‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের এক ‘বদি’ চরিত্রই আবদুল কাদেরকে তুমুল জনপ্রিয়তা এনে দেয়। পরবর্তী সময়ে তাঁকে বিটিভির জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে নিয়মিত অভিনয় করতে দেখা গেছে। চাকরির কারণে নাটক বা অন্য মাধ্যমে খুব একটা নিয়মিত না হলেও এই ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের মামা-ভাগনে স্কিড নিয়ে নিয়মিত ছিলেন তিনি। আজকের পর থেকে ইত্যাদি অনুষ্ঠানের আর কোনো নতুন পর্বে দেখা যাবে না তাঁকে। ইত্যাদি অনুষ্ঠানের পরিকল্পক ও উপস্থাপক হানিফ সংকেত দেশের এই গুণী অভিনয়শিল্পীকে হারিয়ে ভীষণ শোকাহত।
গতকাল শনিবার সকালে যখন হানিফ সংকেতের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তাঁর কণ্ঠ জড়িয়ে আসছিল। তাঁর মতে, তিন দশক ধরে ইত্যাদি অনুষ্ঠানের নিয়মিত শিল্পী ছিলেন। তাঁদের একসঙ্গে অজস্র স্মৃতি। অসুস্থ হওয়ার আগেও ইত্যাদি অনুষ্ঠানের দৃশ্য ধারণে অংশ নেন আবদুল কাদের।
হানিফ সংকেত জানালেন, ইত্যাদি অনুষ্ঠানে আবদুল কাদের সর্বশেষ অংশ নেন অক্টোবরে। তখনো তিনি শারীরিকভাবে ভীষণ অসুস্থ। কিন্তু সবাইকে খুব একটা বুঝতে দেননি। তবে হানিফ সংকেতকে তাঁর অসুস্থতার বিষয়টি জানিয়েছিলেন।
হানিফ সংকেত বললেন, ‘তিন দশকে আমার ইত্যাদি অনুষ্ঠানে সব সময় থাকতেন তিনি। এই লম্বা সময়ে একজন মানুষের তো অনেক ধরনের সমস্যাই হয়। জ্বর কিংবা অন্যান্য অসুস্থতা। কখনো কোনো কারণে ইত্যাদি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে না পারলে, তাঁর খুব কষ্ট লাগত। এবারও যখন শুটিংয়ে দেখলাম, তাঁকে খুবই অসুস্থ দেখাচ্ছিল। জিজ্ঞেস করলাম, আপনি অসুস্থ নাকি? শরীরের এতটা খারাপ অবস্থা হলো কীভাবে। তখন না বললেও যাওয়ার আগে বললেন, আমার শরীরটা ভালো না। ব্যাকপেইন।’
শুটিং স্পট থেকে যাওয়ার সময় হানিফ সংকেতের কানে ফিসফিস করে বলছিলেন, ‘আমার শরীরটা খুব বেশি ভালো না। আমার জন্য দোয়া কইরেন।’
তিন দশকে অভিনয়শিল্পী আবদুল কাদেরের পাশাপাশি মানুষ আবদুল কাদেরকেও কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে হানিফ সংকেতের। তিনি বললেন, ‘এক জীবনে অনেক শিল্পী দেখেছি, অনেক মানুষ দেখেছি। সত্যিকার অর্থে ব্যক্তি আবদুল কাদের অসম্ভব একজন ভালো মানুষ ছিলেন, যিনি কারও সাতেপাঁচে ছিলেন না। সব সময় নিয়মশৃঙ্খলার জীবন যাপন করেছেন। আমার শুটিংয়ে সময়মতো চলে আসতেন। আবার সময়মতো চলে যেতেন। কখনো যদি ১০-১৫ মিনিট দেরি হবে বুঝতেন, আগেই জানিয়ে রাখতেন। কোনো ধরনের বাজে অভ্যাসও ছিল না।’
শোকাহত হানিফ সংকেত সবশেষে বললেন, আজ খুব কানে বাজছে, চোখে ভাসছে তাঁর সঙ্গে শেষ দেখাটা। শুটিং শেষে চলে যাওয়াটা। এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন, ভাবতেই যেন কেমন লাগছে।