুমুল জনপ্রিয়। কিন্তু নাটকের মানুষের মধ্যেই এই দুই জুটি নিয়ে সমালোচনা আছে। ধারণা করা হয় এই জুটির বাইরে আপনারা কাজ করতে চান না। সত্যি কি?
আলোচনা–সমালোচনা থাকবেই। বিনোদনের অন্য ক্ষেত্রেও এ ধরনের ইস্যু নিয়ে এমন আলোচনা–সমালোচনা আছে। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা এর বাইরে কাজ করতে চাই না, এটা সত্য না। কারণ, এখানে আমাদের হাত নেই। কাকে কোন নাটকে নেওয়া হবে সেটা প্রযোজক, পরিচালক মিলে সিদ্ধান্ত নেন। এটি একটি বাণিজ্যনির্ভর শিল্প। প্রযোজক চান তাঁর পুঁজির নিরাপত্তা। যেখানে সে লাভবান হবেন সেখানই সে টাকা বিনিয়োগ করবেন। দর্শকের পছন্দ, টেলিভিশন ও ইউটিউব চ্যানেলের চাহিদা অনুযায়ী প্রযোজকের টাকা শিল্পীদের পেছনে বিনিয়োগ হয়। এখানে তো আমাদের হাত নেই।
অনেকেই তো শুটিং শুরু করেছেন। আপনার খবর কী?
এখনো শুটিংয়ে ফেরার সিদ্ধান্ত নিইনি। বাবা, মা, ভাই–বোন, বউ কেউই এখনো শুটিংয়ে যাওয়ার পক্ষে না। ভাইরাসটির সংক্রমণ আরও বেড়েছে। এ অবস্থায় বাসা থেকে বেরই হতে দিচ্ছে না তাঁরা। অল্প কিছু শিল্পী পুবাইলকেন্দ্রিক ছোট আয়োজন নিয়ে কিছু কাজ শুরু করেছেন। ঢাকার মধ্যে কাজ হচ্ছে না। শুটিংগুলোর খবর রাখছি। শুনতে পাচ্ছি খুব যে ভালো কাজ হচ্ছে বলা যাবে না। কারণ, মাথায় চাপ নিয়ে ভালো কাজ সম্ভব না।
আগামী ঈদে নতুন নাটকে আপনাকে দেখা যাবে?
এই পরিস্থিতিতে মনে হয় না করা যাবে। প্রথম সারির অনেক শিল্পীই কাজ করছেন না। অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে আমার। কেউই রাজি না এই পরিস্থিতিতে। এখনো বোঝার চেষ্টা করছি। কমসংখ্যক মানুষ নিয়ে সেভাবে গল্প লিখে ঢাকার বাইরে গিয়ে নিরিবিলি কয়েকটি কাজের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু বাসা থেকে কোনোভাবেই সমর্থন পাচ্ছি না। তা ছাড়া দেখলাম, এভাবে কাজ করলে আদৌ মানের কাজ করা যাবে না। মুক্ত মনে কাজ না করলে সেই কাজ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
গত ঈদে ঘরে বসে আপনি ও মেহ্জাবীন ‘ওয়েটিং’ নামে একটি নাটক করেছিলেন।
এমন প্রস্তাবও আছে। কিন্তু এভাবে কি ভালো কাজ হবে? একটা–দুটো কাজ এভাবে করা যায়, তাই বলে অনেকগুলো কাজ সম্ভব না। যদিও ঘরে বসে করা ‘ওয়েটিং’ নাটকটি দর্শক পছন্দ করেছেন। তাই বলে এ ধরনের কাজ দর্শকের কাছে বারবার ভালো লাগবে না। কারণ, বাসায় বসে মোবাইল ফোন দিয়ে নিজে ক্যামেরা চালিয়ে, উপযুক্ত আলো ছাড়া ভালো কাজ সম্ভব না। তারপরও যদি কোনোভাবেই বাইরে গিয়ে শুটিং করা সম্ভব না হয়, তাহলে আমার ভক্তদের জন্য ঘরে বসে দু–একটি কাজ করতে পারি।
বছরখানেক ধরে সিনেমার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সবকিছু থেমে গেল। আপনার সিনেমা করার কী হবে?
এখন তো মনে হচ্ছে যা হয়েছে, তা ভালোর জন্যই হয়। কাজ শুরু করার পর এ অবস্থায় পড়লে বিপদে পড়ে যেতাম। প্রথম কাজই আটকে যেত। শুধু শুধু সময় নষ্ট করা হতো। ক্যারিয়ারেরও ক্ষতি হতো। সিনেমার অবস্থা তো এখন নাটকের চেয়েও খারাপ মনে হচ্ছে। সামনে সিনেমার ব্যবসা আরও খারাপ হবে বলে আমার মনে হয়। এখন আপাতত সিনেমা নিয়ে আর ভাবছি না।