গণসংগীতের অগ্রপথিক ফকির আলমগীর। গত বছরের জুলাই মাসে তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর ২ হাজার ৩২টা ফোনকল পেয়েছিলেন নাট্যাভিনেতা সাজু খাদেম। আজ বুধবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২০ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রিয় শিল্পীকে স্মরণ করে এসব কথা জানান তিনি।
জাতীয় চলচ্চিত্র অনুষ্ঠান মাতাতে মঞ্চে আসেন সাজু খাদেম। মজার মজার কৌতুক ও প্রশ্নে উপস্থিত অতিথি ও দর্শকদের বিনোদন দিচ্ছিলেন। এর মধ্যেই হঠাৎ তাঁর সুর কিছুটা নরম হয়ে আসে। তিনি স্মরণ করেন প্রয়াত গায়ক ফকির আলমগীরকে। সাজু খাদেম বলেন, ‘আজকের এই অনুষ্ঠানে একজনের কথা মনে পড়ছে। আমাদের প্রিয় সংগীতশিল্পী। তিনি এখন আমাদের মধ্যে নেই। প্রিয় ফকির আলমগীর। তাঁর মৃত্যুর পর ২ হাজার ৩২টা ফোনকল আমি পেয়েছিলাম। সবাই দুঃখ প্রকাশ করে আমার কাছেই জানতে চেয়েছিলেন আহা...।’
২০২১ সালের ২৩ জুলাই ফকির আলমগীর মারা যান। এই গায়কের সঙ্গে দীর্ঘদিনের গভীর সম্পর্ক ছিল সাজু খাদেমের। ফকির আলমগীর সাজু খাদেমকে স্নেহ করতেন, সেটা একাধিকবার তাঁরা বলেছেন। তাঁদের মধ্য এই সম্পর্কের আরও একটি কারণ ছিল, সাজু খাদেম ফকির আলমগীরের মতো করে কথা বলতে পারতেন। মেরিল–প্রথম আলোসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফকির আলমগীরকে সম্মান করে কখনো তাঁর সঙ্গে মজার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতেন, কখনো দর্শকদের বিনোদন দিতেন, ফকির আলমগীরের ভাষায় গান গাইতেন। এসব কারণেই ফকির আলমগীরের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছিল সাজু খাদেমের। তাঁর প্রিয় ব্যক্তিকে স্মরণ করার সুযোগ হাতছাড়া করেননি সাজু।
প্রিয় সেই গায়ককে হারানোর পরের সময়টা কষ্টের ছিল সাজু খাদেমের। ব্যথিত কণ্ঠে ছোট পর্দার এই কমেডি অভিনেতা দর্শকদের উদ্দেশে জানান, তাঁকে (ফকির আলমগীর) ছোট করে নয়, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, তাঁর স্মৃতিকে উৎসর্গ করে একটি পরিবেশনা করবেন। এ জন্য তিনি উপস্থিত অতিথি ও দর্শকদের অনুমতি চান। এ সময় সাজু খাদেম ফকির আলমগীরকে অনুকরণ করে বলেন, ‘আচ্ছা, যেটা বলতে ছিলাম তোমাদেরকে। এখন কিন্তু আমি এই খানে দাঁড়ায়ে, এই যে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২০ প্রদান অনুষ্ঠানে আমাকে স্মরণ করছ, সেই জন্য তোমাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। সেই জন্য একটা লাইন টান দিয়া আমার প্রিয় শিল্পীকে ডাক দিব।’ এই সময় সাজু খাদেম ফকির আলমগীরের জনপ্রিয় ‘সান্তাহার জংশন’ গানটির এক লাইন গাইতে থাকেন।
অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে ফকির আলমগীরের কণ্ঠে চঞ্চল চৌধুরীকে ডাকেন সাজু খাদেম। সাজু বলতে থাকেন, ‘এই চঞ্চল, এই পাগলা, তোদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। একটা ছেলেকে এত স্নেহ করে আমি ডাকতেছি। সে কথাই শোনে না। সে (চঞ্চল চৌধুরী) আমার স্নেহের পাগলা ছেলে, ভালো গান গাইতে পারে।’ এই সময় চঞ্চল চৌধুরী বেদের মেয়ে জোসনা গানটি শোনান। ফকির আলমগীরের প্রতি এমন স্মরণে দর্শক নীরব ছিলেন। কয়েক বছর ধরে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশ নিতেন ফকির আলমগীর।