দেড় দশক আগে ৮জুলাই মুক্তি পেয়েছিল 'হাজার বছর ধরে' সিনেমাটি। জহির রায়হানের উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটি মুক্তির পর টুনি চরিত্রের কিশোরী শারমীন জোহা শশীর প্রশংসা করতে থাকেন সবাই। এই ছবি শশীকে চলচ্চিত্র অঙ্গনে সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়েছিল। কিন্তু অভিনয়ের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তাঁকে আর নায়িকা হিসেবে দেখা যায়নি!
শশীর নায়িকা হতে না পারার পেছনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তখনকার সময়। 'হাজার বছর ধরে' যখন বের হয়, তখন চলচ্চিত্রের অন্ধকার সময়। শশী বলেন, 'ওই সময় চলচ্চিত্র ক্রমেই তার গৌরব হারাচ্ছিল। নিম্নমানের রুচিহীন ছবি হচ্ছিল। সেসব ছবিতে ছিল কাটপিস। এমনকি কিছু ভালো ছবির ভেতরেও কাটপিস ঢুকে যাচ্ছিল। তখন আমি ছোট। “হাজার বছর ধরে”র পর প্রচুর অফার এসেছে। বাবা-মা থিয়েটার করতেন, তাঁরা গল্প দেখেই বুঝতে পারতেন। তাই তাঁরাও চাইছিলেন না আমি ছবি করি। নয়তো আমি ২০–২৫টি ছবির নায়িকা হতে পারতাম।'
'হাজার বছর ধরে' মুক্তি পায় ২০০৫ সালের ৮ জুলাই। ২০০৩ সালের শেষের দিকে ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হন শশী। তখন সবে দশম শ্রেণির ছাত্রী। শুটিংয়ের মাঝামাঝি আবার এসএসসি পরীক্ষাও দিয়ে এসেছেন। চলচ্চিত্র অঙ্গনের পরিবেশ দেখে শশী মনোযোগী হন লেখাপড়ায়। পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়ম করে সিনেমার প্রস্তাব নাকচ করেছেন একের পর এক। এভাবে বছর পাঁচেক সময় গেলে তিনি বুঝে নেন, চলচ্চিত্র অঙ্গন তাঁর নয়। 'এড়িয়ে যেতে যেতে দেখি, ভালো ফিল্ম নেই। ফিল্মের মানুষেরা আমাকে ভুলে গেলেন। যদিও তখন আমি নাটক করছিলাম। ভীষণ ব্যস্ততা যাচ্ছিল।'
২০১০ থেকে নাটকে সক্রিয় হয়ে পড়েন শশী। একপর্যায়ে সেখান থেকেও আড়াল করে ফেলেন নিজেকে। একসময় হঠাৎ করেই টিভি পর্দা থেকে হারিয়ে যান তিনি। কী কারণ ছিল এর? শশী বলেন, 'ত্রিশের বদলে যদি বত্রিশ দিনে মাস হতো, তাহলে আমার সুবিধা হতো! এতটাই চাপ যাচ্ছিল। চরিত্রের প্রস্তুতির জন্য নিয়মিত কাজ না করে সব সময় একটা গ্যাপ দিতাম। অনেক সময় দেখতাম অনেক নির্মাতা কাজের প্রতি মনোযোগী নন। অনেক নাটকের চিত্রনাট্য নেই, আছে কেবল লাইন আপ, বাকিটা আমাকে ইম্প্রোভাইজ করতে হবে! এ জন্য অনেককে এড়িয়ে চলতে চলতে নাটকেও কাজ কমিয়ে দিতে শুরু করি।'
অনেকেই তো করে। শশী কেন করলেন না? এ নিয়ে শশী বলেন, 'ছবি করার সময় সুচন্দা আন্টির মতো বড় একজন মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছিলাম। আমি চেয়েছি, আমার কাজ হবে বাহুল্যবর্জিত, গোছালো। বাসায় বসেই আমি জেনে যাব আমার চরিত্র ও নাটকের গল্প। সারা দিন গিয়ে সেটে বসে থাকব, ডিরেক্টর হুট করে এসে কিছু একটা করতে বললেই করে ফেলব, সে রকম ইম্প্রোভাইজ করার মতো মেধাবী আমি নই।'
তবে 'হাজার বছর ধরে'র সাফল্য এখনো উপভোগ করেন শশী। কোথাও গেলে তাঁকে নায়িকা হিসেবেই অভ্যর্থনা জানানো হয়। পেছন থেকে বহুবার শুনেছেন, ওই দেখ দেখ, হাজার বছরের নায়িকা যায়। সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি কী ছিল? শশী বলেন, 'ছবিটি আজকের আমাকে তৈরি করেছে। নইলে আমি “শশী” হয়ে উঠতে পারতাম না। জীবন ও কর্মক্ষেত্রের জন্য উপযোগী অনেক কিছুই শিখেছি আমি। এখনো কোনো চরিত্র করতে গেলে প্রতিমুহূর্তে মনে হয় সুচন্দা আন্টির কথা। মনে হয় তিনি আমার পাশে থেকে নির্দেশনা দিচ্ছেন। ওই ছবিতে আমার ভার্সেটাইল চরিত্র ছিল। তরুণী টুনির চরিত্র, বৃদ্ধার চরিত্র, ইমোশনাল দৃশ্য, রোমান্টিক দৃশ্য কীভাবে করব, সবই আন্টির কাছে শেখা।'
নায়ক রিয়াজের ভক্ত ছিলেন শশী। রিয়াজ তখন ভীষণ জনপ্রিয়। তাঁর সঙ্গে অভিনয় করবেন জানার পর রোমাঞ্চিত বোধ করতে থাকেন। তিনি বলেন, 'সালমান শাহর পরেই আমার রিয়াজ ভাইকে ভালো লাগত। যখন শুনলাম আমার হিরো রিয়াজ ভাই, তখন ভেতরে–ভেতরে একটা এক্সাইটমেন্ট কাজ করছিল। ভালো লাগছিল, আবার ভয় করছিল এটা ভেবে যে কীভাবে তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে পারফর্ম করব!'
নায়ক রিয়াজের সঙ্গে একটা দৃশ্যের কথা মনে পড়তেই খুব আনন্দ পেলেন শশী। বলেন, 'রিয়াজ ভাই পুকুরপাড়ে কয়লা দিয়ে দাঁত মাজছিলেন। আমি পেছন থেকে গিয়ে দেখব তাঁর পিঠে একটা কাটা দাগ। তাঁকে জিজ্ঞেস করব, কীভাবে কেটেছে। তিনি বলবেন, রাতে মাছ ধরতে গিয়ে কেটে গেছে। দৃশ্যটা ছিল রোমান্টিক। কাটা জায়গাটা স্পর্শ করে আমি তাঁকে বলব ব্যথা করছে কি না। ওই দৃশ্যের জন্য যতটা ইমোশনাল হতে হয়, আমি সে রকম হতে পারছিলাম না। অনেকবার চেষ্টা করেছি, তারপরও অ্যাকশন বলার পর আর হচ্ছিল না। তখন ৩৫ মিলিমিটারে শুটিং হতো। আমার জন্য অনেক রিল নষ্ট হচ্ছিল।' সুচন্দা আন্টি রেগে গিয়ে বলেছিলেন, রিয়াজ একটা সুদর্শন ছেলে। তুমি তাঁর সঙ্গে অভিনয় করছ, তাঁকে দেখে কি তোমার ন্যূনতম কোনো ফিলিংস হচ্ছে না।
শশী বর্তমানে শুটিংয়ে। 'সত্যপুরের নিত্যদিন' নামে বিটিভির ২০ পর্বের একটি নাটকের দৃশ্য ধারণের কাজ চলছিল। 'তোলপাড়' নামের একটি ধারাবাহিক নাটক দিয়ে গত মাসে করোনাকালীন শুটিংয়ে ফেরেন। ঈদ ও ধারাবাহিকের জন্য কাজ করছেন তিনি।