ভোট উৎসবে তারকারা

উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা ভবন মিলনায়তনে আজ শুক্রবার সকাল ৯টা ১৫ মিনিট থেকে শুরু হয়ে ভোট গ্রহণ চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। দুপুরে এক ঘণ্টার বিরতি ছিল নামাজ ও খাবারের জন্য। এবার নির্বাচনে ২১টি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫১ জন প্রার্থী। নির্বাচনের আগেই সাংগঠনিক সম্পাদক পদপ্রার্থী লুৎফর রহমান জর্জ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচন
উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচন

অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করছেন খায়রুল আলম সবুজ, বৃন্দাবন দাস ও মাসুম আজিজ। শুক্রবার সকালে জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা ভবন মিলনায়তনের মহড়া কক্ষে গিয়ে তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার খায়রুল আলম সবুজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুরু থেকেই সুশৃঙ্খলভাবে ভোটাররা আসছেন, ভোট দিচ্ছেন। এমন চলতে থাকলে আশা করা যাচ্ছে ৯০ শতাংশের বেশি ভোট পড়বে।’গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন স্থগিত করার জন্য যে আইনি প্রক্রিয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এটা আমরা ফেসবুকে দেখেছি। আনুষ্ঠানিকভাবে আদালতের কোনো কাগজ পাইনি। এখন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এটা নিয়ে অভিযোগের কিছু নেই। আশা করছি শান্তিপূর্ণভাবেই নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।’

ভোট দিচ্ছেন চঞ্চল চৌধুরী

সকাল থেকে নির্বাচন কেন্দ্রের বাইরে তুষার খান, শহীদুজ্জামান সেলিম, আজাদ আবুল কালাম, আহসানুল হক মিনু, তানিয়া আহমেদ, দিলু মজুমদার, আহসান হাবিব নাসিম, শামীম ভিস্তী, রওনক হাসান, সুমনা সোমা, আরমান পারভেজ মুরাদ, স্বাগতা, পাভেল ইসলাম, শামীমা ইসলাম তুষ্টি, প্রাণ রায়, শফিউল আলম বাবু, সুজাত শিমুল, সেলিম মাহবুব, বন্যা মির্জা, শামস সুমন, নিথর মাহবুব, নাদিয়া আহমেদ প্রমুখকে ভোটারদের কাছে ভোট চাইতে দেখা গেছে। আরও দেখা গেছে আসাদুজ্জামান নূর, মামুনুর রশীদ, দিলারা জামান, জাহিদ হাসান, আফসানা মিমি ও তিশাকে। ভবনের ভেতরে অবশ্য ভোট দেওয়া হয়নি এমন ভোটার ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। তিন স্তরে যাচাই–বাছাই করে ভোটাররা সংগীত ও নৃত্যকলা ভবনের মহড়া কক্ষে যান ভোট দিতে। ভোট গ্রহণ কক্ষে যাওয়ার আগে ভোটারদের মুঠোফোন নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচনকে ঘিরে রীতিমতো তারকাদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ।এর আগে গত বুধবার শেখ মো. এহসানুর রহমান, আবদুল্লাহ রানা ও নূর মুহাম্মদ রাজ্য বাদী হয়ে কিছু অভিযোগ এনে অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচন স্থগিতের জন্য দ্বিতীয় সহকারী আদালতে আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন স্থগিতের নির্দেশ দেন আদালত। সিনিয়র সহকারী জজ মোহাম্মাদ শাফি এই আদেশ দেন। সেই সঙ্গে তিন নির্বাচন কমিশনার খায়রুল আলম সবুজ, বৃন্দাবন দাশ ও মাসুম আজিজ এবং অভিনয় শিল্পী সংঘের সর্বশেষ সভাপতি শহীদুল আলম সাচ্চুসহ ৮ জন বিবাদীকে ১৯ জুন থেকে ৭ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচন উপলক্ষে তারকাদের ভিড় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা ভবন মিলনায়তনে

যদিও আদালতের সেই আদেশ অভিনয় শিল্পী সংঘের কাছে পৌঁছায়নি বলে জানা গেছে। এমন কোনো নোটিশ পাননি বলে জানালেন অভিনয় শিল্পী সংঘের সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন কোনো কিছুই জানি না। নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকেও কোনো ঘোষণা পাইনি। কোনো কাগজও পাইনি আদালতের। সংগত কারণে আজ নির্বাচন হচ্ছে, ভোটাররাও উৎসাহ নিয়ে আসছেন।’

ভোট কেন্দ্রের বাইরে কথা হয় শহীদুজ্জামান সেলিম, তুষার খান এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত লুৎফর রহমান জর্জের সঙ্গে। তাঁরাও একই মন্তব্য করেন।অভিযোগকারী শেখ মো. এহসানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কিছু অভিযোগ জানিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে শরণাপন্ন হয়েছি। সমাজসেবা অধিদপ্তরের অনুমোদিত সংঘের যে গঠনতন্ত্র, এখানে তা এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমরা অধিদপ্তরে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি। বিগত কমিটির সঙ্গে আলোচনা করেছি। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি।’

ভোটারদের ঘিরে ধরেন ভোট প্রার্থীরা

গঠনতন্ত্র প্রসঙ্গে এহসানুর রহমান বলেন, ‘তফসিলে বলা হয়েছে, ১৫-এর ৬ ধারা অনুযায়ী নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে। এতে উল্লেখ আছে, একটি সাধারণ সভার মধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন ও নির্বাচনকালীন কমিটি গঠন হবে। অথচ সাধারণ সভা ছাড়াই আগের কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কমিটি গঠন করেছেন। এ ছাড়া তাঁরা সমাজসেবা অধিদপ্তরকে প্রচুর অসত্য তথ্য দিয়েছেন। তাঁরা তহবিলের ব্যাপারে বলেছেন, ৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা আছে। কিন্তু আমাদের মতে, তহবিলে ৫০ লাখ টাকার বেশি থাকার কথা। তাঁরা বলেছেন, অভিনয় শিল্পী সংঘ গঠিত হয়েছে ২০১৮ সালে। কিন্তু এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে ১৯৯৮ সালে। তাঁরা গোপনে অধিদপ্তর থেকে কমিটির মেয়াদ ২০২০ পর্যন্ত বাড়িয়ে নেন। এগুলো যখন আমরা সামনে এনেছি, তাঁরা বলেছেন, অজ্ঞতাবশত হয়েছে। কিন্তু এগুলো সবই অনিয়ম।’