‘ছয় ঘণ্টায় এক মিলিয়ন, সাত ঘণ্টায় দেড় মিলিয়ন।’ ‘মাত্র এক দিনে চার মিলিয়ন ভিউয়ের রেকর্ড।’ ‘ঈদ নাটকের ট্রেন্ডিংয়ের শীর্ষে আমাদের নাটক।’ ঈদের পর থেকে বেশির ভাগ নির্মাতা, প্রযোজক ও কলাকুশলীর ফেসবুকে শোভা পাচ্ছে নাটকের ভিউ নিয়ে এমন একাধিক স্ট্যাটাস। ভিউয়ের এসব রেকর্ডে বোঝা যায়, দর্শক দেশের নাটক আগের চেয়ে বেশি দেখছেন। এতে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান, কলাকুশলীরা আরও বেশি লাভবান হচ্ছেন। কারণ, এখন নাটকের ভিউ হিসাব করেই নির্ধারিত হয় চাহিদা। তবে ভিউ বিবেচনায় এগিয়ে থাকা নাটকগুলো কতটা প্রশংসা পাচ্ছে? কোন নাটকগুলো দর্শকেরা প্রশংসায় এগিয়ে রাখছেন?
অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘উড়ো প্রেম এখন ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে ১ নম্বরে রয়েছে।’ অভিনেত্রী সাবিলা নূর লিখেছেন, ‘ডিগবাজি এক দিনেই এক মিলিয়ন।’ অভিনেত্রী সাফা কবির ফেসবুক স্ট্যাটাসে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘আমি লিখে আমার খুশিটা প্রকাশ করতে পারছি না। শুধু এটাই বলতে চাই, ধন্যবাদ লাভলি দর্শক।’ সাফা অভিনীত ব্যাড বাজ নাটকটি চার মিলিয়ন ভিউ অতিক্রম করায় খুশি এই অভিনেত্রী। নির্মাতা কাজল আরেফিন ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লিখেছেন,‘ব্যাচেলর রামাদান এক দিনে পাঁচ মিলিয়ন ভিউ।’ এটি ঈদের নাটকের ভিউয়ে রেকর্ড।
বেশ কয় বছর ধরে কমেডি আর রোমান্টিক নাটকগুলোই বেশি নির্মিত হয়েছে। ঈদে সব সময় রোমান্টিক ও কমেডি নাটকগুলোই দর্শক পছন্দ করেন। যে কারণে এসব নাটকের ভিউ পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে। ভিউ বেশি, এমন নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘ব্যাড বাজ’, ‘হাঙর’, ‘চম্পা হাউস’, ‘লাভ ভার্সেস ক্রাশ-২’, ‘লাস্ট লাভ’, ‘লাভ ট্রিপ’ ইত্যাদি। একসময় ভিউয়ের ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসেছিল পারিবারিক আবহের গল্পের নাটক। সেই জায়গায় এবারের ঈদের নাটক গত বছরের চেয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। ঈদুল ফিতরের নাটকগুলোর মধ্যে গল্পের ব্যতিক্রম ছিল চোখে পড়ার মতো। এসব নাটকে তারকাদের ভিন্ন লুক নজর কেড়েছে দর্শকদের। বাংলা নাটক নিয়ে আটটির বেশি ফেসবুক গ্রুপ রয়েছে। এসব গ্রুপে এখন আলোচনার একমাত্র বিষয় দাঁড়িয়েছে ভিউ নাটক বনাম ভালো গল্প ও চরিত্রভিত্তিক নাটক।
নাটকের একটি গ্রুপে মরিয়ম মোহনা নামের এক ভক্ত লিখেছেন, ‘আমার জীবনে দেখা সেরা নাটকগুলোর মধ্যে একটি শেষ দেখা। এটা সত্যি সেরা একটা নাটক। মরিয়ম চরিত্রটির সঙ্গে কাকতালীয়ভাবে আমার বাস্তব জীবনের প্রভাবের মিল খুঁজে পাই।’ মেহজাবীন ও আফরান নিশো অভিনীত এই নাটক আট দিনেও এক মিলিয়ন ভিউ অতিক্রম করতে পারেনি। অন্যদিকে ভিউয়ের দৌড়ে এগিয়ে থাকা ফিমেল-২ নাটক নিয়ে শরীফ মাহমুদ নামের একজন সমালোচনা করে লিখেছেন, ‘অশ্লীল সংলাপ, গালিগালাজে ভরপুর। গল্পে নেই কোনো নতুনত্ব।’ তবে কেউ কেউ উচ্চ রেটিং দিয়েও ফিমেল–২–এর প্রশংসা করেছেন।
কোটি ভিউয়ের একাধিক নাটক রয়েছে তৌসিফ মাহবুবের ঝুলিতে। তাঁর অভিনীত প্রায় ১০০ নাটক মিলিয়ন ভিউয়ের দখলে। এবারের ঈদের নাটকও মিলিয়ন ভিউ অতিক্রম করেছে। ঈদের বেশি ও স্বল্প ভিউ হওয়া নাটকগুলো নিয়ে এই অভিনেতা বলেন, ‘এবারের ঈদের নাটকে মিলিয়ন ভিউ তো আছেই। কিন্তু আমার কাজগুলোর মধ্যে শুরুটাই সুন্দর, চোখ, সাইলেন্স, রূপকথা নয়, হাফ চান্স নাটকগুলো সব মিলিয়েও এক মিলিয়ন ভিউ হবে কি না, জানি না। কিন্তু আমি সবচেয়ে বেশি এই নাটকগুলো থেকে সাড়া পাচ্ছি। আর অন্য যে নাটকগুলোর ভিউ হচ্ছে, সেগুলো এন্টারটেইনমেন্ট প্রধান নাটক। এখানে সুন্দর গল্প, চরিত্র গুরুত্বপূর্ণ নয়, দর্শক কতটা হাসতে পারবে, সেটাই চিত্রনাট্যে গুরুত্ব পায়। এসব নাটকের ভিউ বেশি হলেও অভিনয়ের জায়গাটায় আফসোস থেকেই যায়। যেমন ব্যাচেলর পয়েন্ট–এর মতো কাজগুলোই আগে করতাম। ভিউ কম, এমন গল্পভিত্তিক নাটকগুলো প্রশংসা এনে দিচ্ছে।’
ছয় দিনে দুই মিলিয়ন ভিউ অতিক্রম করেছে, এমন একটি নাটকের অভিনয়শিল্পী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এখন লগ্নিকারীদের কাছে ভালো–মন্দ বিচার হচ্ছে ভিউ দিয়ে। যে কারণে কম ও বেশি ভিউয়ের নাটকের গল্পে ব্যালান্স করেই কাজ করতে হয়।’
ভিউয়ে রেকর্ড গড়ছে, এর মানে দাঁড়ায়, বেশি মানুষ সেই নাটক দেখেছেন। এটাকে কি প্রশংসিত নাটক বলা যায়? ভিউ ও প্রশংসার মধ্যে পার্থক্য কেমন, এমন প্রশ্নে গুণী অভিনেতা মামুনুর রশীদ বলেন, ‘বেশি ভিউ আর প্রশংসা পাওয়া একেবারেই আলাদা। অনেক বাজে জিনিসেরও ভিউ হয়। কিন্তু কোনো কিছুর একদম কম ভিউ হলেও সেটা প্রশংসনীয় হতে পারে। আমাদের এই সো কলড ভিউ সিস্টেমটা ইন্ডাস্ট্রিকে খুব ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আমাদের শিল্পের জন্য অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে। শিল্পমান, প্রশংসা ভিউ দিয়ে নির্ধারণ করা যায় না।’