শুটিং শুরুর নেপথ্যে...

উচ্চতর ভালোবাসা ভালোবাসা নাটকের দৃশ্যে মোশাররফ করিম এবং মম। ছবি: সংগৃহীত
উচ্চতর ভালোবাসা ভালোবাসা নাটকের দৃশ্যে মোশাররফ করিম এবং মম। ছবি: সংগৃহীত

ব্যবসায়িক কেন্দ্র এবং অফিস স্বল্প পরিসরে খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের সূত্রে অনেক নাট্যনির্মাতা দাবি জানান নিয়ম মেনে শুটিং চালু করার। পাঁচজন নাট্যনির্মাতা এবং তিনজন প্রযোজকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুটিং চালু নিয়ে সরকারি কোনো বাধানিষেধ নেই। অর্থনৈতিক সংকট এবং একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পেতে অনেক তারকা এবং কলাকুশলীরাই সচেতন থেকে শুটিং করতে চান। তবে অনেকেই আবার করোনার ভয়াবহতার কথা বলে শুটিং শুরুর ঘোর বিপক্ষে। এমন পরিস্থিতিতে শুটিং শুরু করা নিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষে–বিপক্ষে দুটি মত তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, এ মুহূর্তে একটা পক্ষের হাতে ঈদে প্রচারের জন্য এক শ থেকে দেড় শ নতুন নাটক আছে। অন্য পক্ষের হাতে ঈদে প্রচারের জন্য খুব বেশি নাটক নেই। যাঁদের হাতে ঈদের প্রচারের জন্য বেশি নাটক আছে, তাঁরাই ঈদে একচেটিয়া ব্যবসা করার জন্য কোনোভাবেই চাচ্ছেন না ঈদের আগে শুটিং হয়ে নাটকের সংখ্যা বাড়ুক।

খবর নিয়ে জানা যায়, ৭ মে থেকে শুরু হয়েছে বিজ্ঞাপনের শুটিং। সেগুলো এখনো চলছে। ডিরেক্টর’স গিল্ড সূত্রে জানা যায়, ২২ মার্চ থেকে শুটিং স্থগিত। তবে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আজ ১১ মে পুবাইলের একটি শুটিং বাড়িতে নাটক নির্মাণের কাজ চলছিল। নির্মাতা ছিলেন আদিবাসী মিজান। এই নির্মাতা জানান, ‘৮–৯ মাস আগে নেপালে ‘ঘরকোনা’ (নাম পরিবর্তন হতে পারে) নামে একটি ঈদ ধারাবাহিকের শুটিং করেছিলাম। সেই গল্পে জাহিদ হাসান গ্রাম থেকে নেপালে যায়। সেই নাটকের দুইটা শর্ট বাকি ছিল। আমাদের পরিকল্পনা ছিল নির্দিষ্ট দূরত্ব এবং সচেতনতা মেনেই ৪০ মিনিটের মধ্যে কাজ শেষ করব। পরে সংগঠন থেকে ফোন দিলে সবাই কাজ না করেই চলে এসেছি।’


করোনায় অনেক নির্মাতার কিছু নাটকের প্যাচওয়ার্কের কাজ বাদ পড়ে আছে। অনেকেই সেগুলো প্রচারে দিতে পারছেন না। এই অর্থনৈতিক সংকটে অনেকেই চান এই কাজগুলো করার আপাতত সুযোগ দেওয়া হোক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নির্মাতা বলেন, ‘আমাদের বেশির ভাগ নির্মাতার অর্থনৈতিক অবস্থা এমনিতেই ভালো নয়। করোনাকালীন নির্মাতারা এখনো সরকার বা কারও কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি। ঈদের নাটক করেই আমাদের কিছুটা আয় হয়। আমরা কারও কাছে হাত তো পাততে পারি না। জীবন বাঁচাতে আমরা কি চাইলে স্বল্প পরিসরে নিরাপত্তা নিয়ে, সেভাবে গল্প বাছাই করে শুটিং করতে পারি না? অথচ এই করোনার মাঝেও অনেকে নিজের লাভের কথা ভেবে রাজনীতি করে ঈদের আগে শুটিং বন্ধ করে রেখেছে।’


ডিরেক্টর’স গিল্ডের সভাপতি সালাহউদ্দিন লাভলু বলেন, ‘সরকার যতবার সাধারণ ছুটি বাড়িয়েছে, আমরা সবার স্বাস্থ্য সচেতনতায় ততবার শুটিং বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছি। এখন জরুরি প্রয়োজন হলে হয়তো স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিছুটা শুটিংয়ের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে, সেই সিদ্ধান্ত আমরা সাংগঠনিকভাবে ১৫ মের দিকে নিব।’ তিনি এটাও জানান, সরকারিভাবে শুটিং করতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। মূলত সহকর্মীদের সচেতনতার জন্যই শুটিং বন্ধ রাখা হয়েছে।

‘জামাই হইতে সাবধান’ ঈদ নাটকের দৃশ্যে জাহিদ হাসানসহ অনেকে। ছবি: সংগৃহীত

প্রতি ঈদে ৭০–৮০টি নাটক প্রচারিত হয় প্রযোজক আলী বসিরের। এই ঈদে তাঁর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে এনটিভি ও বাংলাভিশনে ১৪টি নাটক প্রচারিত হবে। মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ‘শুটিংয়ে সেভাবে সরকারি বাধানিষেধ নেই। করোনায় তো নতুন করে সংক্রমণ চীনেও হয়েছে। এই অবস্থায় আমি একবার বলেছিলাম, শুটিং বন্ধ না রেখে যদি সম্ভব হয় নতুন করে কিছু নিয়মকানুন মেনে শুটিং করা যায় কি না?’
শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব নাসিম বলেন, ‘সচেতন থাকতেই আমরা সবার আগে শুটিং বন্ধ করেছিলাম। এখন যেহেতু সবকিছু স্বাভাবিক হচ্ছে, এই অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আগামীতে কি হয়, সেটা বিবেচনা করেই ১৫ মে সাংগঠনিকভাবে সিদ্ধান্ত নেব।’


বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রযোজক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাজু মনতাসির বলেন, ‘আমরা কলকাতা এবং মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির নীতিমালা অনুসরণ করে খুব শিগগির শুটিংয়ে যাচ্ছি। এ ছাড়া সরকার গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি খোলার জন্য যেসব নীতিমালা দিয়েছে, সেগুলো অনুসরণ করা হবে। তবে ১৫ তারিখের আগে শুটিং নয়।’