'বহুব্রীহি'র পর আজ ফিরছে 'এইসব দিনরাত্রি'

এইসব দিনরাত্রি নাটকের একটি দৃশ্য। ছবি: বিটিভির সৌজন্যে
এইসব দিনরাত্রি নাটকের একটি দৃশ্য। ছবি: বিটিভির সৌজন্যে

যেন পুরোনো সিন্দুক থেকে মূল্যবান মণি-মুক্তা বের করে দিচ্ছেন উদার কোনো দানবীর। জনগণ মিলেমিশে সবাই সেসব লুফে নেবে, উপভোগ করবে। রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল বাংলাদেশ টেলিভিশনের আর্কাইভকে মূল্যবান রত্নভান্ডার বললে ভুল হবে? কালজয়ী সব ধারাবাহিক, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ও গানগুলো কি রত্নের চেয়ে কম দামি?

করোনাভাইরাস মানুষের জীবনবাস্তবতা বদলে দিয়েছে। তাদের একঘেয়ে দিনরাতের কথা বিবেচনা করে পুরোনো জনপ্রিয় পারিবারিক ধারাবাহিকগুলো পুনঃপ্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে বিটিভি কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের লেখা জনপ্রিয় দুই ধারাবাহিক নাটক কোথাও কেউ নেই ও বহুব্রীহি নতুন করে সাড়া ফেলেছে। বরকত উল্লাহ ও নওয়াজিশ আলি খান প্রযোজিত নাটক দুটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা হচ্ছে বিস্তর। প্রচারের তালিকায় আজ যুক্ত হচ্ছে এইসব দিনরাত্রি। বাংলাদেশে নির্মিত ভালো নাটক নিয়ে কথা বলতে গেলে অবধারিতভাবে এই নাটকের নাম নিতেই হয়। ঘরে আটকে থাকা মানুষের জন্য এর চেয়ে ভালো উপহার আর কী হতে পারে!

এইসব দিনরাত্রি নাটকের একটি দৃশ্য। ছবি: বিটিভির সৌজন্যে

বিটিভির ঢাকা কেন্দ্রের মহাব্যবস্থাপক নাসির মাহমুদ আজ রাত থেকে ধারাবাহিকটি প্রচারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, 'বেশ কিছু উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা এ নাটক পুনঃপ্রচারের উদ্যোগ নিয়েছি। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হচ্ছে এখনকার প্রজন্মের সামনে আমরা ওই সময়টাকে তুলে ধরতে চেয়েছি। তখনকার ঢাকা, ল্যান্ডফোনের ব্যবহার, পোশাক-পরিচ্ছদসহ নানা বিষয় পুরোনো ওই নাটকগুলোয় ধরা আছে। এ ছাড়া নাটকগুলোর গল্পে রয়েছে বৈচিত্র্য ও গভীরতা। মানুষ দুশ্চিন্তা থেকে যাতে একটু মুক্তি পায়, তাদের সময়টা যেন ভালো কাটে, এটাই আমাদের চাওয়া।'

নাসির মাহমুদ জানান, বিটিভি আরও আগে এসব নাটক পুনঃপ্রচারের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার সঙ্গে কথাবার্তা, চিঠি চালাচালিও শুরু করেছিল। স্পনসর পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু সময়টা যখন থমকে গেল, তখন আর চিন্তা না করে, বাণিজ্যের কথা না ভেবে দর্শকদের স্বার্থে নিজেদের উদ্যোগেই নাটকগুলো প্রচার শুরু করে চ্যানেলটি।তিনি জানান, আজ থেকে প্রতিদিন বিটিভির রাতের খবরের পর নাটকটি প্রচার শুরু হবে। প্রতিদিন একটি করে পর্ব দেখানো হবে।

এইসব দিনরাত্রি রাজধানী ঢাকায় বাস করা একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের জীবনযাপন ঘিরে। নাটকের গল্পটা শেষ হয় 'টুনি' নামের লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত এক ছোট্ট মেয়ের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। অনেকেই অবশ্য নাটকের লেখক হুমায়ূন আহমেদকে অনুরোধ করেছিলেন, মেয়েটিকে যেন বাঁচিয়ে রাখা হয়।

১৯৮৫ সালে বিটিভিতে প্রথম প্রচারিত হয় এইসব দিনরাত্রি। নাটকটি পরিচালনা করেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। অভিনয় করেছেন বুলবুল আহমেদ, খালেদ খান, নায়ার সুলতানা লোপা, আবুল খায়ের, শিল্পী সরকার অপু, ইনামুল হক, ডলি জহুর, লুৎফুন নাহার লতা, আসাদুজ্জামান নূর, দিলারা জামান ও মাসুদ আলী খান। তাঁদের মধ্যে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন আবুল খায়ের, বুলবুল আহমেদ, খালেদ খান। অকালে চলে যান টুনি চরিত্রে অভিনয় করা নায়ার সুলতানা লোপা।

এইসব দিনরাত্রি নাটকের তিন শিল্পী। ছবি: সংগৃহীত

কথা হলো নাটকে 'রফিক' চরিত্রে অভিনয় করা আসাদুজ্জামান নূরের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'আমার প্রথম ধারাবাহিক নাটক ছিল সেটি। এ ছাড়া তার আগে আমার অভিনীত বেশির ভাগ নাটকই ছিল প্রেমের গল্পের, কেমন যেন বৈচিত্র্যহীন। একই রকমের সংলাপ। আমি খুব একটা স্বস্তি পেতাম না। সেদিক থেকে এইসব দিনরাত্রি নাটকে আমার চরিত্রটি ছিল একেবারে অন্য রকম।'

প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্মৃতিচারণা করে ডলি জহুর বলেছিলেন, 'আমার ছেলের জন্মের কথা মনে হলেই নাটকটির কথা মনে হয়। কেননা এ নাটকের শুটিং করার সময় আমি অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম। ছয় মাস সেই অবস্থাতেই নিয়মিত শুটিং করেছি।' তিনি বলেন, ধারাবাহিকটি যখন প্রচারিত হচ্ছিল, তখন স্বামীকে নিয়ে কলকাতায় গিয়েছিলাম। কলকাতা বিমানবন্দরে নামার পরই কয়েকজন আমাকে নিয়ে আলোচনা করছিলেন। একজন এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে বসলেন, 'দিদি, আপনি এইসব দিনরাত্রির নিলু ভাবি না?'

এভাবেই ল্যান্ডফোনের সেই দিনে বাংলাদেশের নাটকগুলো দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সাড়া ফেলত বাইরেও। মানুষের মনে গেঁথে থাকত দিনের পর দিন। এই নাটকগুলোকে মণি-মুক্তা বলা নিশ্চয়ই বাড়াবাড়ি নয়।