প্রযুক্তির কল্যাণে বদলে যাচ্ছে কনটেন্ট প্রচারের ধারা। এতে সুবিধা যেমন আছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে বিপত্তিও। টেলিভিশনে নাটক প্রচারের ক্ষেত্রে প্রিভিউ কমিটি থাকে, কিন্তু ইউটিউব স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম হওয়ায় যে কেউ নাটক বানিয়ে প্রকাশ করতে পারেন। এতে নির্মাতার স্বাধীনতা থাকলেও নাটকের মান পড়ছে। সাবস্ক্রাইবার ও ভিউর আশায় দর্শক টানতে তৈরি করা হচ্ছে সস্তা সংলাপ। নামগুলোও দেওয়া হচ্ছে অরুচিকর। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন নাটকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
ইউটিউব চ্যানেল আছে টেলিভিশনগুলোরও। পাশাপাশি গান প্রস্তুতকারী অনেক প্রতিষ্ঠানও ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে নাটক বানাচ্ছে। সম্প্রতি ইউটিউবে প্রকাশিত বেশ কিছু নাটকের অরুচিকর নাম পাওয়া গেল। ব্যাচেলর পয়েন্ট, সেন্ড মি নুডস, বেড সিন, ছ্যাঁকা খেয়ে ব্যাঁকা, চুটকি ভান্ডার, সেলিব্রেটি কাউ, লেডি কিলার, প্লেবয়, ক্রেজি লাভার, ড্যাশিং গার্লফ্রেন্ড, ম্যানেজ মকবুল, চ্যাতা কাশেম, এক্সফেল মফিজ ইত্যাদি। আবার কিছু নাটকের নাম ভালো হলেও ভেতরে থাকছে সস্তা সংলাপ। ইউটিউবভিত্তিক নাট্য নির্মাতা মাহমুদ মাহিন বলেন, ‘টেলিভিশনে বাধ্যবাধকতা থাকে। তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাস্তবসম্মত অনেক কিছুই দেখানো যায় না। আমরা প্রজন্মের বাস্তব চিত্রটা দেখানোর চেষ্টা করি। ইউটিউবে এটা দেখানো যায় সহজে। একজন পরিচালক কাজের স্বাধীনতা খুঁজবে। আমাদের দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের কনটেন্ট দর্শকেরা নিতে পারেন না। কলকাতায় যা অবলীলায় গ্রহণ করা হয়। দর্শক ধরার চেয়েও বাস্তব চিত্রটা তুলে ধরতে চাই। এটাও ঠিক, এসব করতে গিয়ে কিছু বিষয় খোলামেলা উপস্থাপন হয়ে যাচ্ছে।’
বিষয়টা নিয়ে নাট্যকার মাসুম রেজা বললেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘এসব খোঁড়া যুক্তি। এটা হতে পারে না। আমরা টেলিভিশনে যা দেখাতে পারি না, তা কোথাও দেখাতে পারব না। পৃথিবীব্যাপী তাহলে আমরা কেন রেটিং করি? সামাজিকতার কারণে একটা পর্যায় পর্যন্ত দেখাতে কিংবা বলতে পারি, এর বাইরে কেন দেখাতে হবে? স্বার্থটা আসলে কাদের উদ্ধার হচ্ছে? কার লাভ হচ্ছে, কার ক্ষতি হচ্ছে? দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, আমাদের যাঁরা ভালো কাজ করতেন, হয়তো বেশি টাকার কারণে তাঁরা এই দিকটায় ঝুঁকছেন। এটা চলতে পারে না। এটাকে নিয়ন্ত্রণ নয়, পরিবেশনা রীতির মধ্যে আনা উচিত। মনিটরিং থাকা উচিত। সুস্থ বিনোদনের জন্য যাঁরা নাটক করছেন, এটা তাঁদের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা।’
ধ্রুব মিউজিক স্টেশনের ইউটিউব চ্যানেলে আছে ব্যাচেলর পয়েন্ট নামে একটি ধারাবাহিক নাটক। কাজল আরেফিন এটির পরিচালক। নাটকটির গল্পের উপস্থাপন ও সংলাপ নিয়েও আপত্তি তুলেছেন কেউ কেউ। বিষয়টি নজরে এলে ধ্রুব গুহ বলেন, ‘দর্শকদের বিনোদনের জন্য এটা বানানো। পরিচালক ও প্রযোজনা সংস্থাকে বলে দিয়েছি, বিনোদন দেব ঠিকই, কিন্তু মান যেন ঠিক থাকে।’
নির্মাতা অমিতাভ রেজা বলেন, ‘কোন ধরনের দর্শকের জন্য আমি নাটক, ওয়েব সিরিজ কিংবা চলচ্চিত্র বানাচ্ছি, সেই বিষয়টা মাথায় রেখে রেটিং করে দেওয়া উচিত। আমি আমার দায়বদ্ধতা নিয়ে কাজ করব।’
ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাহউদ্দিন লাভলু বলেন, ‘এ ধরনের নাটক যাঁরা তৈরি করেন, তাঁদের রুচি ও মূল্যবোধে সমস্যা আছে। নিজেদের মান–সম্মানের বিষয়টি উপলব্ধি করতে হবে। যাঁরা শুধু ইউটিউবের জন্য নাটক বানান, তাঁদের সঙ্গে আমরা সাংগঠনিকভাবে বসার কথাও ভেবেছি।’
অভিনয়শিল্পী মামুনুর রশীদ বলেন, ‘মানলাম স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম, তাই বলে যাচ্ছেতাইভাবে কিছু করতে পারি না। কাণ্ডজ্ঞানহীন কিছু লোকের হাতে শিল্প–সাহিত্য আটকে গেছে। তারা যা খুশি তা–ই করছে। স্বাধীনতার অপব্যবহার করছে।’