একদিন বাড়ির বউ, তারপর মা হয়েছেন তাঁরা। তারও আগে ছিলেন বিনোদন অঙ্গনের প্রিয় মুখ, প্রিয় স্বর। তাঁরা যেমন সংসারে সফল, তেমন পেশাজীবনেও দেন না একচুল ছাড়। আবার সন্তান হোমওয়ার্ক করল কি না, দুধটা না খেয়ে জানালা দিয়ে ফেলল কি না, এসবের খোঁজও রাখেন। সংসার আর পেশাজীবন—দুই মাঠেই ছক্কা হাঁকানো সেই নারীদের একজন সাদিয়া ইসলাম মৌ, বাংলাদেশের মডেলিংয়ের আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র তিনি।
সাদিয়া ইসলাম মৌ দেশের সেরা মডেল, নৃত্যশিল্পী, অভিনেতা জাহিদ হাসানের স্ত্রী, পুষ্পিতা, পূর্ণের মা। যুগের পর যুগ ধরে সফল অলরাউন্ডারের মতো এই সব ভূমিকা পালন করে আসছেন শক্ত হাতে। ‘মাথা খাটিয়ে’ তিনি সবটাই সামলেছেন।
নব্বইয়ের দশক থেকে শুরু করে এখনো তিনি সমান জনপ্রিয়। আর নতুন প্রজন্মের মডেলদের কাছে তিনি আইকন। এত কিছু একজীবনে একসঙ্গে কীভাবে? মৌ জানান, যেকোনো পরিবর্তনে, যেকোনো কাজে সময় দেওয়াটা জরুরি। যখন যেটা সময় দাবি করে, তখন সেটাকে প্রায়োরিটি লিস্টের ওপরে ওঠান তিনি।
মৌ বললেন, ‘এখনো পরিবার সামলানোর দায়িত্ব মূলত মেয়েদের ওপরেই পড়ে। বিয়ের পরেই যদি আমি হুট করে কাজে চলে যাই, তাহলে তো হবে না। বুঝে ওঠার জন্য নিজেকে সময় দিতে হবে। ছেলের পরীক্ষা থাকলে তখন শুটিংয়ের ডেট দিই না। এখন ওরা বড় হয়েছে। তাই এখন আমি কাজে আগের চেয়ে বেশি সময় আর মনোযোগ দিতে পারি। শুক্রবারটা আমার ছেলে ঘুম থেকে উঠে আমাকে দেখতে চায়। এটা আমি এখনো মেইনটেইন করি।’
দীর্ঘ সময় ধরে একটা সম্পর্ক সতেজ রাখার মন্ত্র শিখতে চাইলে বললেন, ‘এটা আসলে কারও একার হাতে নেই। দুজন দুজনকে বোঝা খুবই জরুরি।’ ‘কাজ করো বা কাজ কোরো না’—কখনো এমন কিছুই বলেননি সঙ্গী জাহিদ হাসান। ‘বলেননি’ না বলে এ ক্ষেত্রে ‘বলতে হয়নি’ বলাটাই সমীচীন। কারণ, শুরু থেকেই কখন কোনটা জরুরি, সেটা বুঝে পথ চলেছেন সাদিয়া ইসলাম মৌ। তাঁর ক্যারিয়ার যেকোনো ক্যারিয়ারিস্টের জন্য ঈর্ষণীয়। অথচ ক্যারিয়ারের সবটাই নাকি মায়ের চাওয়া। নিজের অতটা আগ্রহ ছিল না কোনো কিছুতেই। মায়ের স্বপ্নপূরণে এতটুকু পিছপা হননি তিনি। পরিবারকে একটা নির্দিষ্ট সময় দেওয়ার পর আট–দশ বছর ধরে আবারও নিয়মিত কাজে ফিরেছেন মৌ।
প্রায় চার বছর পর অভিনেতা আনিসুর রহমান মিলনের বিপরীতে একটি নাটকের শুটিং শুরু করেছেন তিনি। ঘোর শিরোনামের সেই নাটক দেখানো হবে অসম প্রেমের গল্প। ছয় পর্বের ওয়েব সিরিজ সিক্সেও দেখা দেবেন তিনি। তবে নাচ মৌয়ের সবচেয়ে প্রিয়। আরটিভি স্টার অ্যাওয়ার্ডে অ্যারাবিক মিউজিক পিসের সঙ্গে মৌয়ের নাচে মুগ্ধ হয়েছেন অসংখ্য দর্শক। এরপর নেচেছেন লন্ডন হাইকমিশনের একটি অনুষ্ঠানে। বঙ্গবন্ধুর কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে এ আয়োজনে তিনি প্রদীপ নাচ, ভরতনাট্যম ও কত্থক নাচ করেছেন ভার্চ্যুয়াল শোতে। সেটি প্রচারিত হয়েছে লন্ডনে। ২ মার্চ একটি পাঁচ তারকা হোটেলে অংশ নিয়েছেন ‘অপরাজিতা’র গ্রান্ড ফিনালেতে। সেখানে নেচেছেন তিনি। সেটি আজ প্রচারিত হবে এনটিভিতে, নারী দিবসের বিশেষ অনুষ্ঠান হিসেবে। এভাবেই সময়ের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে সফলতার হাত ধরে পথ চলছেন মৌ।