>মৌসুমী হামিদ অভিনীত ধারাবাহিক ‘তোলপাড়’ শুরু হয়েছে ফেব্রুয়ারি থেকে। নিয়মিত অভিনয় করছেন ‘জায়গীর মাস্টার’ আর ‘গোল্লাছুট’ ধারাবাহিকে। শেষ করেছেন বাংলাদেশে নির্মিত প্রথম বিদেশি ভাষার ছবি ‘গোর’। শুটিং শেষের পথে ‘কাঠগড়ায় শরৎচন্দ্র’ ছবির কাজ। বর্তমান ব্যস্ততা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বললেন মৌসুমী হামিদ।
বেশ কয়েকটি ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন। এই সময়ের চরিত্রগুলো দর্শকের মনে কতটা দাগ কাটছে?
গল্পের অভাব প্রকট। সেই রকম স্বতন্ত্র, উল্লেখযোগ্য চরিত্র এখন তৈরি হচ্ছে না বললেই চলে। ‘জায়গীর মাস্টার’–এ আমার চরিত্রের নাম আলতাবানু। চরিত্রটা বেশ জনপ্রিয়। সার্বিকভাবে মনে দাগ কাটার মতো চরিত্র কোনো চিত্রনাট্যকারের লেখায় বেরিয়ে আসছে না। দর্শকের মনে কেন চরিত্রগুলো দাগ কাটছে না, সেটার পুরো দায় নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকারদের নিতে হবে।
কোনো ধারাবাহিক নতুন করে নির্মাণ হলে কোন চরিত্রটি করতে চান?
সমরেশ মজুমদারের ‘সাতকাহন’ উপন্যাস নিয়ে একটি ধারাবাহিক নাটক নির্মিত হয়েছিল। সেই নাটকের দীপাবলি চরিত্রটি আমি করতে চাই। গল্পে একটি মেয়ের সত্যিকারের জীবনযুদ্ধ তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে প্রাধান্য পায় একজন সংগ্রামী নারীর গল্প। একজন দীপাবলি সব নারীর কথা বলে।
প্রচারমাধ্যম হিসেবে নাটকের মানের পরিবর্তন হচ্ছে?
টিভি নাটক পরিবারের জন্য। যে কারণে নাটককে বলা হয় ড্রয়িংরুম কালচার। টিভির জন্য নির্মিত নাটক যখন অনলাইন, ফোনে বা অন্য ডিভাইসে দেখানো হয়, সেটা আমার কাছে কোনো অনুভূতি বহন করে না। নাটক অবশ্যই টিভির জন্য। অনলাইন কন্টেন্টের গল্পই আলাদা। যখনি অনলাইনের কন্টেন্ট ঘরের ড্রয়িংরুমে চলে আসছে, তখনি টিভি দেখা কমিয়ে দিয়েছেন। নিয়ম ভেঙে ড্রয়িংরুম কালচার নষ্ট করছে অনলাইন কনটেন্ট। নাটক টেলিভিশনের জন্যই হওয়া উচিত। সবার সঙ্গে ড্রয়িংরুমে নাটক দেখেই অভিনয়ে আগ্রহী হয়েছি।
আপনার অভিনীত উল্লেখযোগ্য তিনটা চরিত্র।
‘রশনী’ নাটকের রশনী চরিত্র, ‘অলসপুর’ ধারাবাহিকের কলি আর ‘ভালোবাসার চতুষ্কোণ’ নাটকের সামিয়া। তিনটি চরিত্রই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
আমাদের নাটকের অঙ্গনটা শিল্পীনির্ভর হয়ে যাচ্ছে,এ বিষয়ে জানতে চাচ্ছি?
এখন একজন নির্মাতা তাঁর গল্পের অন্য কে উপযুক্ত, সেটা নিয়ে ভাবছেন না। নাটক বানানোর আগেই ভাবছেন কাকে নিলে নাটক হিট হবে, কাকে নিলে নাটকটির বিক্রি সহজ হবে। চরিত্র অনুযায়ী শিল্পী না নিয়ে সবাই পপুলার আর্টিস্ট খুঁজছেন। সবাই চাচ্ছেন তাঁদের নাটকটা যেন হিট হয়। সে জন্য অনলাইনে যাঁদের ভিউ বেশি, তাঁদের কাস্টিং করতেই ব্যস্ত সবাই। শিল্পীনির্ভরতা নির্মাতারাই তৈরি করেছেন। প্রথম থেকে যদি নির্মাতারা ভাবতেন আমার চরিত্রের জন্য যাঁকে দরকার, তাঁকেই কাস্টিং করব, তাহলে শিল্পীনির্ভর মিডিয়া হতো না।
কাস্টিংয়ের জন্য আপনাকে কেন নির্মাতারা পছন্দ করেন? একটি কারণ বলুন?
নির্মাতারা আমাকে পছন্দের কারণ, আমি বিভিন্ন রকম চরিত্রে সাবলীলভাবে অভিনয় করতে পারি। গল্প অনুযায়ী নির্মাতাদের চাহিদা বুঝতে পারি। নির্মাতাদের পছন্দের যেকোনো চরিত্রের জন্য আমি সব সময় তৈরি থাকি। যদিও সব চরিত্রে অভিনয় করা খুবই কঠিন। এই চ্যালেঞ্জটা আমি নিতে পছন্দ করি। কঠিন জিনিসগুলোই আমার ভালো লাগে। নির্মাতা যে ধরনের চরিত্র আমাকে দিয়ে অভিনয় করিয়ে নিতে চান, সেই চরিত্রে অভিনয় দিয়ে আমি তাঁদের খুশি করতে পারি।
ক্যারিয়ারে ১০ বছর পার করলেন, ফিরে তাকালে প্রথমে কী মনে পড়ে?
এতগুলো বছর অভিনয় করতে করতে নিজেকে সময় দেওয়া হয়নি। আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি, লাইফে বোর হয়ে গেছি। নিজের কোনো ইচ্ছাই এত দিন পূরণ করতে পারিনি। এখন নিজেকে একটু সময় দিচ্ছি। নিয়মিত জিম করছি, গিটার বাজানো শিখছি। ক্ল্যাসিক্যাল ডান্স আমার লাইফের অন্যতম একটি, ইচ্ছা সেটা পূরণ।
নাটকের কোন তিনটি সমস্যা এগিয়ে রাখবেন?
প্রথমত, গল্প। এখন একই রকম গল্পে ঘুরেফিরে নাটক হচ্ছে। গল্প নিয়ে কেউই এক্সপেরিমেন্ট করতে চান না। দ্বিতীয়ত, মিডিয়ায় শিল্পীদের একটি ঘরানা তৈরি হয়েছে। এই ঘরনার এই শিল্পী, ওই ঘরনার নির্মাতা তাঁকে ছাড়া কাজ করেন না। এই ঘরনার শিল্পী, ওই ঘরনার শিল্পীর সঙ্গে কাজ করেন না। এটা থেকে বের হওয়া উচিত। কারণ, একজন শিল্পী সবার। শিল্পী কখনো ঘরানার মধ্যে বন্দী হতে পারেন না। সর্বশেষ আমাদের শিল্পীদের মধ্যে ঐক্য নেই। এখানে সবাই আমরা নিজেদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত আছি। অন্য শিল্পীর কথা কেউ চিন্তা করছে না। শেষ জীবনে বেশির ভাগ শিল্পীকে একা থাকতে হয়। তার কারণ, আমাদের নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বেশি। অন্য একই পেশার মানুষের মধ্যে যে সহমর্মিতা থাকে, সেটা আমাদের মধ্যে কম দেখা যায়। ক্যারিয়ারের দুঃসময়ে এই পেশার মানুষেরা একা হয়ে যান।
তারকাদের বেকার হওয়ার পেছনে কী কারণ বলে মনে করেন?
ড্রয়িংরুমের কন্টেন্ট যখন একটি ডিভাইসে চলে আসছে, তখন সেটা আকার ছোট হয়ে যাচ্ছে। স্ক্রিন ছোট হয়ে যাচ্ছে। সেটার ব্যাপ্তি ছোট হচ্ছে। তখন বাধ্য হয়ে গল্প থেকে চরিত্র ছাঁটাই হচ্ছে। এভাবেই দিন শেষে আমাদের শিল্পীরা কর্মবিমুখ হয়ে যাচ্ছেন। তা ছাড়া আমরা সবাই সবার কথা ভাবলে মিডিয়ায় বেকার শিল্পী তৈরি হতো না।