আজ ২৫ মার্চ অভিনেতা ফারুক আহমেদের জন্মদিন। ৩১ বছরের ক্যারিয়ারে দিনটি কখনো উদ্যাপন করেননি এই অভিনেতা। দেশের শক্তিমান এই অভিনেতার সহজ-সরল জবাব, পাকিস্তানের সেই কালরাতের সাক্ষী তিনি। জন্মদিনে সেই গণহত্যার ঘটনাগুলোই মনে পড়ে। দিনটি অন্যদিনের মতোই ঢাকার ৩০০ ফুটে শুটিং করে কাটছে। তিনি হুমায়ূন আহমেদের হাত ধরে খ্যাতি পেয়েছেন। শুরু থেকে দীর্ঘ তিন দশক ধরে সমানতালে অভিনয় করে যাচ্ছেন।
দর্শকদের পছন্দের এই অভিনেতার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, বাইরে বের আপনার অভিনীত নাটকের কোন ডায়ালগগুলো দর্শকদের কাছে শোনেন?
প্রশ্নটা শুনেই মুখে হাসি। হো হো করে হেসে উঠলেন। তিনি খুশি যে ভক্তরা তাঁকে ডায়ালগ ধরে ডাকতে পারেন বা দূর থেকেই ভক্তদের মুখে সংলাপ শুনে তাঁর কাছে মনে হয়, অভিনয়ের এখানেই সার্থকতা। এসবই তাঁর কাছে ভালোবাসে। এ-ই তাঁর ক্যারিয়ারে বড় অর্জন। এবার সেই প্রশ্নের জবাব দিলেন। কিছুটা সময় নিয়ে ফারুক আহমেদ বললেন, ‘গাঞ্জা খাইয়া কুল পাই না, পড়াশোনা করব কোন সময়।’ প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনোভাবেই এই ডায়ালগ তাঁকে শুনতেই হয়। নাটকটির নাম ‘বৃক্ষমানব’।
এই অভিনেতা জানালেন শুধু এই ডায়ালগের ভিডিও ইউটিউবে প্রায় ৫৭ লাখবার দেখা হয়েছে। এ ছাড়া এই সংলাপের বিভিন্ন ভিডিওর ভিউ একসঙ্গে করলে কয়েক কোটি হবে।
তারপর এই অভিনেতা বলে যেতে থাকেন ‘আজ রবিবার’, ‘উড়ে যায় বকপক্ষী’সহ বেশ কিছু নাটকের সংলাপ। এগুলো তাঁর মুখেই শুনি, ‘বংশের একটা ইজ্জত আছে, আমরা সরকার বংশ’, ‘দূর ছাতা, আবার বলে তোয়ব ভাই, অত ভাই ব্রাদারের আমার সময় নাই’, ‘আমি বোকাসোকা মানুষ, আল্লাহপাক আমার মাথায় বুদ্ধিসুদ্ধি দেয় নাই’, ‘ফুলি আজ তোমারে অধিক সৌন্দর্য লাগতেছে’, ‘সত্য কথা দিনে ১৪ বার বলা যায়’, ‘কী জন্য মারল কিছুই বুঝতে পারলাম না’, বলতে বলতে থেমে গেলেন ফারুক আহমেদ। বললেন, এত ডায়ালগ মনে থাকে না। বয়স কী আর কম হলো।
পরক্ষণে আবার বললেন, ‘“আপনাকে দেখলেই বোঝা যায় উচ্চশিক্ষিত, এ জীবন রেখে লাভ কী”, এমন অনেক ডায়ালগ নিয়মিত শুনি।’ তাঁর এসব ডায়ালগের বেশির ভাগেই হুমায়ূন আহমেদের নাটকের। হুমায়ূন আহমেদের কাছে আজীবন তিনি কৃতজ্ঞ।
হুমায়ূন আহমেদের নাটক দিয়ে জনপ্রিয়তা পাওয়া এই অভিনেতাকে অনেকেই শুধু কমেডি অভিনেতা ভাবেন। কিন্তু ফারুক আহমেদ নিজেকে একই বৃত্তে আটকে রাখতে চান না। তিনি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিজেকে ভাঙার চেষ্টা করছেন। কমেডির বাইরে সিরিয়াস অনেক চরিত্রে অভিনয় করছেন। সম্প্রতি ‘এখানে কেউ থাকে না’ নামে বিটিভিতে প্রচারিত একটি নাটকে ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা পেয়েছেন। ১৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্প ‘আদম সুরত’ নামের একটি নাটকে ভিন্নভাবে তাঁর উপস্থিতি প্রশংসনীয় ছিল।
ফারুক আহমেদ বলেন, ‘একজন অভিনেতার কিছু ক্ষুধা আছে। তাঁকে নানাভাবে দেশের নির্মাতারা আবিষ্কার করেন। এভাবে তিনি একজন বৈচিত্র্যময় অভিনয়শিল্পী হয়ে ওঠেন। কিন্তু আমাদের একটি চরিত্র জনপ্রিয়তার পেলে সব নির্মাতা একই চরিত্রে সেই অভিনেতাকে ডাকেন। অভিনয়ের এই ক্ষুধা বিভিন্ন চরিত্রের মধ্য দিয়ে নিবৃত্ত হয়। তবে এখন অনেকে ব্যতিক্রমধর্মী নাটক ও সিনেমাতে ডাকছেন, এটা আমাকে আশাবাদী করে। হয়তো আরও ভালো কাজ করে যেতে পারব।’