‘ওই যে আকাশ নীল হলো আজ/ সে শুধু তোমার প্রেমে/ ওই যে বাতাস বাঁশি হলো আজ,/ সে শুধু আমার প্রেমে...’, ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাতটায় ফেরদৌসী রহমানের এ গান দিয়েই শুরু হয় যাত্রা। সে সময় এটি পাকিস্তান টেলিভিশন নামে পরিচিত ছিল। ঢাকায় ডিআইটি ভবনে (বর্তমান রাজউক ভবন) যাত্রা শুরু করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। মুক্তিযুদ্ধের পর এর নাম পরিবর্তন করে বর্তমান নাম রাখা হয়। ১৯৮০ থেকে এটি রঙিন সম্প্রচার শুরু করে। আজ ৫৬ বছরে পা রেখেছে রাষ্ট্রীয় এই গণমাধ্যম। এ উপলক্ষে আজ বুধবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে চ্যানেল আইয়ের চেতনা চত্বরে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
প্রতিবছরই চ্যানেল আই তাদের দায়বদ্ধতা থেকে বিটিভির জন্মদিনে নিজস্ব প্রাঙ্গণে আয়োজন করে আসছে এমন অনুষ্ঠানের। এর ফলে দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সহকর্মীকে কাছে পেয়ে অনেকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। কুয়াশাচ্ছন্ন এ আয়োজনকে আরও অর্থবহ করে তুলতে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, সাদী মহম্মদ ও সুরের ধারার শিল্পীরা পরিবেশন করেছেন রবীন্দ্রনাথের অনেক জনপ্রিয় কিছু গান। বিটিভির শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে স্মৃতিচারণা করেছেন অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা।
সকালে অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ। তিনি বলেন, ‘শিক্ষা, তথ্য, সংবাদচর্চার ৫৬ বছর। বিটিভিতে সেই সময়ে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁরাই এখন সংস্কৃতি অঙ্গনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মোস্তফা মনোয়ার, বিটিভির মহাপরিচালক এস এম হারুন-অর-রশীদ, ইমপ্রেস গ্রুপের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মুকিত মজুমদার, জহির উদ্দিন মাহমুদসহ মিডিয়ার বিভিন্ন অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা। বাংলাদেশ টেলিভিশনের বর্ষপূর্তিতে চ্যানেল আইয়ের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান অতিথিরা। বিশিষ্টজনদের মতে, বাংলাদেশের যে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো আছে, তার বিকাশে বাংলাদেশ টেলিভিশনের বড় ভূমিকা রয়েছে। রুচিশীল অনুষ্ঠান তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে বাংলাদেশ টেলিভিশন। বাংলাদেশ টেলিভিশন দেশের প্রতিটি মানুষের প্রিয় চ্যানেল। এ চ্যানেল বাংলাদেশের মানুষের মনের কথা বলে। বিনোদনের খোরাক জোগায়। মুক্তিযুদ্ধ, দেশ, মাটি আর মানুষের কথা বলে।
আজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিটিভি আয়োজন করেছে বিশেষ কিছু অনুষ্ঠানের। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘পপ টিউন’। ফোয়াদ নাসের বাবুর সংগীত পরিচালনায় এ অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করবেন ফেরদৌস ওয়াহিদ, ফকির আলমগীর, কাজী হাবলু, নাসিম আলী খান, মেহরিন, রমা, লুমিন, সুমন, সুজন আরিফ, সাব্বির ও রুমন। প্রয়াত সংগীতশিল্পী আজম খান, পিলু মমতাজ, লাকী আখান্দ্, হ্যাপী আখান্দ্ ও আইয়ুব বাচ্চুর গানগুলো গাইবেন অংশগ্রহণকারী সংগীতশিল্পীরা। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় এটি গ্রন্থনা ও পরিকল্পনা করেছেন সুমন সাহা। অনুষ্ঠানটি বিটিভির রাত আটটার বাংলা সংবাদের পর দেখানো হবে।
১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর তৎকালীন ডিআইটি ভবন (বর্তমানে রাজউক ভবন) থেকে পাকিস্তান টেলিভিশন করপোরেশন নামে সম্প্রচার শুরু করে বিটিভি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর এর নাম বদলে হয় বাংলাদেশ টেলিভিশন। ১৯৭৩ সালে করপোরেশন থেকে অধিদপ্তরে পরিবর্তিত হয়। ১৯৭৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ডিআইটি ভবন থেকে রামপুরায় নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরিত হয় বিটিভি।
১৯৬৪ সালে যাত্রার দিন থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত বিটিভির পর্দা ছিল ধ্রুপদি সাদাকালো ধারায়। ওই বছর ২৫ ডিসেম্বর থেকে বিটিভিতে রঙিন অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু হওয়ার মধ্য দিয়ে নতুন যুগের সূচনা হয়। ২০০৩ সালে এসে ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামে পৃথক স্টেশনসহ দেশজুড়ে ১৪টি রিলে স্টেশনের মাধ্যমে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের ৯৩ শতাংশ এলাকায় পৌঁছে যায় বিটিভির অনুষ্ঠানমালা। শুরু থেকেই বিটিভি টেরেস্ট্রিয়াল বা ভূকেন্দ্রিক সম্প্রচার করে। ফলে, সাধারণ অ্যানটেনার মাধ্যমে যেকোনো স্থান থেকে বিটিভির সম্প্রচার উপভোগ করা সম্ভব হয়। ২০০৪ সালের ১১ এপ্রিল থেকে স্যাটেলাইট সম্প্রচারে যাত্রা শুরু করে বিটিভি ওয়ার্ল্ড। পাশাপাশি টেরেস্ট্রিয়াল সম্প্রচার কেবল নেটওয়ার্কেও যুক্ত হয়।