সতর্ক থাকতে অনেক নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীরা শুটিংয়ে অংশ নিচ্ছেন না
সতর্ক থাকতে অনেক নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীরা শুটিংয়ে অংশ নিচ্ছেন না

শুটিংয়ে যাচ্ছেন না তারকারা, দেড় শতাধিক নাটকের শুটিং স্থগিত

স্বাস্থ্যবিধি মেনে লকডাউনে শুটিং করতে বাধা নেই। তবে সতর্ক থাকতে অনেক নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীরা শুটিংয়ে অংশ নিচ্ছেন না। কেউ কেউ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন লকডাউনের পর। কেউবা আগেই জানিয়েছিলেন যে শুটিং করবেন না। ফলে বড় তারকাদের কাজ করার কথা ছিল, এ রকম প্রায় ২০০ নাটকের শুটিং বাতিল হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, এসবের বেশির ভাগ নাটক প্রচার হওয়ার কথা পবিত্র ঈদুল ফিতরে।

এর মধ্যেও শুটিং চলছে। অভিনয়শিল্পীদের অনেকে সহকর্মীদের কাছ থেকে খবর নিয়ে জানতে পেরেছেন, শুটিং ইউনিটে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। মেকআপ নেওয়া, শুটিং করা, বাড়ি থেকে স্পটে যাওয়া-আসায় সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যায়। কারণ, শুটিং করতে গেলে ছাড় দিয়ে কাজ করা যায় না। তাই ঘরবন্দী অভিনয়শিল্পীরা করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি বুঝেই কাজে ফিরতে চান।

মোশাররফ করিম। ছবি : সংগৃহীত

স্থগিত শুটিংয়ের নাটকগুলোতে কাজ করার কথা ছিল মোশাররফ করিম, ফজলুর রহমান বাবু, মেহ্‌জাবীন চৌধুরী, সাবিলা নূর, তৌসিফ, জোভান, তাসনিয়া ফারিনসহ আরও অনেকের। এই তারকাদের ১০টির বেশি নাটকের শুটিং বন্ধ করতে হয়েছে। এ ছাড়া জাহিদ হাসান, তাহসান খান, আনিসুর রহমান মিলনসহ একাধিক জ্যেষ্ঠ তারকা ছয়টির মতো একক ও ধারাবাহিকের শুটিং স্থগিত করেছেন। বেশ কজন নির্মাতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই মুহূর্তে আফরান নিশো, অপূর্ব, তৌসিফসহ আরও একাধিক অভিনয়শিল্পী শুটিং করতে রাজি নন। নির্মাতা মিজানুর রহমান আরিয়ান বলেন, ‘আমি ইতিমধ্যে তিনটি কাজ বন্ধ করেছি। এর মধ্যে “যদি কোনো দিন” নাটকে অপূর্ব ও মেহ্‌জাবীনের অভিনয় করার কথা ছিল। ঈদের আগে কাজ করতে পারব কি না, জানি না।’

তারকারা কেন কাজ করছেন না? মোশাররফ করিম জানালেন, ব্যক্তিগত কাজে এই মুহূর্তে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। চলতি মাসের সব কাজই বাতিল করেছেন। ২৭ এপ্রিল তাঁর ঢাকায় ফেরার কথা। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি কাজের উপযোগী নয়। কিছু নাটকের শিডিউল এখনো দেওয়া আছে। সেসব শুটিং করা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। তবে ঝুঁকি নিয়ে কোনো কাজ করব না।’

জাহিদ হাসান

গত বছর প্রথমবার দীর্ঘ সাধারণ ছুটির পর কলাকুশলীদের কথা ভেবে প্রথম দিকেই শুটিংয়ে ফিরেছিলেন জাহিদ হাসান। এবারের লকডাউনে অনেকে শুটিং করলেও তিনি বিরত রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি এবার খুবই ভয়ানক। চারপাশের পরিচিত মানুষগুলো মারা যাচ্ছে, এসব খবর দেখে আর কাজ করতে ইচ্ছা করে না। ঘরেই–বা কত দিন বসে থাকা যায়। আমাদের সঙ্গে অনেকের জীবিকা জড়িত। পরিস্থিতি ভালো হলে হয়তো ঈদের আগে দু–একটি কাজ করতে পারি।’

তাহসান

বছরের শুরুতে অনেকেই ভেবেছিলেন, পরিস্থিতি ভালো হয়ে যাবে। ঈদের নাটকে কাজও করতে পারবেন। কারণ, গত বছরও লকডাউনের কারণে ঈদের শুটিং করতে পারেননি অনেকেই। এ বছর ঈদ উপলক্ষে বেশ কিছু নাটকে শিডিউল দিয়েছিলেন তাহসান খান। প্রথম দিকে ভেবেছিলেন কাজ করবেন। করোনা পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করায় কাজ কমিয়ে দেন তিনি। তাহসান বলেন, ‘লকডাউনে এখন পর্যন্ত পাঁচটি নাটকের শুটিং বাতিল করেছি। পরিস্থিতি এখনো ভালো নয়। লকডাউন শিথিল করলে হয়তো কিছু কাজ করতে পারি।’

মেহজাবীন চৌধুরী

উত্তরা ও পুবাইলের দুটি শুটিং ইউনিট সূত্র জানিয়েছে, ঈদের একক ও সাত খণ্ডের ধারাবাহিক নাটকের শুটিং চলছে সেখানে। তবে সেসব নাটকে প্রথম সারির কোনো অভিনয়শিল্পী নেই। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে এক নির্মাতা বলেন, ‘অনেক ভেবেচিন্তে শুটিংয়ে আসতে হয়েছে। লাইট-ক্যামেরা নিয়ে আলোর মধ্যে থাকি বলে বাইরে থেকে উজ্জ্বল দেখায়। কিন্তু আমাদের অনেকের দিন আনি দিন খাই অবস্থা। জীবিকার জন্য বাধ্য হয়ে শুটিং করতে হচ্ছে। নইলে না খেয়ে থাকতে হবে। বাসাভাড়া দিতে পারব না।’ তিনি জানান, বেশির ভাগ শুটিং ইউনিট স্বাভাবিক সময়ের তিন ভাগের এক ভাগ লোক নিয়ে কাজ করছে। যতটা সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কাজ করছেন তাঁরা।

সাবিলা নূর

গত মাসের ২৯ তারিখ থেকে মেহ্‌জাবীন চৌধুরী শুটিং করছেন না। এখন পর্যন্ত ১০টি কাজ বাতিল করেছেন। ঈদের আগে পরিস্থিতি ভালো না হলে আরও পাঁচ-সাতটি নাটকের শুটিং বাতিল করতে হবে। তিনি বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে কাজ করা খুবই কঠিন। সবার করোনা পরীক্ষা করে যদি শুটিংয়ের ব্যবস্থা থাকত, তাহলে ঝুঁকি নিয়ে হলেও কাজে ফেরা যেত। কিন্তু আমাদের এখানে সেটা সম্ভব নয়।’

টেলিভিশন প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজু মুনতাসির জানান, যাঁদের নাটকের ভিউ বেশি, তাঁরাই শুটিং করছেন না। তা ছাড়া ঢাকা ও ঢাকার বাইরে শুটিং হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ঈদে নাটকের ঘাটতি থাকতে পারে। তবে সবাই নিয়ম মেনে শুটিং করলে হয়তো ঈদের জন্য আরও দেড় থেকে ২০০ নাটক বেশি বানানো যেত।’

তাসনিয়া ফারিন। ছবি: ফেসবুক থেকে