প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ওপর সচিবালয়ে নির্যাতন ও তাঁকে কারাগারে প্রেরণের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশনের (এফটিপিও) নেতারা। যৌথ বিবৃতিতে তাঁরা জানান, একজন সাংবাদিককে আটক রেখে নির্যাতন করা ও জেলে পাঠানোর বিষয়টি তাঁদের বিবেককে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে।
এফটিপিওর পক্ষ থেকে সংগঠনটির চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ, টেলিপ্যাব সভাপতি ইরেশ যাকের ও সাধারণ সম্পাদক সাজু মুনতাসির, ডিরেক্টর গিল্ড সভাপতি সালাহউদ্দিন লাভলু ও সাধারণ সম্পাদক এস এম কামরুজ্জামান সাগর, অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব নাসিম, টেলিভিশন নাট্যকার সংঘের সভাপতি মাসুম রেজা ও সাধারণ সম্পাদক এজাজ মুন্না একটি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন।
সেখানে বলা হয়, সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতায় বাধা দেওয়া বড় অন্যায়। আরও বড় অন্যায় প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাংবাদিক রোজিনাকে থানায় পাঠিয়ে দেওয়া। সেখান থেকে তাঁকে যেভাবে আদালতে হাজির করে জেলে পাঠানো হয়েছে, সেটা সীমা লঙ্ঘন করেছে। মামুনুর রশিদ বলেন, ‘সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ওপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু মানুষ যেভাবে নিপীড়ন চালিয়েছে, সেটা এর আগে এভাবে দেখা যায়নি। সৎ সাংবাদিকতার প্রতীক এই নারী সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। তাঁর ওপর বর্বরতা সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে গেছে। বিষয়টি আমাদের বিবেককে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে।’
অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘সচিবালয় দেশের সবচেয়ে নিরাপদ একটি স্থান। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ফাইল কীভাবে অরক্ষিত থাকে? একজন সাংবাদিক সেখানে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কীভাবে কর্মকর্তা–কর্মচারীর দ্বারা হেনস্তার শিকার হন? এই আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। রোজিনা ইসলামকে মুক্তি দিয়ে এই ঘৃণ্য ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
এফটিপিওর আওতায় ছোট পর্দায় ১৫টি সংগঠন এই ঘটনায় প্রতিবাদ জানায়। অন্য সংগঠনগুলোর মধ্য রয়েছে ক্যামেরাম্যান অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ভিডিও এডিটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, অডিও–ভিডিও টেকনিক্যাল হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, প্রেজেন্টার্স প্ল্যাটফর্ম অব বাংলাদেশ, টেলিভিশন অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টরস অর্গানাইজেশন অব বাংলাদেশ, টেলিভিশন মিডিয়া মেকআপ আর্টিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ টেলিভিশন মিডিয়া প্রডাকশন ম্যানেজার অ্যাসোসিয়েশন, শুটিং লাইট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, শুটিং হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ মিডিয়া লাইটম্যান অ্যাসোসিয়েশন, শুটিং ইউনিট মাইক্রোবাস চালক সমবায় সমিতি।
টেলিপ্যাবের সাধারণ সম্পাদক সাজু মনতাসির বলেন, ‘এটি একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। আমরা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। একজন সাংবাদিকের ওপর এমন অন্যায় আচরণ কেউ করতে পারে না। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। আর অনতিবিলম্বে সাংবাদিক রোজিনার নিঃশর্ত মুক্তি চাই।’
সাংবাদিক নিপীড়নের ঘটনা পৃথক বিবৃতি দিয়েছেন অভিনয়শিল্পী সংঘের নেতারা। সংগঠনের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিশিষ্ট সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আটকের ঘটনায় আমরা বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ। অনুসন্ধিৎসু সাংবাদিক হিসেবে তিনি স্বাস্থ্য খাতের অসংখ্য অনিয়ম ও দুর্নীতি দেশবাসীর কাছে তুলে ধরেছেন।’
এ ছাড়া রোজিনার মুক্তি ও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি চেয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ, বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা, বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, আইটিআই বাংলাদেশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ চারু শিল্পী সংসদ, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতিসহ আরও অনেক সংগঠন আলাদা বিবৃতি দিয়েছে।
গত সোমবার পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সেখানে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। তাঁকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য বারবার বলা হলেও দেওয়া হয়নি। পরে রাত সাড়ে আটটার দিকে পুলিশ তাঁকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। ওই দিন রাত পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ জানায়, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা হয়েছে। তাঁকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।